somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্লজ্জ টেলিটকঃ জাতীয় সেবা সংস্থা সমূহের প্রতীক

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে টেলিটক যাত্রার প্রাক্কালে ছোট ভাই সোনার হরিণ সম একখানা সিম সংগ্রহ করেছিল। সে দেশ ছেড়ে প্রবাসী হওয়ায় সিমটি দীর্ঘদিন আমিই ব্যাবহার করছি।

টেলিটকের নেটওয়ার্ক এবং কারিগরি সেবা ইত্যাকার বিষয় নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছুই নাই। তবে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ‘কাস্টমার সার্ভিস’ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্লিপ্ত ও নির্লজ্জ আচরণ নিয়ে দু’একটি কথা না বললেই নয়।

সিমটি ব্যাবহারের প্রারম্ভ থেকে প্রয়োজনে যতবার তাদের কাস্টমার সার্ভিসের হট নম্বরে কল করেছি, মনে পড়ে ততবারই একা একা খিস্তি-খেউড় আওড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ক্লান্তিতে ক্ষান্ত হয়েছি। কারণ ওনারা কল রিসিভ করেননা। ভাবখানা এই রকম যে তাদের কাস্টমাররা সব অচ্ছুত-নমশূদ্র বা ছোটলোক আর ওনারা কুলীন ব্রাহ্ম-গোত্রীয় অভিজাত শ্রেণী। অতএব শ্রেণীভেদের কারণে আমাদের সাথে কথা বলা বারণ।

এ গেল হট লাইনে কাস্টমারদের জন্য ‘হট’ ট্রিটমেন্ট। এখন আসা যাক ‘কুল’ লাইন মানে ল্যান্ড ফোন নম্বরগুলোর কথা। এগুলোতে কল করেও বাবুদের ঘুম ভাঙ্গানো ততোধিক কঠিন! কারণ এই নম্বরগুলোকেও তারা ‘কুল’ করে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন নির্বিকারভাবে। তাছাড়া হট লাইন নম্বরে (১২৩৪) অমার্জিত ও কর্কশ কণ্ঠে দুর্বল ভাষা প্রয়োগে সম্বোধন সহ নুন্যতম একটি তথ্য রেকর্ড রাখা হয়েছে।

মজার বিষয় হল এখানে ‘সাধারণ তথ্য’ অপশনের জন্য নির্ধারিত ডিজিট ২ চাপার সাথে সাথেই ভেসে আসে সেই মধুর বুলি ‘দুঃখিত, সকল এজেন্ট এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে, তাই আপনাকে সেবা দিতে পারছেনা।‘ আহা, সেবার কি বাহার তাও আবার না দিতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ! প্রশ্ন জাগে সত্যিকার অর্থে সেখানে কোনও এজেন্ট আদৌ আছে কিনা বা থাকলে সারাক্ষণ, সারা দিন, সারা সপ্তাহ, সারা মাস এবং সারা বছর তারা কি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন?

কিছুদিন পূর্বে আকস্মিক ও কাকতালীয়ভাবেই একজন পুরুষ এজেন্ট (ভাগ্যিস এরা জেমস-বন্ড এর এজেন্ট নয়, নতুবা খবর ছিল!) হট লাইনে কল রিসিভ করে বসেন। একেই বলে পড়বি তো পড় মালীর ঘারে! কারণ দীর্ঘদিন যাবত মওকা খুঁজছিলাম। গুরুর নামে শুরু করেছিলাম এই বলে যে, ‘আপনাদের তো শোধ-বোধ ও লাজ-শরম বলে কিছুই নাই, তবুও বলি, আপনারা কি মানুষ না ভিন গ্রহের এলিয়েন?’ আমার কথা সত্যি প্রমাণ করে সেই এজেন্ট মুভিতে যেমন এলিয়েনরা ধীর-স্থির নির্লিপ্ত থাকে, তেমনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে টুপ করে লাইনটা কেটে দিলেন! যে মাছ বঁড়শির ঘা খায়, সে কি আর টোপ গিলতে আসে? এরপর হাজার চেষ্টা-চরিত করেও টেলিটকের কোনও মাছ (এজেন্ট) আমি আর বঁড়শিতে আটকাতে পারিনি।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সব সেবা সংস্থার সেবার ‘ডোজ’ নিতে নিতে নেশাগ্রস্থদের মত কেমন যেন একটা আসক্তি তৈরি হয়েছে। যেমন রুগীদের ব্যথা নাশক হিসেবে ‘প্যাথিডিন’ ইনজেকশন পুশ করার পরে একধরনের আচ্ছন্নতা তৈরি হয় এবং এ থেকে পরে আসক্তিও পেয়ে বসে!

এই কিছুদিন হল টেলিটকে ‘থ্রিজি’ অপশন যোগ হয়েছে। প্রযুক্তির আকর্ষণ এবং যথারীতি সেবার আসক্তির (!) কারণে প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় অনুসন্ধিৎসু চোখ রাখি। শেষ পর্যন্ত নেশার অমোঘ টানে নিরুপায় হয়ে গতকাল টেলিটকের ওয়েব সাইটে ঢুকে পড়লাম।

টুজি সার্ভিস থেকে থ্রিজি সার্ভিসে আপগ্রেডেশন যোগ্য সিম লিস্টে আমার নম্বরটি খুঁজে না পেয়ে, এতদ সংক্রান্ত ব্যাপারে পরবর্তী তথ্যের জন্য ব্যর্থ মনোরথ হবো জেনেও, তাদের হট ও কুল নম্বর সমূহে চেষ্টা করে যেতে লাগলাম। ফলাফল যথারীতি স্ব-খেদে একা একা খিস্তি-খেউড়! শেষমেশ পথ একটাই এবং পল্টনের কাস্টমার সেন্টারে সশরীরে হাজির হয়ে গেলাম। এখানকার অভিজ্ঞতাটাও একটু ভাগ করে নিলে মন্দ কি?

ছোট একটি কামড়ায় ঊর্ধ্বমুখী মাঝামাঝি অবস্থানে পাটাতন দিয়ে দ্বিতল কাস্টমার সেন্টার। নীচে ফ্রন্ট ডেস্কে দু’জন নারী কাস্টমার কেয়ার অফিসার বা এজেন্ট গ্রাহকদের সামলাচ্ছেন। একজনের সামনে দাঁড়াতে গিয়ে কাস্টমারদের দিকে তার চরম বিরক্তির ভ্রু-কুঁচকানো দৃষ্টি অবলোকন করেই দ্রুত স্থান পরিবর্তন করলাম। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়জন ঠিক তার উল্টো! ইনি সহাস্যে সকল গ্রাহককে সেবা প্রদানের চেষ্টা করে নিজে তৃপ্ত হচ্ছেন।

অতিকথন ও ঠোঁটকাটা দোষে দুষ্ট স্বভাবের কারণে সুযোগ বুঝে মুখ খুলে বসলাম। সহাস্যে বললাম, ‘আপনারা পৃথিবীর অদ্ভুততম সেবা প্রদানকারী সংস্থা, জানেন কি? সার্বিক বিবেচনায় আপনাদের সমকক্ষ আরও একটি প্রতিষ্ঠান, সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে পাওয়া যাবেনা, এব্যাপারে আমি আপনাদের নিয়ে যে কারো সাথে বাজী ধরতে পারি। ভাগ্যিস গ্রীক সম্রাট মহামহিম আলেকজান্ডার পুনর্জন্ম লাভ করে, এই দেশে এসে টেলিটকের একজন গ্রাহক হন নাই! নয়তো সেলুকাসের সমার্থক কিন্তু ভিন্ন ও আরো তাৎপর্যপূর্ণ কোনো শব্দ খুঁজতে, তাঁর দম ওষ্ঠাগত হত।‘ সদাহাস্য কাস্টমার কেয়ার অফিসার বা এজেন্ট কোনো উচ্চ-বাচ্য না করে বুঝিয়ে দিলেন, সম্মুখে বা আড়ালে যতই চিল্লা-ফাল্লা করনা গ্রাহক, মুখে কুলূপ এটে টু শব্দটি না করাই টেলিটক সার্ভিসের আসল রহস্য!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×