somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধেয় সহব্লগার জনাব খায়রুল আহসান ভাইয়ের হজ পালনের লেখাগুলো পড়ে একটা বিষয় নিয়ে জানার ইচ্ছে হতে এ লেখার সূচনা। মদিনায় মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ কোনো ওয়াক্ত মিস না করে পড়লে সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ, শাস্তি থেকে মুক্ত এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত, এ সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানতে Islamqa.info সার্চ করে যা পেলাম তার বাংলা অনুবাদ নিচে দিলাম। এ প্রসঙ্গে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। মদিনায় মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার বিশেষ সওয়াব সহী হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, এক মক্কার মসজিদুল হারাম বাদে বিশ্বের অন্য যে কোনো মসজিদে পড়ার চেয়ে বেশি। এবং আল্লাহর রাসূল (স) যে তিনটি মসজিদ দেখতে যেতে ভ্রমণ অনুমোদন করেছেন এই মসজিদ তার অন্যতম। অন্য দুটি, মক্কার মাসজিদুল হারাম ও জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসা। তবে মসজিদে নববীতে নামাজ পড়া বা রসূলুল্লাহ (স) কবর জিয়ারত করা, হজ বা উমরার শর্ত নয়; কেউ মক্কায় হজ বা উমরার আনুষঙ্গিকতা সম্পূর্ণ কবলেই হজ বা উমরা হয়ে যাবে, মদিনা না গেলেও।

" প্রশ্ন: ৩৪৭৫২
আমি শুনেছি যে, যে কেউ মদিনায় নবীর মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, সে মুনাফেকি থেকে মুক্ত। এ হাদিস কি সহীহ?

উত্তর
আল্লাহ্‌র প্রশংসা এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের প্রতি শান্তি ও দোআ বর্ষিত হোক।

এই হাদিসটি ইমাম আহমদ (১২১৭৩) আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কোনো নামাজ বাদ না দিয়ে, সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ, শাস্তি থেকে মুক্ত এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত।”
কিন্তু এ হাদিসটি দুর্বল (দাঈফ)।

এটি শাইখ আলবানী তাঁর আল-সিলসিলাহ আল-দাঈফাহ (৩৬৪) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন: এটি দুর্বল। তিনি দাঈফ আত-তারগীব (৭৫৫)-এও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন এটি “মুনকার” (দুর্বল হাদিসের একটি ধরন)।

শাইখ আলবানী তাঁর হুজ্জাতুন্নবী (পৃষ্ঠা ১৮৫)-এ বলেছেন: মদীনায় গিয়ে এভাবে মানুষকে বলা যে, সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থান করতে হবে যেন চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায় এবং এভাবে মুনাফেকি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়—এটি একটি বিদআত।

শাইখ ইবনে বাজ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
মদীনার যিয়ারতে গিয়ে আট দিন অবস্থান করা উচিত যাতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায়—এ প্রচলিত ধারণাটি ভুল। যদিও কিছু হাদিসে এসেছে: “যে সেখানে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ এবং মুনাফেকি থেকে মুক্ত করে দেবেন”—কিন্তু এ হাদিসটি আলেমদের মতে দুর্বল এবং এর উপর নির্ভর করা বৈধ নয়। নবীর মসজিদে যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কেউ যদি এক-দুই ঘণ্টা, এক-দুই দিন বা এর বেশি সময় অবস্থান করেন—তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

(ফাতাওয়া ইবনে বাজ, ১৭/৪০৬)

এই দুর্বল হাদিসের বদলে আমরা সহীহ বা হাসান হাদিসের দিকে নজর দেব। আল-তিরমিজি (২৪১)-তে একটি হাসান হাদিস এসেছে, যেখানে নামাজে তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) জন্য জামাতে উপস্থিত থাকার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়বে এবং সবসময় প্রথম তাকবিরে উলায় উপস্থিত থাকবে, সে দুই জিনিস থেকে নিরাপদ থাকবে: জাহান্নাম থেকে এবং মুনাফেকি থেকে।”
এ হাদিসকে শাইখ আলবানী সহীহ আত-তিরমিজি (হাদিস নং ২০০)-তে হাসান হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।

এ হাদিসের ফজিলত সাধারণ এবং এটি বিশ্বের যে কোনো স্থানে জামাতে নামাজের জন্য প্রযোজ্য। এটি শুধু মসজিদুল হারাম [মক্কা] বা মসজিদে নববী [মদীনা]-এর জন্য সীমাবদ্ধ নয়।

অতএব, যে কেউ নিয়মিত চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ আদায় করবে এবং প্রথম তাকবিরে উলার জন্য উপস্থিত থাকবে, সে জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে নিরাপদ থাকবে—হোক তা মদীনায়, মক্কায় বা অন্য কোনো স্থানের মসজিদে।" (সূত্র:Islamqa.info)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×