somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটুখানি দুঃস্বপ্ন

১৩ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাত ধরফর করে ঘুম থেকে উঠলাম।সারা শরীর ঘেমে নেয়ে গিয়েছে। পাশের বারান্দা থেকে সাদা লাইটের একটু করে চুইয়ে চুইয়ে খুব কষ্ট করে আমার কাছ পর্যন্ত আসছে।রুমের দরজাটা একটু করে ফাক হয়ে আছে। বিছানায় তন্ন তন্ন করে ফোন খুজতেছি। সময় আর আলোর জন্য। খসখস আওয়াজ শুনতে পেলাম দরজার ওপাশে।আমি ফোন খোজা বন্ধ করে দিলাম।
উঠে দরজা খুলে দেখি অদ্ভুত চারপেয়ে জন্তুরা ছোটাছুটি করছে ঘর জুড়ে। সবার গায়ে অদ্ভুত সব কাপড় চোপড়। একটু খেয়াল করে দেখি এগুলো সব আমার আগের কাপড় চোপড়। একটা জন্তু আমার ক্লাস ৫-৬ এঁর একটা গেঞ্জি পড়া, আরেকজন আমার কলেজ লাইফের Dimmu Borgir এঁর একটা গেঞ্জি পড়া, আরেকটা আবার Artcellএঁর গেঞ্জি পড়া। এটা ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়ের। সবগুলো জামা কাপড় ছেড়া। জন্তু গুলো কি করছে দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম। দেখি,আমার মতো একজন কে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে জন্তু গুলো। তার গায়ের জামা আর আমার গায়ের জামা টা অবশ্য একটু পুরোনো। গতমাসে চ্যারিটিতে জামাটা দিয়ে এসেছিলাম। এখন আমার মুখ ক্লিন শেভড আর এইখানে আমার লাশটার মুখে হালকা দাড়ি দেখা যাচ্ছে।
খুবই কনফিউজড হয়ে গেলাম। কে আমি? আমার মতো দেখতে এটা কে? কয়দিন পুরোনো এই আমাকে এভাবে ছিড়েখুড়ে খাচ্ছে এই জন্তুগুলো এখন এরপর কি বর্তমান আমাকে ধরতে আসবে? নাকি এগুলো সবই জাস্ট দুঃস্বপ্ন? আমি শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
এই চিন্তা করতে করতে আমি পিছিয়ে যেতে থাকলাম তখন ঘরের কোনে ল্যাম্পের সাথে বাড়ি খেলাম।
প্রচন্ড শব্দ করে ল্যাম্পটা মাটিতে পড়ে গেলো। জন্তুগুলোর একটা ঘুরে আমার দিকে তাকালো। জন্তুগুলো মুখ আমার মতোই কিন্তু মুখ,হাত,পা সব যেন পচে গলে পড়তেছে আর ভিতরের হাড় হাড্ডি সব বের হয়ে আছে। বাকি জন্তু গুলো কিছুক্ষন আমার ওই লাশ টাকে খেলো এরপর ঘুরে আমার দিকে তাকালো।আমি ভয়ে ততক্ষনে দরজার দিকে আগাতে থাকলাম। ধীরে ধীরে গতি বাড়াতে লাগলাম।পাশে কাধের ব্যাগ দেখে সাথে নিয়ে নিলাম। এরপর দৌড়ে বের হলাম ঘর থেকে। অবাক হয়ে দেখি এটা আমার পুরোনো বাসার সামনের উঠান। সামনেই লাল গ্রিলের গেইট, বাগান। ভয়ংকর শীত আর কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে আছে।আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। কেউ নেই আশেপাশে। পিছনে তাকানোর সাহস হচ্ছেনা।ছুটে চলছি। কিছুদূর গিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখি জন্তু গুলো আসছে আস্তে ধীরে। আমি দেখি ঝুপড়ির দোকান গুলো। সেখানে আমি দোকানের শাটারে বাড়ি দেওয়া শুরু করলাম।
"মামা,দরজা খুলেন।প্লিজ খুলেন। আমারে বাচান"
শাটার খুললো। কিন্তু অইখানে দেখি একটা কাপল । মেয়েটা তখনো কাপড় ঠিক করতেছে। আর ছেলেটা বললো "কি সমস্যা?"
আমি ধাক্কা দিয়ে ঢুকে গেলাম ওইখানে। "বলছি পরে"
কাপল টা বেকুব হয়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না। নীরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় থাকলো।
ঢুকে বসার সাথে সাথে কেমন গরম লাগা শুরু করলো। মুহুর্তের ভিতর অসহ্য গরম হয়ে গেলো সবকিছু। শাটার টা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি সব ঝুপড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে কতগুলো মানুষ। পাশে আমার ডিপার্টমেন্টেও দেখি আগুন জ্বলছে। আমার বাসার এলাকার দিকে তাকালাম ওইখানেও আগুন জ্বলছে দাঊদাঊ করে...
আমি মানুষ গুলোর দিকে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছি। সবাইকে আমি চিনি। কেউ আমার ক্লাসমেট স্কুলের, কলেজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমার বাবা মা, চাচা,খালা,মামা,ফুফু, বন্ধু ,বান্ধবী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক রাই আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন সবখানে। আমি সবাই ধরে ধরে চিতকার করছি আর বলছি "থামুন,আগুন দিয়েন না। সব তো পুড়ে যাচ্ছে।" কিন্তু কেউ তো শুনলোই না বরং আমাকে ধরে আমার গায়েও কেরোসিন ঢালা শুরু করলো আমার বাবা। আমার মতো জন্তু গুলো আশপাশে ঘুরঘুর করছে। আমি পুড়তে শুরু করলাম সবাই চারিদিক থেকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সম্পূর্ন অনুভূতিহীন এবং ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো...আমি পুড়তে থাকলাম। বিশাল বনফায়ার এঁর ভিতর আমি আমার বই খাতা, সাইকেল,ল্যাপটপ,জামা কাপড় সব পুড়ে কালো ধোয়া গুলো ভোরের সবে মাত্র উদিত হওয়া সূর্য কে ঢেকে দিচ্ছে আস্তে আস্তে...
-----------
আমার ঘুম ভাংগে আমার রুমমেটের চিতকার ও ঝাকুনীতে।
"কিরে কি হইছে?বাজে স্বপ্ন দেখছিস?"
আমি দরদর করে ঘামছি। আমার হাতের আংগুল রক্তাক্ত। মাথার বালিশের পিছনে দেয়ালে রক্ত লেগে আছে।আমার কপালটাও কাটা এবং রক্ত পড়ছে...
আমি রুমমেটের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম "হ্যা,খুবই বাজে স্বপ্ন দেখছি"
রুমমেট বললো "ব্যাপার না।সব ঠিক হয়ে যাবে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নে।নতুন জায়গায় নতুন করে সবকিছু শুরু করছিস।এজন্য হয়তোবা উল্টাপাল্টা জিনিস দেখিস। এরপরে আবার নিহারী খাইছিস একগাদা। উঠ, প্রথমদিন অফিসে দেরী করিস না"
আমার সব মনে পড়লো। আমি নতুন এই জায়গায় আসলাম কয়দিন আগেই। নতুন কিছু শুরু করা সব সময় আনন্দের না হয়ে ভয়ের ও হতে পারে,আতংকেরও হতে পারে। আমরা একই সেই পরিচিত পরিবেশে থেকে যেতে চাই।নতুন কোনোকিছুকে মেনে নিতে সময় লাগে। কিন্তু আমার জন্য খুবই কড়া রিএকশন হলো কেন,বুঝলাম না...পরাজিত জীবনে অল্প আলো তে হয়তো চোখ ঝলসে গিয়েছে...
আর্টসেল - চিলেকোঠার সেপাই...
আঁধারে নয় আলোতে ভয়
দৃশ্যগুলো শব্দময়
শূ্ন্যতার ভীড়ে হারিয়েছে
স্তব্ধ সময়
সপ্নময় ঘুমে নয়
শব্দগুলো দৃশ্যময়
শূন্যতায় নির্বাসিত রয়
স্তব্ধ সময়
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×