"ইয়া খাদ্দামা তায়াল, মা ফি মুসকিল!"- ইশারায় ডেকে কাজের মহিলা হাওয়াকে কথাগুলো বললেন ৮৫ বছরের বড় কর্তা! হাওয়া বাঙ্গালী তাই আরবি তেমন ভালো বুঝে না। কাছে যেতেই নেকড়ে জানোয়ারের মতো দু'সন্তানের মা হাওয়ার উপরে হাওয়ার বেগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো বড় কর্তা। হাওয়া কোন ভাবেই নিজেকে বাঁচাতে পারলো না। চার দেয়ালের মাঝে ঠুকরে ঠুকরে হাওয়াকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল। তখন মাত্র সন্ধ্যা বেলা। বাসার সবাই বাইরে বের হয়েছে। মধ্য রাতে হাওয়ার ঘরে শিশা নিয়ে প্রবেশ করলো বড় কর্তার বড় ছেলে! সেও হাওয়াকে মুক্তি দিল না। প্রশস্ত বুকের নিচে হাওয়া কখন অজ্ঞান হয়েছিল তা হাওয়া নিজেও জানে না। যখন জ্ঞান ফিরল তখন অনুভব করলো বড় কর্তার মাতাল ছোট ছেলে সেইইইইইইইইইইইইইইইইই আদিম যুগের খেলায় মহাব্যস্ত! ফজরের আজান দিচ্ছিল তখন! তারপর এলো বড় কর্তার মেয়ের জামাই! কাজে যোগদানের মাত্র তিন দিন পর থেকেই হাওয়ার জীবনে নেমে এলো ধারাবাহিক নাটকের ১ম পর্ব! এই নাটকের পর্ব ছিল প্রতিদিন! প্রতি রাত!
হাওয়া বাধ্য হয়ে পালিয়ে ওপারের বাঙ্গালী অফিসে এলেন। কেঁদে কেঁদে তার দুঃখ, কষ্টের কথা জানালেন। দায়িত্বরত দালাল বললেন মালিক-কে জানাও নি? হাওয়া বলল- "মুসকিল মা ফি, শুয়ে শুয়ে তালিম!" - এই কথা বড় কর্তা বলেছেন। আমি আর পারছি না স্যার! আমারে দ্যাশে পাঠাইয়া দ্যান গো স্যার! আমি এহানে থাকলে মইরাই যামু! দ্যাশে আমার দু'ডা পোলা-ম্যাইয়া আছে! আমি তাগো মুখ দেখবার চাই! আমারে দ্যাশে পাঠাইয়া দ্যান গো স্যার! আপনার দু'ডা পায়ে পড়ি! দ্যাশে ভিক্ষা কইরা খামু, তবুও কেউ জ্যানো এই ডাকাতা দ্যাশে না আহে! তবুও সেই স্যার নামের দালালের মন গলেনি। একটুও মায়া হয়নি! হাওয়াকে জানানো হল সেদিন- তাকে দু'বছরের কন্ট্রাক্টে ঐ মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি দু'বছর পর শেষ হবে! কেউ জানেনা, শুধু এই হাওয়ারাই জানে- দু'বছরের যোনির চুক্তির কথা! হাওয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো! তখন ঐ অফিসে ৫১ জন মহিলা কে বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে আবার সেই মালিকের বাসায় পাঠানো হচ্ছিলো! হাওয়াকেও বেত দিয়ে পিটিয়ে আবার সেই বড় কর্তার বাসাতেই পাঠিয়ে দিল। নাটকের পর্ব চলছেই---------
লুকিয়ে স্বামীর কাছে ফোন দিল হাওয়া! কেঁদে কেঁদে ঘটনা খুলে বলল। জানালো- প্রতি রাতে মাত্র এক মুঠো ভাত দ্যায়! আর সারাদিন রাত খেটে খেটে আমি মরে যাচ্ছি। তুমি জ্যামনে পারো, যেভাবে পারো আমারে দ্যাশে নিয়া যাও!
স্বামী সেই দালাল কে ধরল! ধালাল ১৫ দিনের সময় নিয়ে উধাও। ওপারে ধারাবাহিক পর্ব চলছে। রিপোর্টার আকাশ এই তথ্য পেলো। এজেন্সির শত হুমকি-ধামকি খেয়েও আকাশ সেই মা-বোনদের ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসার হাই রিস্ক নিল। কাজে সফলতাও আসলো! হাওয়ার সাথে আরও দু'জন মহিলা শ্রমিক এপারে এসেছে। কিন্তু, "ইয়া খাদ্দামা তায়াল, মা ফি মুসকিল! "মুসকিল মা ফি, শুয়ে শুয়ে তালিম!"- এই ডায়লগগুলো হাওয়াকে ধুকে ধুকে টিটকারি করতে লাগলো। হাওয়া ঘুমাতে পারে না। একটুও শান্তি পাচ্ছে না হাওয়া। এই তিন জন মোবাইলে যোগাযোগ করে। তিন জনই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে, তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আকাশকে ফোন দিল- আর যেন কোন বাঙ্গালী মা-বোনের এই ক্ষতি না হয় সেজন্য তারা মিডিয়ার সামনে আসতে চায়! দেশবাসীকে জানাতে চায়- হাওয়াদের কেটে যাওয়া প্রবাসের জীবন কাহিনী! তাদের বোবা কান্নায় কাঁদাতে চায়- গোটা জাতিকে! শীঘ্রই একটি টপ চ্যানেলে হাওয়াদের বোবাকান্নায় আকাশের নিউজ দেখানো হবে এবং প্রকাশিত হবে জাতীয় দৈনিক আমার সময় পত্রিকায়। শুধু দেখানো হবে না হাওয়াদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা সুইচব্যাংকে কিভাবে যায়!
২ রা শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ।
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:১৭