"মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি" কিংবা "এসো গাই সাম্যর গান"- সবাই পড়ি কিন্তু মানি কতটুকু তা এখন বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রীতি ঘটে যাওয়া গ্রীক দেবী থেমিসের বিষয়ে মূলতঃ আজকে এই কলাম লিখতে বসা। প্রথমতঃ যা সার্বজনীন সেখানে বিতর্কিত হতে পারে এমন কোন কিছু স্থাপনেই বিশেষভাবে সুস্থ্য চিন্তা করা উচিৎ ছিল। একটা দেশের, একটা রাষ্ট্রের সম্প্রীতি বজায় রেখে ন্যায় বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত, পেশিশক্তিহীন, নির্দলীয়সহ সর্বপুরি নিশ্চয়তা প্রদান করা সে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের দেখতে হচ্ছে আজ তার ঠিক উল্টো চিত্র। আজ সময়ের দাবী- কে বা কারা, কেন, কি লাভের প্রত্যাশায়, কখন, কার ইশারায় লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশের একটি স্পর্শকাতর স্থানে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটকে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হল! বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশ শাহ জালাল (রঃ)'র দেশ, শাহ সুলতান (রঃ)'র দেশ। বাংলাদেশ লালনের দেশ, কাজী নজরুল ইসলামের দেশ। বাংলাদেশ হাছন রাজার দেশ, শেখ মুজিবের দেশ। বাংলাদেশ প্রীতিলতার দেশ, বেগম রোকেয়ার দেশ। বাংলাদেশ জাহানারা ইমামের দেশ, দু'লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমে কেনা দেশ। কারো দানে বা আলাদিনের চেরাগে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি এই দেশ। এই দেশের, এই বাংলাদেশের ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিয়েছি। আমি রক্ত দিয়ে কিনে নিয়েছি বাংলা ভাষা। আমরা আমাদের স্বাধীনতা কিনে এনেছি। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমরা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাস্ত করে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু, আমাদের সেই স্বাধীনতা কোথায়? আমাদের সেই অধিকার কোথায়? কোথায় আজ আমাদের সেই সম্প্রীতি? বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান আজ কোথায়? আজ দেখতে হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক! জাতি জানবার চায়- কেন এই নাটক! মনে রাখবেন, নাটক কখনো রাজনীতি্র কৌশল হতে পারে না। কেননা, কোন এক সময় নাটকের চরিত্র শেষ হয়। শুধু তাই নয়, নাটকেরও সমাপ্ত হয়। তবে, বিরতি মানেই কিন্তু সমাপ্ত নয়। খুব খেয়াল করে ভাবুন একাত্তরের পরাজিত শক্তি কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। তারা বিরতিতে ছিল। আবার জেগে উঠলো আপনাদের দেউলিয়াপনায়।
আলহামদুলিল্লাহ্, কোটি কোটি প্রাণে মূর্তির ধ্বনি। আহাঃ সুদ, ঘুষ, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি এমন কোটি ধ্বনি গর্জে উঠতো! জানি উঠবে না। কারণ- সেখানে ব্যবসা নেই। মূর্তির বিপক্ষে কথা বললেই ব্যবসা জমজমাট। আবারো বলছি- যা সার্বজনীন সেখানে বিতর্কিত হতে পারে এমন কোন কিছু স্থাপনেই বিশেষভাবে সুস্থ্য চিন্তা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু, সেই চিন্তা করবে কে?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:৩২