somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Land Of Mine. শক্তিশালী ও নান্দনিক উপস্থাপনায় যুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহতার একটি গল্প।

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৭ দশকেরও বেশি সময় পুর্বে। এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কম সিনেমা তৈরী হয়নি। মনে হতে পারে এই দীর্ঘসময়ে যুদ্ধনিয়ে বলা সবগুলো গল্পই শ্রুত হয়েছে। কিন্তু পরিচালক “মার্টিন জ্যান্ডভ্লিট” তার “Land of Mine” মুভিতে চিত্রায়ন করলেন সম্পুর্ণ নতুন এক গল্প।

১৯৪৫ সালের ৮মে, হিটলারের আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধ শেষ হলেও এর ভয়াবহ পরিণতি স্থায়ী ছিল দীর্ঘদিন। ইউরোপের দেশগুলো যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনঃনির্মাণে ব্যস্ত, জার্মনরা তখন কোনঠাসা সবদিক থেকে। আশপাশের দেশগুলোতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গণহারে আটক হতে থাকে জার্মান বাহিনী।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে ২০ লক্ষেরও বেশি “ল্যান্ড মাইন” পুঁতে ছিল হিটলার বাহিনী। যুদ্ধ শেষে আটক বন্দীদের দিয়েই মাইনগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। দুই হাজারেরও বেশি যুদ্ধবন্দীকে একাজে নিয়োগ করা হয়েছিল। যাদের অধিকাংশই জীবিত ফেরত আসতে পারেনি।



সমুদ্র উপকূল মাইন মুক্ত করার দ্বায়িত্ব পড়ে বদমেজাজি ড্যানিশ সার্জেন্ট “রাসমুসেনের” ওপর। তার কমান্ডে পাঠানো হয় ১৪জন জার্মান যুদ্ধবন্দী। সৈকতের ৪৫,০০০ মাইন নিষ্ক্রিয় করার কষ্টসাধ্য ও প্রাণঘাতী কাজে নিযুক্ত করা হয় তাদের। রাসমুসেন প্রতিশ্রুতি দেন, ৩ মাসের মধ্যে সবমাইন নিষ্ক্রিয় করে সৈকত নিরাপদ করতে পারলে দেশে ফেরত যেতে পারবে তারা।

জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে দেশে ফেরার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় মাইন তোলায় লেগে যায় ১৪ কিশোর। যাদের কারোরই বয়স এখনো ২০ পেরোয়নি। যুদ্ধের শেষদিকে সৈন্যের ঘাটতি মেটাতে জোরপুর্বক পাঠানো হয় তাদের। যাদের অধিকাংশই ইতঃপূর্বে মাইন দেখেনি পর্যন্ত।



টানা দু’দিন সকাল-সন্ধ্যা মাইন তুলে চলছে তারা। বালিতে শুয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখে কোথায় মাইন পাতা। তারপর হেডের প্যাচ খুলে নিষ্ক্রিয় করে এক একটি মাইন। অথচ খাবার দূরে থাক, এখনপর্যন্ত একফোঁটা পানি জুটেনি ভাগ্যে। সার্জেন্ট রাসমুসেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। এরা না খেয়ে মরুক কিংবা বিস্ফোরিত হয়ে মরুক; তার কিছু যায় আসে না।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাবার সংকট চারদিকে। চুরি করে পশুর খাবার খেয়ে পেটের অসুখ বাঁধায় সবাই। মাইনের ওপর বমি করে বিস্ফোরিত হয়ে মরল একজন। সামান্য অসতর্কতায় বিস্ফোরিত হল আরো ক’জন। মৃত্যুভয় ছেয়ে ফেলে চারপাশ থেকে। বহুদিনের লালিত বাড়ি ফেরার স্বপ্নটা ফিকে হয়ে আসে। আস্থা রাখতে পারেনা আর সার্জেন্টের দেয়া প্রতিশ্রুতিতে। সবগুলো মাইন তোলা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে তো…?? এই প্রশ্ন হানা দেয় বারংবার।



মুভিতে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের ফলস্বরুপ কিছু কিশোর জীবনের করুণ পরণতি। জোরকরে যুদ্ধে পাঠানো হয় তাদের। অথচ কথা ছিল এই সময়টায় স্কুল কিংবা কলেজে থাকার। শুধুমাত্র জার্মানিতে জন্ম বলে, প্রবল প্রতিহিংসার রোষানলে পড়তে হচ্ছে তাদের। অথচ মূল যুদ্ধের সাথে ওদের কোন সম্পর্ক ছিল না।

যুদ্ধের সময় এমন লাখো মানুষকে ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। সেসব হাজারো গল্পের মাঝে এটিও একটি গল্প মাত্র। মূল যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা হয়ত উপলব্ধি করতে পারবোনা। কিন্তু এ গল্পগুলোর মধ্যদিয়ে একটু হলেও আঁচ করতে পারি।

নিজ দেশ, মাটি ও এর মানুষের জন্য আজন্ম টান মানুষের। শুধু দেশে ফেরার জন্য কত আশায় বুক বাঁধতে পারে মানুষ… ভাবা যায়!!
Land Of Mine এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক “অভিনয়”। সার্জেন্ট চরিত্রে “রোনাল্ড মোলার” করেছেন দুর্দান্ত অভিনয়। সৈনিক চরিত্রের কিশোরগুলোও নিজের পুরোটা ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেনি। ফুটফুটে সুন্দর এক একটা ছেলে; যেন জোছনা মাখামাখি হয়ে আছে শরীরে; দেখে বড় মায়া হয়!!



ডেনমার্ক পশ্চিম উপকুলের নর্থ-সী ন্যাচার পার্ক, চারণভূমি আর সুমুদ্র তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্যে চিত্রায়িত পুরো সিনেমাটি। ক্যামেরার কাজ ছিল প্রশংসনীয়। আধুনিক যুগে নির্মিত হলেও যুদ্ধ মুহুর্তের আবেশ ঠিকই রয়েছে এতে। চরিত্রগুলোর ক্রোধ আর মানসিক অবস্থা জন্ম দেয় বাস্তব অনুভূতির। কিছু কিছু দৃশ্যে দেখে মনে হয় বাস্তবেই যেন অবলোকন করছি সবকিছু।

ইউরোপিয়ান মুভি বিশেষত্ব হল এর নিজস্ব কালার টোন। কালার টোনের কারণেই মুভিগুলোর প্রতি বাড়তি একটা ভাললাগা কাজ করে। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা ও নির্মাণশৈলী মূর্ত করেছে সিনেমার মূল থিম। এন্ডিংটা পূর্বানুমিত মনে হলেও, সাসপেন্স শেষ পর্যন্ত স্ক্রিনে ধরে রাখবে আপনাকে।

জার্মান ও ড্যানিশ ভাষার সিনেমাটি মুক্তি পায় গতবছর, ৩ ডিসেম্বর। রোটেন টমেটোতে ৮৯% ফ্রেশ এবং আইএমডিতে ৭.৮ পেয়েছে হিস্টোরি, ওয়ার জনরার মুভিটি। এখন পর্যন্ত বাগীয়ে নিয়েছে ১৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং নমিনেশন পেয়েছে ১৪টি তে। ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের।

গানুল ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://goo.gl/Xbmx0d

ট্রেলার লিঙ্কঃ

https://www.youtube.com/watch?v=boLjulS1wwU

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×