ধ্রুব নয়নঃ নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র দিয়েই শুরু করছি- “প্রত্যেক ক্রিয়ার-ই বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে!” অর্থাৎ, প্রকৃতির উপর আঘাত হানলে প্রকৃতিও আঘাত হানবে এটা অস্বাভাবিক কোন খবর নয়! তদ্রূপ- কোন খবরই মিথ্যে নয়, বরং কিছু সত্য গোপন রয়! বর্ষার কান্নায় চারেদিকে ডিজিটাল হাহাকার! এই হাহাকার একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এই হাহাকারের পিছনে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। প্রথমতঃ অপরিকল্পিত নগরায়ন, দ্বিতীয়তঃ দখলদারিত্ব, তৃতীয়তঃ কাউন্সিলরদের দায়িত্বহীনতা, চতুর্থঃ সমন্বয়হীনতা, পঞ্চমতঃ দুর্নীতি!
অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং সারাদেশে যে ভাবে নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে ভূমিদস্যুরা দখলে নিয়েছে এবং এখনো নিচ্ছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়! যে দল যখন ক্ষমতায় এসেছে সেই দলের পরিচয় দিয়েই এই দখলে মরিয়া হয়ে উঠে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে এই বন্যা হওয়া খুব অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অস্বাভাবিক বিষয় সেটি, খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট করার সময় যখন প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মাননীয় মেয়র সাহেবগণও সম্প্রীতি এই বন্যার বিষয়ে বিচলিত! আসলে শিলা-বৃষ্টি, বিজলী, বর্ষা, চুমকি কিংবা বন্যাদের দোষ নয় এটি। ইহা ঈশ্বরের প্রাকৃতিক সৃষ্টিও নয়। রাজনৈতিক লেবাসে ভূমিদস্যদের কৃত্রিম সৃষ্ট এই ডিজিটাল হাহাকার! বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় যখন কৃত্রিম খাল তৈরি করা হয় তখন দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে আমাদের নদীমাতৃক দেশে ভরাট কাজ চলে। হাস্যকর বটে! স্থানীয় কাউন্সিলররা যদি একটু চোখ-নজর রাখতেন তাহলে আজকে আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হতো না!
চিকনগুনিয়া প্রসঙ্গেও দু’একটি কথা বলতেই হয়। আমি আজ এক মাস নয় দিন ধরে চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত। আমার এলাকায় আগে কখনো মশক নিধনের কীটনাশক স্প্রে হতো না। ইদানিং মাঝে মধ্য চোখে পড়ছে স্প্রের দৃশ্য। তাহলে কি ইতিপূর্বে এই মশক
নিধনের কোন বাজেট ছিল না! যাহোক- হয়তো মশক নিধনের কীটনাশক নিয়ে কথা লিখলে আমার প্রাণনাশেরও হুমকি থেকে যায়! দুর্ভাগ্য জাতির! কারণ- ৫৭ ধারায় মানহানির মামলা ঠুকে দেওয়া বর্তমান কৃত্রিম সৃষ্ট বন্যার মতোই সহজলভ্য! গত মার্চ মাসে আমি রাজধানীর খাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলাম। কোন ফলপ্রসূ হয়নি। তবে সেই প্রতিবেদনের প্রতিফলন ইতিমধ্য দেখতে শুরু করেছেন দুর্ভোগ পোহাতে আসা নগরবাসী!
ওয়াসা তাদের পানির লাইনের কাজ করছে। রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি ইহা নতুন কোন ঘটনা নয়! কিন্তু, কথায় আছে- ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। তাই, আমাদের সুদূর প্রসারি চিন্তা-চেতনা হওয়া ভীষণ জরুরী। সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে এই খোঁড়াখুরির কাজ করলে আজ সাধারণ জনগনকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। সারাদেশের রাস্তাঘাটের মাঝে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, ভেঙ্গে গেছে বন্যায়। দুর্ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। রাজধানীবাসী যানজটে নাকাল। খেটেখাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে অফিসগামী মানুষের চরম ভোগান্তি। পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বাজারে অস্বাভাবিক ভাবে দাম বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। কৃষকের সব ফসল ডুবে গেছে। এ দায় কার?
এই মুহূর্তে বাজার মনিটরিং খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়! অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ডঃ অর্মত্য সেনের সেই কথাটিই মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই- অধিক মুনাফার লোভে এই সুযোগে অনেক মুখোশধারী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে সচেষ্ট হবেন। পণ্য গুদাম ঘরে আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে আগুন লাগাবেন। চারেদিকে ডিজিটাল হাহাকার তৈরি করে দুর্ভিক্ষের মুখে দেশকে যেন লেলিয়ে দিতে না পারে সেদিকেই লক্ষ্য রাখা এখন সময়ের দাবী! একই সাথে সাধারণ জনগন আশা করে- অতি দ্রুত অবৈধভাবে ভরাটকৃত রাজধানীর খালগুলোকে দখলমুক্ত করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবে মেয়র মহোদয়গণ এবং ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র।
লেখকঃ কলামিস্ট, সাংবাদিক
[email protected]
মোবাইল নাম্বারঃ 01723-130483
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭