বাসার সবাই বলে আমি নাকি আইলসা :O যদিও আমি সপ্তাহে ৫দিন অফিস করি । নিজের কাপড় নিজে ধুই, কাপড় লন্ড্রীতে না দিয়ে নিজের আয়রন করার অভ্যাস অনেক দিনের। সাপ্তাহিক ছুটি পেলে একটু বেশি ঘুমাই , সারাদিন বিছানায় শুয়ে অজগরের মত মোচরা-মোচরি করি তাই হয়ত আমার এই বিশেষন । যাউকগা ব্যাপার না। যাইহোক এইরকম এমনি এক শুক্রবারে সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ভোর ১২টায় । গোসল সেরে নামাজ পরে এসে দুটা খেলাম । কাজকর্ম যেহেতু কিছু নাই তাই আমার অভ্যাস মত গা'টা একটু এলিয়ে দিলাম । আবার ঘুম । শান্তি শান্তি শান্তি...
ঘুম ভাংলো সন্ধ্যা ৭ টায় । এপাশ-ওপাশ করছি এমন সময় জনৈকের ফোনঃ
জনৈকঃ কি করিস?
আমিঃ কি আর করুম, কাম কাজ নাই। ঘুম থেকে উঠলাম।
জনৈকঃ শরীর ভালো?
আমিঃ হু।
জনৈকঃ গুড । তাইলে মহাখালী চলে আয় । আড্ডা দিমু ।
আমিঃ নাহ, ইচ্ছা করতাছেনা
জনৈকঃ রঙ্গ করিস না ।
আমিঃ কি রঙ্গ করলাম !!
জনৈকঃ তাইলে এক কাম কর। আড্ডা দিতে আসা লাগবো না। ব্যাগ গুছা। ভাত খা । রাত ৯টার মধ্যে মহাখালী থাকবি।
আমিঃ (আকাশ থেকে পড়ে) কেন? কই যামু?
জনৈকঃ ক্রেজী ট্রাভেলার'রা এত প্রশ্ন করেনা ।
আমিঃ আরে...বাসায় তো কইয়া যাইতে হইবো ।
জনৈকঃ ক যে রংপুর যাবি
আমিঃ :-D ওকে, আইতাছি । আর কে কে যাইবো?
জনৈকঃ তুই যেহেতু আইতাছস তারমানে আপাতত তুই যাইতাছস, আর কে যাইবো তা তো জানিনা ।
আমিঃ রঙ্গ কর?
জনৈকঃ আমিও যামু, চিন্তা নিস না। আর যার যাওয়ার সে যাবে। তোর সমস্যা কি? আইতে কইছি, আয়।
আমিঃ ওকে। দেখা হইতেছে তাইলে রাত ৯টায়।
আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে ব্যাগ হাল্কা গুছাইলাম । আম্মাকে বল্লামঃ ভাত দাও । একটু বাইরে যাবো। মাঃ কই যাবি? বললাম রংপুর । সে একটু থতমত খাইলো । সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আবার জিঞ্জাসা করলো কেন যাবি ? আমি বললামঃ কেন আবার, ঘুরতে!!! তার চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে "আমার হয়তো প্রেম বিষয়ক কিছু আছে বা মাইয়া দেখতে যাইতেছি তাই জরুরী ভ্রমন " সে ভাবতে থাকুক, আমি ব্যাগটা পিঠে গলিয়ে বের হয়ে এলাম বাসা থেকে ।
যাইহোক খাওয়া-দাওয়া করে চলে গেলাম মহাখালী । এসে দেখি আমাদের সাথে জামিল ভাই ও এসে যোগ দিয়েছে। বউ বাসায় না থাকায় একটু ব্যাচেলর লাইফের চার্ম নিতে চায় আর কি ব্যাপার না। ৩জন রওনা দিলাম। মিরপুরের আরেকজনকে বলে দিলাম ট্যেকনিকাল থাকতে । তাকেও পিক করে চলে গেলাম গাবতলী। কয়েক কাউন্টার ঘুড়াঘুড়ি করে অনেক কষ্টে এক বাসে শেষের দিকে ম্যানেজ করে ফেললাম ৪টা সিট । শুরু হলো অনেক কাঙ্খিত রংপুর যাত্রা। কারন এর আগে আরও ৪/৫বার প্ল্যান করে যাওয়া হয়নি। একবার তো দিনাজপুর থেকে রংপুরের উদ্দ্যেশে বাসে উঠে ৩০কিলো যাওয়ার পরে বাস থেকে নেমে গেছিলাম
ভোর বেলা নামলাম রংপুরে। বিভাগীয় শহর হিসাবে অনেক মরা মরা লাগছে । ভরপেট নাস্তা করে শুরু হয়ে গেল শহরের এমাথা থেকে ওমাথা টো-টো করা । তারই কিছু স্থিরচিত্র...
শুরুকরেছিলাম কারমাইকেল কলেজ দিয়ে, শেষ করেছি রংপুরের ভিন্নজগতে।
এখানে যখন পৌছাই সুর্যি মামা তখন মাত্র পূব আকাশে উঁকি দিয়েছে
ফলক
ছায়া সুনিবিড়...
ঐখানকার রিক্সাওয়ারাও শালা শহর ভালো মত চিনেনা । আমাদেরকে পথ চিনিয়ে চিনিয়ে চলতে হইছে । ভোরবেলা । পেট চো চো করছে । গেলাম হোটেল এ । খেতে বসেছি , পাশে এসে দেখি আমাদের ভাড়া করা রিক্সার এক চালক ও এসে বসেছে । যদিও ততখনে রিক্সা ছেড়ে দিয়েছি । তার কথা হলো সে আমাদের সাথে নাস্তা করবে আর নাস্তার বিল আমাদের দিতে হবে কইলাম ভাড়া তো ৮০টাকার জায়গায় ১০০টাকা দিলাম । নিজে নাস্তা কিনা খাও । কয় আমাগো দেশে আইছেন, খাওয়াইবেন না যাহোক পরে সে আমাদের সাথেই নাস্তা করেছিলো ও আমরাই তার বিল দিয়েছিলাম ।
পেট শান্ত । কিন্তু চোখের ক্ষুদা শুরু হইছে চোখের ক্ষুদা মিটাতে যাত্রা শুরু করলাম তাজ হাটের দিকে ।
সামনে থেকে তাজহাট প্যালেস
ইতিহাস
সেপিয়া বিষয়ক কারিগরি
পথিমধ্যে থমকে দাড়িয়েছিলাম সিপাহী বিপ্লবের এক সৈনিকের সমাধির সামনে । পরে বাঙ্গালী নারীর মুক্তির অগ্রদুত বেগম রোকেয়া শাখাওয়াৎ এর স্মৃতি বিজরিত পায়রাবন্দেও একটা পাক খেয়ে আসলাম ।
সিপাহী বিপ্লবের নেরাত সমাধী
চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি না পরে ধরা
কারুকার্য (কাঁচের উপর)
কারুকার্য (বারান্দার গ্রীলে)
আকাশের কালার টা সেইইই না (নিজেই মুগ্ধ)
আলো-ছায়ার লুকোচুরি আমাদের জীবনের মত...
বেগম রোকেয়ার ম্যূরাল
হংস মিথুন
ভিন্নজগতে এই একটা ভাস্কর্য শুধু চোখে লেগেছে (ভাস্কর মাহতাব)
সারাদিন মুক্ত স্বাধীনভাবে টোটো ও একটি আনন্দঘন সফল ট্যুর অতঃপর রাতের বাসে আবার ইট-পাথরের নির্দয় ধুলিময় শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯