somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডার্ক সাইড অফ দি মুনঃ হলিউডে বর্ণবাদ এবং আমাদের মিডিয়া

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাইটেল দেখে ভরকানোর কিছু নেই।বর্ণবাদ এর মতন ভাইরাস আমার সোনার দেশে নাই এটা একটা কথা?পশ্চিমা সব রোগ পেতে সমস্যা নেই তো এটা কেন বাদ যাবে বলেন তো?আমরা তো তাহলে জাতে উঠতে পারলাম না।ঠিক না?আর প্রশ্ন করছি না আপনাদের কে।স্কুল-কলেজে রচনা লেখা শিখানোর সময় বলা হয়েছিলো যাতে প্রশ্ন না করি লেখার মাঝে।মূল লেখাতে যাই।

দুইটা সিনেমার কথা দিয়ে শুরু করি।
1.American History X
(http://www.imdb.com/title/tt0120586/)
2.The believer
(http://www.imdb.com/title/tt0247199/)


প্রথমটা অনেকেরই দেখার কথা।দেশে-বিদেশে বেশ পরিচিত একটি সিনেমা।এডওয়ার্ড নর্টনের অসাধারন অভিনয় আর সেই টার্মিনেটর 2 এর খ্যাতি প্রাপ্ত এডওয়ার্ড ফার্লং এর চমতকার পার্ফরমেন্স ছবিটাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।সেই সাথে ছবিটির বিষয়বস্তুও অসাধারন।বছরের পর বছর চলে আসা সাদা-কালোদের মধ্যকার বিভেদ নিয়ে খুব করুন ও সুন্দর একটা সিনেমা।টনি কাইয়ের পরিচালনাও খুব সুন্দর।যদিও উনার করা অরিজিনাল ছবিটা ছাড়া হয়নাই।ইয়ুটিউবে সার্চ করে আপনারা ডিলিটেড সিন গুলা দেখলে বুঝবেন কেন স্টুডিও সেগুলো ছাড়তে রাজি হয়নি।অনেক বেশি আক্রমনাত্মক সিন ছিল ২টা।আর তৃতীয়টা যে কেন ডিলিট করল সেটার ব্যাখা আমার আছে।সেটাতে পরে আসছি।
২য় ছবিটা অবশ্য তেমন প্রচলিত না।রায়ান গসলিং আর আমার পছন্দের টপিক না হলে আমি ছবিটা দেখতাম না।ছবিটা ইহুদি-বিদ্বেষ নিয়ে।রায়ান গসলিং আমাদের সেই এডওয়ার্ড নর্টনের মতন একটা নিও-নাজী গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।তবে মূল আলোকপাত করা হয়েছে ইহুদি-বিদ্বেষের উপর।সাদা-কালো বিবাদ টা মূল নয়।আর এখানে কঠিন টুইস্ট এটাই যে মূল চরিত্র নিজেই ইহুদি।পরে সে নিজের ভুল বুঝে নিজে জীবন দিয়ে অনেক ইহুদিদের বাচায়।নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং একটা ছবি।হেনরি বিনের পরিচালনায় অন্য রকম একটা ব্যাপার ছিলো।রায়ান গসলিং এর অসাধারন পার্ফরমেন্স তো ছিলোই।চরিত্রটার মনের মাঝে কাজ করতে থাকা দোনোমনো ভাব অসাধারনভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি।ছবিটা সানড্যান্সে পুরষ্কার প্রাপ্ত।ছবিটি সত্য একটা ঘটনার সাথে কিছুটা মিল রেখে বানানো।১৯৬০ সালের আমেরিকান নাজি পার্টির(Click This Link) সদস্য Daniel Burros এর জীবনের উপর হালকা মিল রেখে বানানো হয়েছে সিনেমাটি।

এখন মজার ব্যাপার খেয়াল করুন সিনেমা ২টার মূল বিষয় হল ভিন্ন দের প্রতি ঘৃণা।ভিন্ন রঙের,ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এক অদম্য ঘৃণা ও তার ফলাফলে কি হয় সেটাই।তবে দেখুন ফিল্মটাতে কালো চরিত্র নেই বললেই চলে।হ্যা,এডওয়ার্ড নর্টনের জেলজীবনের কাজের পার্টনার ছিল একজন কালো আমেরিকান।আর প্রফেসর সাহেব ছিলেন কালো।অথচ এরকম একটা সিনেমাতে একটা মেজর কালো চরিত্র থাকতেই পারতো।কিন্তু ছিলোনা।এমনকি এই ধাচের আরেকটা ছবি মিসিসিপি বার্ণিং এর ও একি অবস্থা(http://www.imdb.com/title/tt0095647/)।কিন্তু শেষে কি দেখালো?কালো ছেলেটা এডওয়ার্ড ফার্লং কে মেরেই ফেললো।এটা কেমন হলো?টনি কাই সাহেবের মূল মেসেজ হয়তো ছিলো ঘৃণা কখনো বাড়তে দিতে নেই।আর কর্মফল বলে একটা জিনিস আছে।কিন্তু এমন ও একটা ব্যাপার ও সাব-কনশাস লেভেলে কাজ করে যে কালো মানুষেরা যতো কিছুই হোক শুধরাবেনা।আপনাকে সাহায্য করলেও পরে ওদেরই আরেকজন আপনার ভাইকে গুলি করে মারবে।কালোদের প্রতি এরকম অদ্ভুত একটা ঘৃণা মিশ্রিত একটা ভীতি ভর্তি সাদাদের মনে।যেখানে ঘৃণার প্রাধান্যই বেশি।আর সাদারাই শ্রেষ্ঠ এমন মনোভাব রয়েছে সেদেশের অসংখ্য মানুষের মনে।ওদিকে দি বিলিভার ফিল্মের ব্যাপারটা দেখেন।সাদা চামড়ার ইহুদিরা কত সুশীল,কত সভ্য খালি ঘরে ঘরে বসে বসে তোরাহ পড়ে।আর এন্টি সেমিটিস্টদের ভয়ে কাপাকাপি করে।আহা কি ইনোসেন্ট।

এবারে বাস্তবতায় আসি।হ্যা,ওদের প্রেসিডেন্ট কালো।কিন্তু ওদের মিডিয়া তে দেখেন কালোদের আধিপত্য এখনো আসেনি।কালোদের কে নিজেদের ভিতর গুটিয়ে থাকতে হয়।আপনি দেখুন কয়জন কালো আমেরিকান সুপারস্টার অভিনেতা আছে সাদাদের অনুপাতে?আমার মাথায় আসছে মোটে কয়েকজনের নাম
ডেনজ়েল ওয়াশিংটন,ফরেস্ট হুইটেকার,উইল স্মিথ,কিউবাগুডিং জুনিয়র,মর্গান ফ্রিম্যান,লরেন্স ফিসবার্ন,ড্যানি গ্লোভার,ড্যান চেডল,স্যামুয়েল এল জ্যাকসন,জেমি ফক্স।বাকি সব সাদা।কি চমতকার অদ্ভুত ব্যাপার।এই হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বেসিকালি পরিচিত কালো অভিনেতা নেই বললেই চলে।তাও এদের মাঝে ড্যানি গ্লোভার,ড্যান চেডল,জেমি ফক্সের নাম কেউ জানেনা।নারীদের কথা তো বললামই না।উনাদের অবস্থা আরো করুন।আরো অপরিচিত উনারা।এদের পুরষ্কার এর ঝুলিটাও কেমন ফাকা ফাকা।হ্যা পুরষ্কার খুব জরুরি কিছু না।কিন্তু পুরষ্কারটা শুধু এটাই বোঝায় যে ওরা আছে।অদৃশ্য কিছু না।স্পাইক লি সাহেবরে তারা অস্কার দেয় না,দিবেও না।স্যামুয়েল এল জ্যাকসন কেও দেয়নাই।হ্যা ডেঞ্জেল কে দিয়েছে তাও দূর্নীতি বাজ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়।আবার ফরেস্ট হুইটেকার কে দিয়েছে পাগলা স্বৈরশাসকের ভূমিকার জন্য।তাহলে কি পাগল আর চোর ছাড়া কালো আমেরিকান দের অস্কার দেওয়া হবেনা?হ্যা বেস্ট ডকুমেন্টারিতে হয়তোবা পেয়েছে অথবা বেস্ট গান,মিউজিক,চিত্রনাট্য,সাইড এক্টর-এক্ট্রেস দের দেওয়া হয়েছে।তবে তাও এত কম যে লিস্ট দেখলে লজ্জা পেয়ে যাবেন Click This Link

আমাদের সোনার দেশ বাংলাদেশে ফিরি।আমাদের এই ব্যাপারটা থেকে শিক্ষা অনেক কিছুই আছে।কি বলি এগুলা শিক্ষা তো নিয়েই ফেলেছি।আমার দেশের বেশিরভাগ নারী মডেল এর চামড়া সাদা অথবা সাদা বানানো হয়।এতোটা হোয়াইট-ওয়াশ করা হয়েছে আমাদের ফ্যাশন-টিভি-সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে তা বলার মতন না।পোস্ট কলোনিয়াল দেশ হিসাবে আমাদের এই ব্যাপার গুলা চরিত্রে ঢুকে গিয়েছে।নারী মডেল-অভিনেত্রী দের মাঝে শ্যামলা রঙের মাঝে মনে পড়ছে তমালিকা কর্মকার,বন্যা মির্জা আর দীপা খন্দকার এর কথা।তাও শেষোক্ত দুইজন প্রায় ফর্সা।তারপর নতুন ট্রেণ্ড যেটা এলো লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ও অন্যান্য মডেলিং-অভিনয় প্রতিভা অন্বেষন এর যতজন টপে থেকেছেন তাদের জন্য ও আমার এই কথাটা খাটে।বিন্দু আর মৌসুমী ছাড়া আমি আর কোন শ্যামলা জাতীয় মেয়েকে দেখিনাই।কিছু হয়তোবা শ্যামলা জাতীয় রঙের আছে কিন্তু লাইমলাইটে তাদের খুজেই পাওয়া যায়না।আমাদের মেগাস্টার জয়া আহসান,তিশা,মীম,শখ,মেহজাবিন দের দেখেন একবার।একমাত্র বর্ষা ছাড়া আর কাউকেই চোখে পড়েনা।তাও অনন্তর স্ত্রী না হলে উনিও হয়তোবা হারিয়ে যেতেন।কত প্রতিভা এভাবে হারিয়ে যায়/যাচ্ছে/যাবে তা বলার মতন না।
সবশেষে বলি আমাদের হয়তবা সাদা চামড়ার প্রতি টানটা থাকবেই।কেননা সাধারন উদাহারন বলি আমরা নতুন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে তুলনামূলক সাদা চামড়ার মেয়েটিকে সুন্দর হিসেবে ধরি।আর আমাদের সমাজে হাল্কা শ্যামলা থেকে শুরু করে কালো মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কত সমস্যার গল্প যে শুনেছি তার হিসাব নেই।এখন হ্যা একেকজনের কাছে একেকজন সুন্দর।কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত যে আমাদের কাছে ওই সাদা চামড়ার মেয়েকেই সুন্দর লাগে নাকি আমাদের নিজস্ব সৌন্দর্যের অনুভূতি একদম ছোট থেকে দেশি-বিদেশি মিডিয়া,নাটক,সিনেমা,এডভার্টাইজমেন্ট দ্বারা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে?
ভেবে দেখুন সবাই…আমাদের চাদের মতন সুন্দর মিডিয়া টা আসলে কি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে?নিজস্বতা কি তার আছে আদৌ?তার ঔজ্জ্বল্যতা কি সত্য নাকি ধার করা?


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×