ধমাধম ধর্মে দীক্ষিত হইয়াই বাড়িতেই ধর্মের দোকান খুলিয়া বসিলাম। গ্রামের কিছু বদ পোলাপান সাগরেদ হইয়া জুটিয়া গেলো। বোরখাওয়ালী সানন্দে আমার প্রধান সহকারীর পদ দখল করিয়া লইল। অতঃপর পরম আনন্দে আমার নতুন করিয়া কচি বিবাহ করিবার অনুমতি প্রদান করিয়া দিল। মনে মনে বলিলাম- জয়, ধমাধম ধর্মের জয়!
গ্রামের মনুষ্য প্রজাতি আসিয়া তাহাদের সুখের কথা বর্ণনা করিয়া গেলে আমি তাহা হইতে কিঞ্চিত পরিমান সুখ নিজের জন্য রাখিয়া দেই। যখন দুঃখ-কষ্টের কথা বর্ণনা করিলে আগে উহাদের পকেট ফাঁকা করিয়ে গিয়ান দান করি। সমাধান না পাইয়া উহারা যখন আবার আগত হয়, আমার সাগরেদরা উহাদের পাছায় লাত্থি মারিয়া বিদায় করে। তবে পুনরায় উহাদের পকেট ফাঁকা করিতে ভুলিয়া যায় না।
এভাবে দোকানের অবস্থা জমজমাট হইয়া গেল। কিছুদিন পর পাশের গ্রাম হইতে ঘরে আরেকখানা কচি বিবি আনিয়া লইলাম। সুযোগ পাইলে সেটিকে টেপাটেপি করিবার কাজে লাগাইয়া পাকাইবার বন্দোবস্ত করিলাম। ধীরে ধীরে সেটি পাকিতে লাগিল। আমার এহেন যাদুকর প্রতিভায় মুগ্ধ হইয়া পাশের গ্রামের মনুষ্য প্রজাতিও তাহাদের সুখ-দুঃখ লইয়া গিয়ান লাভ করতে আসা আরম্ভ করিয়া দিল। ব্যাবসা পোয়াতির পেটের মত ফুলিয়া-ফাঁপিয়া উঠিতে লাগিল। আমি বগল বাজাইতে ভুলিলাম না।
ধীরে ধীরে সাগরেদের উপর আমার গিয়ানের পরশ গিয়া পড়িল। তাহারা দল বাধিয়া প্রশ্ন করিতে লাগিল, দোকানের নাম শুধু গিয়ান দান পরিষদ না হইয়া বিশ্ব গিয়ান দান পরিষদ হইলো কেনো। এখানে তো বিশ্বের মানুষ আসিয়া গিয়ান লাভ করে না। বুঝাইয়া বলিলাম- আমরা কুয়ার ব্যাঙ। এই কুয়াটাই, মানে গ্রামটাই আমাদের দেশ। পাশের গ্রামগুলিতেও যখন আমার ব্যবসা বিস্তার লাভ করিয়াছে তখন ইহা আন্তর্জাতিক হইয়া গিয়াছে। তাই বিশ্ব শব্দটি থাকা আবশ্যক।
অতঃপর আরো দূর-দূরান্ত হইতে শুধু মনুষ্যরা নিজেরাই নয়, জীব-জন্তু লইয়া তাহাদের সুখ-দুঃখের সমাধান খুঁজিতে আসিল। সাগরেগরা ভাবিল এইবার সব ভেস্তে যাইবে। তাহারা ভয় পাইয়া পালাইয়া গেল। কিন্তু আমি দমিলাম না। ঝোলা হইতে নতুন পথ্য বাহির করিলাম। সবাই সুখী হইয়া প্রস্থান করিল।
সাগরেদরা ফিরিয়া আসিয়া নতুন পথ্য সম্পর্কে জানিতে চাহিল। আমি পথ্যের নাম বলিলাম- ঘোড়ার ডিম। তাহারা কিঞ্চিত বিচলিত হইয়া প্রশ্ন করিল আমাদের নবী হযরত আদিল (তাহার উপর বৃষ্টি বর্ষিত হউক) তো এরকম কিছুর কথা ম্যানুয়ালে লিখিয়া দিয়া যান নাই। মৃদু হাসিয়া বলিলাল, সবই কি আর ম্যানুয়ালে লিখিত থাকিবে! এটিকে অন্য ম্যানুয়াল হইতে ধার করিয়া কইয়ের তেলে কই ভাজিলাম। যখন কিছুই বুঝিবে না তখন সবই ঘোড়ার ডিমের ইচ্ছা- বলিয়া চালাইয়া দিতে হইবেক।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




