নীলগঞ্জ হাই স্কুল নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি উপন্যাস আছে। এই উপন্যাসের পটভূমিও নীলগঞ্জ হাইস্কুলকে কেন্দ্র করে রচিত। উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেম, ফিকশন এবং কিছুটা রোমাঞ্চ। ফিকশন থাকলেও, একে পুরোপুরি ফিকশন ধর্মী বই বলা চলে না। স্বাভাবিক ঘটনা প্রবাহের সাথেই সামান্য পরিমাণে ফিকশন মিশ্রিত ছিল।
“নি” বিশেষশ্রেণীর ক্ষমতাধর কিছু মানুষ। অনেক বছর পর পর প্রকৃতিতে একজন “নি” আসে। প্রকৃতি এদের অসীম সৃষ্টিশীল ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছে। উপন্যাসের মুল চরিত্র “মুবিনুর” একজন “নী”। তবে সে এই বিষয়ে অবগত নয়। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে কিছু বুড়ো মানুষকে দেখতে পায়, যাদের কথা সে কিছুই বুঝে না।
নীলগঞ্জ হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক মুবিনুর। বি.এস.সি এবং এম.এস.সি পাশ সিরিয়াস ধরনের মানুষ। মুবিনুর গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে উঠে এসেছে নীলগঞ্জে। এখানে পরিত্যক্তপ্রায় একটা বাড়িতে ভাড়া করে থাকেন। বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে অনেকদিনের শখের একটা টেলিস্কোপ কিনেছেন। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে নদী। মুবিনুর প্রকৃতি প্রেমী মানুষ। নদীতে ভেসে বেড়ানো আর মাঝ নদীতে বসে জোছনা দেখার জন্য সে একটি নৌকাও কিনেছেন।
৮ বছর ধরে নীলগঞ্জে আছেন মুবিনুর। অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ মুবিনুর কারো সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। এখানকার লোকজন তাকে বেশ শ্রদ্ধা করে। ভেতরে ভেতরে তারা তাকে “গণিতের ডুবোজাহাজ” বলে ডাকে।
বিকেলে মুবিনুর নীলগঞ্জের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও ধনী ব্যাক্তি আফজাল সাহেবের মেয়ে “রূপাকে” পড়াতে যান। অসম্ভব সুন্দর, রূপবতী মেয়ে রুপা, এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এই মেয়ের অনেক কিছুই মুবিনুর বুঝতে পারেন না। মেয়েতি অসম্ভব বুদ্ধিমতি তবে পড়াশুনায় মন নেই। মাঝে মাঝে সে পড়া বন্ধ করে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অদ্ভুত স্বভাবের এই স্যারটাকে রূপার ভাল লাগে। প্রায় সময়ই তিনি অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবেন। রূপা অপলক স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয় এই মানুষটার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও মন ভরবেনা।
নীলগঞ্জ হাইস্কুলের জন্য “ফুড ফর ওয়ার্ক” প্রজেক্টে সরকারীভাবে ১০ বস্তা গম দেয়া হয়। হেডমাস্টার হাফিজুল কবির মুবিনুরকে দিয়ে সাইন করিয়ে গম আনেন। মূলত গম বরাদ্ধ হয়েছিল ১০০ বস্তা। বাকীগুলা উপজেলা অফিসের লোকজন খালাস করে দিয়েছে। উপর থেকে এই বিষয়ে খোঁজ করা হলে হেডমাস্টার মুবিনুরকে ফাসিয়ে দেয়……
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩ বলে ২ রান নিতে না পারার পরাজয় ভুলার জন্য এই উপন্যাস পড়া শুরু করলাম।১০০ পৃষ্ঠার একটা বই। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস হলে যা হয়, এক বসায় পড়া শেষ। মুবিন চরিত্রটিকে বেশ ভাল লেগেছে। একটু হেঁয়ালি, ভাবুক, প্রকৃতিপ্রেমী। রূপা চরিত্রটিও পছন্দের ছিল। উপন্যাসে একটা রোমাঞ্চকর আবেশের সৃষ্টি করেছে। আমার তো প্রায় প্রেমে পড়ি পড়ি অবস্থা!! নীলগঞ্জ হাইস্কুল নিয়ে উপন্যাসগুলো অনেক ভাল লাগে। পড়তে পড়তে নিজের স্কুল জীবনে হারিয়ে যাই। পুরো উপন্যাস জুড়ে একটা মোহনীয় শক্তি আছে। শেষ না করে উঠতে মন চাইবে না। সবশেষে বলতে চাই, এটি একটি গুড রিড উপন্যাস।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮