somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৌকাডুবি --[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র]

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলা সাহিত্য জগতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার পদচারণা বহুকাল আগে থেকে। তার লেখা সৃষ্টি গভীরভাবে আলোড়িত করে বাংলা ভাষাভাষীদের। তাঁর গল্প উপন্যাসগুলোর কাহিনী অবলম্বনে অনেক চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। ঠিক তেমনি তার লেখা একটি উপন্যাস নৌকাডুবি। মানুষের কাছে উপন্যাসটির গ্রহণযোগ্যতা ও ভাল লাগার কারণে চলচিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ চলচ্চিত্ররুপে সার্থক রুপ দান করেন।
▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬
মুভির নামঃ নৌকাডুবি
পরিচালকঃ ঋতুপর্ণ ঘোষ
অভিনয়ঃ যীশু সেনগুপ্ত, রাইমা সেন, রিয়া সেন, প্রসেনজিৎ
জেনরা ঃ Drama, Romance
Run Time: 2h 15m
Release Date: January 2011
Language: Bangali, Hindi
IMDB Rating: 7.3/10



░▒▓ কাহিনী সংক্ষেপঃ
রমেশ কলকাতা থেকে আইন পাশ করেছে। এখানকারই এক সমভ্রান্ত উকিল পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে এই পরিবারের মেয়ে হেমনলিনীর(নায়িকা) সাথে। হেমনলিনী এক রুচিশীল, স্বংস্কৃতিমনা, শিক্ষিত মেয়ে। তার গানের গলা খুব ভাল। মাতৃহীন এই মেয়েটিই হল তার বাবার একমাত্র কন্যা। রমেশের সাথে তার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। যে কোনসময় তাদের বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে বাড়ি থেকে রমেশের জরুরি সংবাদ আসে। বাড়ি গিয়ে জানতে পারে বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছে এক বিধবার মুর্খ মেয়ের সাথে। ঘটনার জটিলতায় সে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর তারা নৌকাযোগে বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা হয়। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে সবাই মারা যায়। নদীর কিনারে পড়ে থাকে সে এবং বৌ। বৌকে নিয়ে চলে আসে কলকাতায়। আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারলো যাকে সে বৌ মনে করে ঘরে এনেছে, সে তার বৌ নয়। অন্যের বিয়ে করা স্ত্রী। অথচ মেয়েটি এখনো তাকে স্বামী মনে করে সংসার করে চলছে। ব্যাপারটা মেয়েটাকে সে বলতেও পারছেনা। বললেই একটা ঝামেলা বেঁধে যাবে।



এদিকে হেমনলিনীর পরিবারের সাথে তার দেখা হলে সে বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানায় কিন্তু বিয়ের কথা চেপে যায়। কিছুদিন পর তারা অক্ষয়বাবুর(হেমনলিনীকে পছন্দ করে) মাধ্যমে রমেশের বিয়ের খবরটা জানতে পারে। বিষয়টা জানার পর হেমনলিনী খুবই মুষড়ে পড়ে। এই সুযোগে অক্ষয়বাবু হেমনলিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার ভাই অনেক জোরাজুরি করলেও শেষ পর্যন্ত সে বিয়েতে রাজী হয়নি।
বিয়ের খবরটা হেমনলিনী জেনে যাওয়ায় রমেশ বৌকে নিয়ে কলকাতা থেকে চলে যায়। এরপরের ঘটনাগুলো ক্লাইমেক্স, থ্রিল আর নাটকীয়তায় ভরা। এই নাটকীয়তা এবং রমেশ ও হেমনলিনীর সম্পর্কের শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানতে হলে দেখতে হবে মুভিটি।



╚»★ ব্যক্তিগত অনুভূতি ★«╝
•► বাংলা মুভি খুব একটা দেখা হতনা। রবীন্দ্রনাথের নাম দেখে মুভিটি দেখতে বসা। ঋতুপর্ণ ঘোষের কাজের সাথে তখনও পরিচিত হইনি। শুরুতেই একটি বাঙালী অভিজাত পরিবারের স্বংস্কৃতিমনা, সুন্দরী মেয়ের ভাললাগা, ভালবাসার গল্প, তাঁর কিন্নর কন্ঠের গান, চমৎকার চিত্রগ্রহণ ও ভাবগাম্ভীর্য সংলাপে একেবারে মজে গেলাম। একটি মুহুর্তের জন্যেও স্ক্রীন থেকে চোখ সরাতে পারলামনা। প্রতিটি সংলাপের অভিজাত, মার্জিত ও ভাবগাম্ভীর্য ভাব সৃষ্টি করেছে এক অন্যরকম আবহের। মুভির প্রত্যেকটি গান হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া। সবার অভিনয় ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং সাবলীল। উপমহাদেশের বাংলা চলচিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের দুই নাতনী, “রাইমা সেন ও রিয়া সেনের” সাথে এই মুভির মাধ্যমেই পরিচয়। ছবিটি আমার প্রত্যাশার মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যায়।
ছবির চরিত্রগুলোর অনুভূতি, তাদের একে অন্যকে বুঝার চেষ্টা সবই এক ছন্দময় ছন্দে তাল মিলিয়ে চলেছে । আর সবশেষে বলতে হয় ছবির এক সার্থক সমাপ্তি টেনেছেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ।



★চলচিত্র বিশ্লেষণ ★
•► গল্পের প্রয়োজনে ছবির পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের অভিনেতা- অভিনেত্রীদের বাছাই করা ,তাদের রুপসজ্জা , ছবির প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গা নির্ধারণ বিশেষ করে কাশী জায়গাটির দৃশ্যগুলোর এক একটা আগমন ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ। যীশু সেনগুপ্তের মত নতুনমুখের এমন দুর্দান্ত অভিনয় এবং সর্বপরি সকলের অসাধারণের অভিনয়ের পেছনের কারিগর ঋতুপর্ণ।
•► নৌকাডুবি সম্পর্কে একজন ক্রিটিকের মন্তব্য ছিল এরকম, “Noukadubi’s charm lies in the lingering aftertaste, the enduring pleasure in the pain.
•► অত্যন্ত সচেতনভাবে মুভিতে রবিন্দ্রসঙ্গিতের প্রয়োগ করেছেন এবং এর সৌন্দর্য ও শক্তিকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
•► সম্পর্কগুলোকে অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শব্দ সংযোজন ও সিনেমাটোগ্রাফি ছিল অসাধারণ।
▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬

»★মুভি সম্পর্কিত কিছু তথ্য★«
•► মুভিটির প্রথম ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়াম হয়েছিল ভারতের গোয়া’তে নভেম্বরের ২৪ তারিখ, ২০১০।
•► মুভিতে যে ঘটনাটি চিত্রায়িত হয়েছে তা ১৯২০ সালের প্রেক্ষাপটের।
•► রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মদিনকে উপলক্ষ করে মুভিটি মুক্তি দেওয়া হয় এবং ব্যাপক উদ্দিপনার সাথে তা উদযাপিত হয়।
এর পুর্বে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস অবলম্বনে ঋতুপর্ন ঘোষ ২০০৬ সালে চোখের বালি মুভিটি নির্মান করেন। যেটি ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল।
এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র।
•► মূল ছবিটি বাংলা হলেও এটি পরবর্তিতে হিন্দিতে ডাবিং করা হয়।
•► মুভিটির হিন্দি নাম “Kashmakash”
ট্রেলার দেখুন এখানে,



টরেন্ট ডাউনলোড করুন এখান থেকে
আর দেরী কেন, আজই দেখে ফেলুন অসাধারণ সৃষ্টিকর্মটি।

#এই রিভিউটি ফেসবুকের মুভি এন্ড সিরিজ এডিক্টেড গ্রুপে রিভিউ কন্টেস্টে প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×