somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ গল্প- "বোবাকান্না" --ধ্রুব নয়ন

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ইয়া খাদ্দামা তায়াল, মা ফি মুসকিল!"- ইশারায় ডেকে কাজের মহিলা হাওয়াকে কথাগুলো বললেন ৮৫ বছরের বড় কর্তা! হাওয়া বাঙ্গালী তাই আরবি তেমন ভালো বুঝে না। কাছে যেতেই নেকড়ে জানোয়ারের মতো দু'সন্তানের মা হাওয়ার উপরে হাওয়ার বেগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো বড় কর্তা। হাওয়া কোন ভাবেই নিজেকে বাঁচাতে পারলো না। চার দেয়ালের মাঝে ঠুকরে ঠুকরে হাওয়াকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল। তখন মাত্র সন্ধ্যা বেলা। বাসার সবাই বাইরে বের হয়েছে। মধ্য রাতে হাওয়ার ঘরে শিশা নিয়ে প্রবেশ করলো বড় কর্তার বড় ছেলে! সেও হাওয়াকে মুক্তি দিল না। প্রশস্ত বুকের নিচে হাওয়া কখন অজ্ঞান হয়েছিল তা হাওয়া নিজেও জানে না। যখন জ্ঞান ফিরল তখন অনুভব করলো বড় কর্তার মাতাল ছোট ছেলে সেইইইইইইইইইইইইইইইইই আদিম যুগের খেলায় মহাব্যস্ত! ফজরের আজান দিচ্ছিল তখন! তারপর এলো বড় কর্তার মেয়ের জামাই! কাজে যোগদানের মাত্র তিন দিন পর থেকেই হাওয়ার জীবনে নেমে এলো ধারাবাহিক নাটকের ১ম পর্ব! এই নাটকের পর্ব ছিল প্রতিদিন! প্রতি রাত!

হাওয়া বাধ্য হয়ে পালিয়ে ওপারের বাঙ্গালী অফিসে এলেন। কেঁদে কেঁদে তার দুঃখ, কষ্টের কথা জানালেন। দায়িত্বরত দালাল বললেন মালিক-কে জানাও নি? হাওয়া বলল- "মুসকিল মা ফি, শুয়ে শুয়ে তালিম!" - এই কথা বড় কর্তা বলেছেন। আমি আর পারছি না স্যার! আমারে দ্যাশে পাঠাইয়া দ্যান গো স্যার! আমি এহানে থাকলে মইরাই যামু! দ্যাশে আমার দু'ডা পোলা-ম্যাইয়া আছে! আমি তাগো মুখ দেখবার চাই! আমারে দ্যাশে পাঠাইয়া দ্যান গো স্যার! আপনার দু'ডা পায়ে পড়ি! দ্যাশে ভিক্ষা কইরা খামু, তবুও কেউ জ্যানো এই ডাকাতা দ্যাশে না আহে! তবুও সেই স্যার নামের দালালের মন গলেনি। একটুও মায়া হয়নি! হাওয়াকে জানানো হল সেদিন- তাকে দু'বছরের কন্ট্রাক্টে ঐ মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি দু'বছর পর শেষ হবে! কেউ জানেনা, শুধু এই হাওয়ারাই জানে- দু'বছরের যোনির চুক্তির কথা! হাওয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো! তখন ঐ অফিসে ৫১ জন মহিলা কে বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে আবার সেই মালিকের বাসায় পাঠানো হচ্ছিলো! হাওয়াকেও বেত দিয়ে পিটিয়ে আবার সেই বড় কর্তার বাসাতেই পাঠিয়ে দিল। নাটকের পর্ব চলছেই---------

লুকিয়ে স্বামীর কাছে ফোন দিল হাওয়া! কেঁদে কেঁদে ঘটনা খুলে বলল। জানালো- প্রতি রাতে মাত্র এক মুঠো ভাত দ্যায়! আর সারাদিন রাত খেটে খেটে আমি মরে যাচ্ছি। তুমি জ্যামনে পারো, যেভাবে পারো আমারে দ্যাশে নিয়া যাও!

স্বামী সেই দালাল কে ধরল! ধালাল ১৫ দিনের সময় নিয়ে উধাও। ওপারে ধারাবাহিক পর্ব চলছে। রিপোর্টার আকাশ এই তথ্য পেলো। এজেন্সির শত হুমকি-ধামকি খেয়েও আকাশ সেই মা-বোনদের ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসার হাই রিস্ক নিল। কাজে সফলতাও আসলো! হাওয়ার সাথে আরও দু'জন মহিলা শ্রমিক এপারে এসেছে। কিন্তু, "ইয়া খাদ্দামা তায়াল, মা ফি মুসকিল! "মুসকিল মা ফি, শুয়ে শুয়ে তালিম!"- এই ডায়লগগুলো হাওয়াকে ধুকে ধুকে টিটকারি করতে লাগলো। হাওয়া ঘুমাতে পারে না। একটুও শান্তি পাচ্ছে না হাওয়া। এই তিন জন মোবাইলে যোগাযোগ করে। তিন জনই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে, তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আকাশকে ফোন দিল- আর যেন কোন বাঙ্গালী মা-বোনের এই ক্ষতি না হয় সেজন্য তারা মিডিয়ার সামনে আসতে চায়! দেশবাসীকে জানাতে চায়- হাওয়াদের কেটে যাওয়া প্রবাসের জীবন কাহিনী! তাদের বোবা কান্নায় কাঁদাতে চায়- গোটা জাতিকে! শীঘ্রই একটি টপ চ্যানেলে হাওয়াদের বোবাকান্নায় আকাশের নিউজ দেখানো হবে এবং প্রকাশিত হবে জাতীয় দৈনিক আমার সময় পত্রিকায়। শুধু দেখানো হবে না হাওয়াদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা সুইচব্যাংকে কিভাবে যায়!

২ রা শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ।
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:১৭
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×