কিছু মানুষ আছে যারা জন্ম থেকেই অসুস্থ থাকে , নিত্যনতুন রোগে আক্রান্ত হয় তাদের শরীর । সেই রোগ থেকে সারতে গিলে খায় একের পর এক এন্টিবায়োটিক কিংবা প্যারাসিটামল । অজস্র এন্টিবায়োটিকের বিষে একসময় পঁচে যায় তাদের কিডনী ।
আমার মা তেমনি একজন ।
আর আমার বাবার জীবন কেটেছে মাকে একের পর এক ডাক্তার দেখানোয় , আমাদের কেটেছে উত্কন্ঠায় । প্রতি রাতে প্রতি ক্ষণে মমতাময়ী আমাদের মাকে হারানোর অজানা শংকায় ।
ছোটোবেলার স্মৃতিগুলো নিয়ে তাই খেলা করিনা তেমন । ভয় হয় , আঁতকে উঠি অজান্তে ।
ডাক্তারের সিরিয়াল ধরতে ধরতে ক্লান্ত আমার বাবার একসময় স্বপ্ন জাগে ছেলেকে ডাক্তার বানাবে । আমারও অবশ্য ততদিনে স্বপ্ন গুছানো শেষ । একুশের বইমেলায় হাঁটতে হাঁটতে সাজিয়েছি স্বপ্ন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়বো । রোগ আর রোগী নামক অসহ্য বস্তু থেকে দুরে থাকবো একশ হাত , পড়ে থাকবো রবীন্দ্রনাথ অথবা শরত্বাবু নিয়ে ।
কিন্তু বাবার পীড়াপিড়িতে সেগুলো আজো স্বপ্নই থেকে গেলো ।
মেডিকেলে চান্স পাবার পরে আমার যখন মন খারাপ তখন বাবার চোখের কোনে থাকা জলের ঝিলিক সব ভুলিয়ে দেয় আমায় ।
বাড়ি ছাড়ার আগে বাবারা কত কিছু বলে - ঠিকমত খাবি , পড়বি আরো কত কি । কিন্তু আমার বাবা ?
ঢাকা ছাড়ার ট্রেনে তুলবার আগে আমায় চুমু দিয়ে বলে , "হাতের লেখা সুন্দর রাখিস ! আমার মত যেন কাউকে প্রেসক্রিপশন বুঝতে কষ্ট না হয় । আমাকেও যেন গালি খেতে না হয় তোর জন্য !"
বাবার সেই কথাগুলো আজও কানে বাজে ।
মেডিকেলের এসে বুঝেছি এখানকার পড়ালেখাই একটা ডাক্তারের অমন দাঁতভাঙ্গা হাতের লেখার জন্য দায়ী । এখন অবশ্য এটা অনেকের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন এভাবে না লিখলে ডাক্তার হওয়া যায়না ।
ওয়ার্ডক্লাসগুলোতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লিখতে গিয়ে আস্তে লিখেছি , অনর্গল বলতে থাকা স্যারের লেকচার আস্তে আস্তে তুলেছি । সব তুলতে না পারলে তুলিনাই ,পরীক্ষার খাতায় দু'লাইন কম লিখেছি তবু হাতের লেখা ঠিক রেখেছি ।
যাহোক ,আজ একজন স্যারের প্রেসক্রিপশন দেখে এত কথা মনে পড়লো । পাঁচবছরের মেডিকেল লাইফেও এমন দুর্বোধ্য লেখা দেখিনাই । অনুমান করেও পড়ার জোঁ নাই ।
মন চাচ্ছে প্রেসক্রিপশনটা স্যারের মুখে ছুড়ে মারি ।
হাহ ! এত বড় ডাক্তার হইছে অথচ সামান্য ওষুধের নামটাই একটু বুঝার মত করে লিখতে পারেনা ।
আফসোস :-(
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮