রাজধানীতে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে দিনমজুর মানুষের ভিড়। গ্রাম, মফস্বলে নেই কোন কাজ। দলে দলে ঢাকামুখী হচ্ছে ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষ। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী, সায়দাবাদ আর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দাঁড়ালে চোখে পড়ে ঢাকায় আসা মানুষের সারি সারি দীর্ঘ লাইন। রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড আর ট্রাফিক সিগন্যালে চোখে পড়ে ভিক্ষুকের অসহনীয় আচরন। সকাল ৮ টা। উত্তরা অজমপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর প্রান্তের ফুটপাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ মানুষ। তাদের কারও সামনে কোদাল, সাবল আর ঝুড়ি। কারও সঙ্গে বড় ব্যাগ এবং কাজের সরঞ্জামাদি। নারী পুরুষ সবাই অপেক্ষায় আছেন কাজের জন্য। বিস্তৃর্ন উত্তরা আবাসিক এলাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। আবুল মিয়া এবং তার স্ত্রী রিনা বেগম মাটি কাটার কাজ করেন। ইউসুফ আলী রং মিস্ত্রী। এক সারিতে সাত আটজনের একটা টিম দেখা গেল তাদের তিনজন হেডমিস্ত্রী আর সঙ্গীরা করেন জোগালীর কাজ। রাজমিস্ত্রী থেকে শুরু করে ফুলের বাগান ও গাছ পরিস্কারের জন্য মানুষ পাওয়া যায় এখানে। দীর্ঘ ২ ঘন্টা বসে রহিম মিয় বলেন, তিনি প্রায় দীর্ঘ ১২ বাছর ধরে ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর সাথে জোগালির কাজ করেন কিন্তু । মন খারাপ সময় কখনও হয়নি।কাজ মেলে না অথচ যেদিকে তাকায় মানুষ আর মানুষ। তিনি জানান, ১২ বছর আগে এখানে বড়জোর ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক বসত। আগের টাইম সকাল ৮টার মধ্যেই সাবার কাজ মিলে যেত। তখন ৬০-৮০ টাকা রোজ ছিল তাদের। তা দিয়েই সংসার চলে যেত সুন্দর ভাবে। আর এখন সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক হাজার শ্রমিক ভিড় করে এখানে। তাদের বেশির ভাগেরই কাজ জোটে না। দিনের পর দিন কাজ জোটে না অথচ এমন শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। আসাদ মিয়া জানান গত তিন দিন কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। ঘরে পাঁচ ছেলে মেয়ে আর জ্বরে পড়ে আছেন স্ত্রী। দিন মজুর আসাদ মিয়ার সংসার চলছে এখন ধার দেনায় । ওভার ব্রিজের নিচ এবং পুরো ফুটপাত জুড়ে শ্রমিকের এমনি ভিড় যে, পথচারীদেও হাটাচলা করাই দায় হয়ে পড়েছে। সখিনা বেগম বলেন দিন দিন এখানে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাদের মধ্যে নারীশ্রমিক ও কম নয়। তিনি আরও বলেন পুরুসদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ পেতে অনেক কষ্ট হয় তাদের। আবার সমান কাজ করার পরও সমান পারিশ্রমিক মেলেনা।সখিনা বলেন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাটিকাটা কাজে একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে পায় ১৭০ থেকে ২০০ টাকা, সেখানে তারা পায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।এখানে দুই প্রকার শ্রমিক কাজ করে। একদল কাজ করে একা একা, আবার আরেকদল কাজ করে কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে। যারা কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ করেন তাদের সারা বছরই কাজ থাকে বলে জানান তিনি। তবে এরজন্য কন্ট্রাক্টরের হাতে পারিশ্রমিকের একটা বিশাল অংশ তুলে দিতে হয়। তবে যে হারে শ্রমিক বাড়ছে তাতে কন্ট্রাক্টার খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। দীর্ঘ ৫ঘন্টা অপেক্ষা করার পর কাজ না পেয়ে বড় বৃদ্ধা বাড়ি ফিরলেন আনসার আলী। বুধবার কাজ পেয়েছিলেন তিনি। বৃহঃপতিবার এক বাড়িতে জানালার গ্লাস পরিস্কার করার কাজ পেয়েছিলেন তিনি সেখানে ৩০০ টাকা পান। দক্ষিন এলাকায় স্ত্রী আর তিন ছেলে মেয়ে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। আনসার আলী বলেন মাঝে মধ্যে এমন হয় সকাল থেকে অপেক্ষা করে কাজের সন্ধান পাওয়া যায়না। বরিশালের নিঃসম্বল এক মানুষ জানান, আগের কার সময় ১০০ অথবা ১৫০ টাকায় ৫ জনের সংসার চলে যেত। আর এখন মোটা চালের কেজি ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকা, প্রতিদিন আলু ভর্তা আর শুকনা মরিচ দিয়ে ভাত খেতে হয়। মাঝে মধ্যে শুটকি মাছ মাংশ কি জিনিস আমরা চোখে দেখিনা। রাজধানিতে দিনমজুর মানুসের সাথে সাথে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। আজমপুর বাসস্ট্রান্ডে আগে ভিক্ষুকের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন তার আবার প্রতিবন্ধি। যাত্রীরা বাসস্ট্রান্ডে দাড়ালে এসে হাত পাতত। এখন সেখানে ভিক্ষুকের সংখ্যা ৭-৮ জন, তাদের মধ্যে ২জন বৃদ্ধা মহিলা। আজমপুর রাজউক শপিং কমপ্লেক্সের কাছে যেখানে রিকশা দাড়ায় সেখানে আগে ছিল মাত্র কয়েকজন ভিক্ষুক। আর এখন সেসব স্থানে ভিক্ষুকের সংখ্যা ২৫-৩০ জন। রাজধানীতে প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। এসব সিগন্যালের মোড়ে মোড়ে ভিক্ষা করে কয়েকশত মানুষ। বৃহঃপতিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল শ্রমিকদের দীর্ঘ লাইন। মাজে মধ্যে দুই একটি গাড়ি এসে থামলে তাকে ঘিরে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। দাম, দর, হয়। শ্রমিকের চেয়ে কাজের পরিমান কম হওয়ায় টাকার পরিমান ও কমে যায়। ৫ থেকে ১০ জন তাদের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে জানান, প্রতিদিন রোদ বৃষ্টিতে তাদের বাস্তার ওপর অপেক্ষা করতে হয় কাজের জন্য। কাজের জন্য আসা শ্রমিকদের জটলা করলে গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হয়। তাদের দাবি হলো সরকার যদি তাদের একটা নিদিষ্ট স্থান করে দেয় তাহলে তাদের খুব উপকার হবে এবং তাদের জন্য রাস্তার জানজট হবে না। এসব দিনমজুর অভাবি মানুষগুলো থাকার ব্যবস্থা না থাকার কাননে বসবাস করেছে নগরীর ফুটপাত, রেল আর বাসস্ট্যন্ড গুলোতে অসংখ্য মানুষ শুয়ে রাত কাটান। শহরের বিভিন্ন রাস্তার ওপারে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছে শত শত পরিবার। তাদের মলমূত এসে রাস্তায় পড়ে ফলে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
রাজধানীতে দিনমজুর মানুষের ভিড়................একটা কাজ চাই
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।