শ্রদ্ধেয় সহব্লগার জনাব খায়রুল আহসান ভাইয়ের হজ পালনের লেখাগুলো পড়ে একটা বিষয় নিয়ে জানার ইচ্ছে হতে এ লেখার সূচনা। মদিনায় মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ কোনো ওয়াক্ত মিস না করে পড়লে সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ, শাস্তি থেকে মুক্ত এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত, এ সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানতে Islamqa.info সার্চ করে যা পেলাম তার বাংলা অনুবাদ নিচে দিলাম। এ প্রসঙ্গে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। মদিনায় মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার বিশেষ সওয়াব সহী হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, এক মক্কার মসজিদুল হারাম বাদে বিশ্বের অন্য যে কোনো মসজিদে পড়ার চেয়ে বেশি। এবং আল্লাহর রাসূল (স) যে তিনটি মসজিদ দেখতে যেতে ভ্রমণ অনুমোদন করেছেন এই মসজিদ তার অন্যতম। অন্য দুটি, মক্কার মাসজিদুল হারাম ও জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসা। তবে মসজিদে নববীতে নামাজ পড়া বা রসূলুল্লাহ (স) কবর জিয়ারত করা, হজ বা উমরার শর্ত নয়; কেউ মক্কায় হজ বা উমরার আনুষঙ্গিকতা সম্পূর্ণ কবলেই হজ বা উমরা হয়ে যাবে, মদিনা না গেলেও।
" প্রশ্ন: ৩৪৭৫২
আমি শুনেছি যে, যে কেউ মদিনায় নবীর মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, সে মুনাফেকি থেকে মুক্ত। এ হাদিস কি সহীহ?
উত্তর
আল্লাহ্র প্রশংসা এবং আল্লাহ্র রাসূলের প্রতি শান্তি ও দোআ বর্ষিত হোক।
এই হাদিসটি ইমাম আহমদ (১২১৭৩) আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কোনো নামাজ বাদ না দিয়ে, সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ, শাস্তি থেকে মুক্ত এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত।”
কিন্তু এ হাদিসটি দুর্বল (দাঈফ)।
এটি শাইখ আলবানী তাঁর আল-সিলসিলাহ আল-দাঈফাহ (৩৬৪) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন: এটি দুর্বল। তিনি দাঈফ আত-তারগীব (৭৫৫)-এও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন এটি “মুনকার” (দুর্বল হাদিসের একটি ধরন)।
শাইখ আলবানী তাঁর হুজ্জাতুন্নবী (পৃষ্ঠা ১৮৫)-এ বলেছেন: মদীনায় গিয়ে এভাবে মানুষকে বলা যে, সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থান করতে হবে যেন চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায় এবং এভাবে মুনাফেকি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়—এটি একটি বিদআত।
শাইখ ইবনে বাজ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
মদীনার যিয়ারতে গিয়ে আট দিন অবস্থান করা উচিত যাতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায়—এ প্রচলিত ধারণাটি ভুল। যদিও কিছু হাদিসে এসেছে: “যে সেখানে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত করে দেবেন”—কিন্তু এ হাদিসটি আলেমদের মতে দুর্বল এবং এর উপর নির্ভর করা বৈধ নয়। নবীর মসজিদে যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কেউ যদি এক-দুই ঘণ্টা, এক-দুই দিন বা এর বেশি সময় অবস্থান করেন—তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
(ফাতাওয়া ইবনে বাজ, ১৭/৪০৬)
এই দুর্বল হাদিসের বদলে আমরা সহীহ বা হাসান হাদিসের দিকে নজর দেব। আল-তিরমিজি (২৪১)-তে একটি হাসান হাদিস এসেছে, যেখানে নামাজে তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) জন্য জামাতে উপস্থিত থাকার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়বে এবং সবসময় প্রথম তাকবিরে উলায় উপস্থিত থাকবে, সে দুই জিনিস থেকে নিরাপদ থাকবে: জাহান্নাম থেকে এবং মুনাফেকি থেকে।”
এ হাদিসকে শাইখ আলবানী সহীহ আত-তিরমিজি (হাদিস নং ২০০)-তে হাসান হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।
এ হাদিসের ফজিলত সাধারণ এবং এটি বিশ্বের যে কোনো স্থানে জামাতে নামাজের জন্য প্রযোজ্য। এটি শুধু মসজিদুল হারাম [মক্কা] বা মসজিদে নববী [মদীনা]-এর জন্য সীমাবদ্ধ নয়।
অতএব, যে কেউ নিয়মিত চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ আদায় করবে এবং প্রথম তাকবিরে উলার জন্য উপস্থিত থাকবে, সে জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে নিরাপদ থাকবে—হোক তা মদীনায়, মক্কায় বা অন্য কোনো স্থানের মসজিদে।" (সূত্র:Islamqa.info)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




