বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এ বছরও ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ফেলের হার হতাশাজনক পর্যায়ের । মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকে এত উচ্চ পাশের হার বা এত হাজার হাজার কখনোবা লাখো এ-প্লাসধারীদের ভর্তি পরীক্ষায় এত করুন অবস্থার হেতু কি ?
শিশুতোষ বুদ্ধিজীবি জাফর স্যারের কাঁধে হাত রেখে বলতে ইচ্ছে করে হয়ত অধিক চাপে আমাদের শিক্ষার্থীদের মগজে ভাজ পড়ে গেছে , বইয়ের ভারে মস্তক নুইয়ে গেছে , লৌহকঠিন প্রশ্নপত্রে মেধায় সাময়ীক মরচে পড়েছে । কিন্তু গোঁফ থাকিলেও বুদ্ধিজীবি হইতে না পারার তাগিদে এগুলান ভাবিতেও পারিলামনা ।
সৃজনশীলতা মানে কি ? মানে আগে প্রশ্ন হইতো “ঝন্টুর চরিত্র বিশ্লেষন কর” । এখন হয়- “ মন্টুর মত দেখিতে কিন্তু মন্টু না- তোমার বইয়ে পঠিত এমন একজনের চরিত্র বিশ্লেষন কর ।“
আর সৃজনশীল মেধা কি ? উত্তর- ঝোপ বুঝে কোপ মারিতে পারা । সেটা কিরুপ ?
ধরেন প্রশ্ন করা হলো “ফ্লোরিজেন মানে কি ?” ।
রনি লিখিল- ফ্লোরিজেন হইল উদ্ভিদের এমন এক ধরনের পুশ্চুলেটেড হরমোন যা ফুল ফোটাতে সাহায্য করে ।
মনি- ফ্লোরিজেন এক ধরনের পুশ্চুলেটেড হরমোন ।
জনি- ফ্লোরিজেন এক ধরনের উদ্ভিদ হরমোন ।
টনি- ফ্লোরিজেন এক ধরনের হরমোন ।
আপনি যত নাম্বারই পকেটে মজুদ রাখার অভিপ্রায় নিয়া খাতা কাটিতে যাননা কেন এই চারিজনকেই আপনি ন্যুনতম অথবা সর্বোচ্চ পুর্নমান ‘১’ করিয়া দিতে বাধ্য ।নাম্বার বিবেচনায় রনি-মনি-জনি-টনি একই মেসে থাকিলেও মেধার মানে কিন্তু সাত তলা আর গাছ তলা টাইপ । তাহলে বুঝা গেলো সৃজনশীলে নাম্বার ও মেধা পরস্পরের বীপ্রতীপ কোণ !
এখন , আপনাকে যদি বলা হয় এই চারজনের মধ্যে কে বেশি মুনাফাখোর পরিক্ষার্থী ? উত্তর অবশ্যই টনি । যদি আমাদের সময়ও সৃজনশীল ব্যাবস্থা থাকিত তবে নিঃসন্দেহে আমিও অধিক মুনাফাই প্রত্যাশা করিতাম !
আমাদের সময় যেমন ধমনী-শিরার পার্থক্য আসতো ৫ নাম্বারের জন্য । এখন আসে ২ নাম্বারের ‘খ’ তে । আমরা লিখিতাম/শিখিতাম ৮-১০টি । আর এখন ? নাম্বার বিবেচনায় ৫টি লিখাইতো মহানুভবতা !
তাহলে এই অধিক মুনাফাখোর হবার তাগিদ থাকাটায় দায় কার ? শিক্ষার্থীর নাকি ব্যাবস্থার ? আপনি যখন নাম্বার বন্টনে কৃপণতা করিবেন তখন মেধা বন্টনেও শিক্ষার্থীরা কৃপণ হইতে চাইবে- এটাইতো স্বাভাবিক ।
এই যে এখন আমাদের শব্দভুক টাকসমগ্র মন্ত্রিসাব আরো সৃজনশীল প্রশ্নের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন তাতে কি হইবে ? সময় স্বল্পতায় ও নাম্বার বিবেচনায় কোনো উত্তর পুর্নাংগ রুপে লিখিতে চাইবার ইচ্ছা থাকিলেও কম বিনিয়োগে অধিক ফলনের আশায় শিক্ষার্থীরা আরো সৃজনশীল মুনাফাখোর হইবে বা হইতে চাইবে-এটাই অনুমিত ! ভাগ্যিস কপালটা চ্যাপ্টা হইলেও ফাটা না । নইলে আবুল মাল সাব শিক্ষামন্ত্রি হইলে এই মুনাফাতেও ট্যাক্স বসায়া দিতেন !
যাহোক, রনি-জনি-মনি-টনিদের মেসে আবার যাওয়া যাক । দুই মাস আগে এই চার বন্ধু উচ্চ মাধ্যমিকে এ-প্লাস পাওয়ায় টাকা ভাগ করিয়া মিস্টি খাইলো । কিন্তু এখন রনি বাদে কারোরই মিস্টি খাবার রুচি নাই । এই যে এতকাল অধিক মিস্টি গলাধঃকরণে আজ তাহাদের মিস্টিতে অরুচি রোগ ধরিল তাহার দায় কার ? কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম । তবে কিরুপ ব্যাবস্থাপত্রে জনি-মনি-টনিদের অরুচি রোগ প্রতিরোধ করা যাইবে ?
টীকাঃ সেদিন রক্ত নিয়ে পড়াচ্ছিলাম । শুরু করবার আগে জিগাইলাম- রক্ত কি ? একজন বলিল- রক্ত পরীমনি অভিনীত সিনেমার নাম । হাসির ছলে বলা হলেও নাম্বার কিন্তু পুরো ৫ই জানুয়ারির ইলেকশন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৭