তারিখটা ঠিক মনে নেই । গতবছরের ডিসেম্বরের ১০/১১ তারিখ হবে । যথারীতি রোজা, ঈদ পার করে ট্যূরের অভাবে মাথা আউলা । আর অন্যদিকে অফিসে আরেক টাক্লার যন্ত্রনায় জীবন অস্থির ও অতিষ্ট । বিক্ষিপ্ত মন একমাত্র উত্তাল সমুদ্রই শান্ত করতে পারে । যেই ভাবা সেই কাজ । সবাইকে ফোন দিলাম । ৩জনকে পাওয়া গেল । লুমন, লুমিত আর বক্লু তিনটাই আদর করে ভালোবাসার ডাকা নাম আর সাথে ওদের গুরু আমি তো আছিই
সেদিন সম্ভবত বুধবার ছিলো । লুমন হলো সব ট্যুরের আগে লাফায় এবং সবার শেষে এসে বলে অমুক সমস্যা, মামা বিদেশ থেকে আসছে, নানী বিদেশ যাবে মোদ্দাকথা সে যেতে পারবেনা তাই সব ভেবে চিনতে আমি ওকেই সব দায়িত্ব দিলাম টিকেট, হোটেল, জাহাজ সব ম্যানেজ করার । বৃহস্পতিবার দুপুরে সে ফোন দিল "সব ম্যানেজ"! আমিতো টাস্কিত ! কয় কি বেটা !! ও বল্লোঃ "রাত নয়টায় ফকিরাপুল চলে আসবি, শ্যামলীতে ডিরেক্ট টেকনাফ"।
লাঞ্চের পর হাতের কাজ সব তাড়াহুড়া করে শেষ করে ফেললাম । রবিবার ছুটির এ্যাপ্লাই করলাম ১দিনের প্ল্যানে সব এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে কিছু চিন্তা করার সময় পাইনি বা সময় নাই । যাহোক বাসায় এসে বললাম রাতে সেন্টমার্টিন যাচ্ছি, একটু পরেই বের হবো । জলদি খাওয়া দিতে । আমার এরকম হুটহাট ব্যাগ গুছিয়ে বের হওয়া এটাই প্রথম না সো আম্মাও তেমন একটা উচ্চবাচ্য করলোনা ।
ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম বাস কাউন্টারে । সবাইকে ফোন দিতে লাগ্লাম । একে একে সব এসে হাজির । যাক এইবার তাহলে লুমন পল্টি খায়নাই । ট্যুর তাহলে সত্যিই হচ্ছে । ফ্যান্টাস্টিক ফোর ইজ রেডী ফর কোরাল আইল্যান্ড
বাসে ঊঠে যথারীতি বক্লু ঘুমাতে শুরু করলো । ওকে থাপড়াইয়া জিগাইলাম ওই তুই কি ঘুমাচ্ছস !! হা হা ।। এখানে বলে রাখি আমি লুমন আর বক্লু তিনজন (3 idiots) জীবনের স্বর্নযুগ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ৫ বছর মেস লাইফ একসাথে কাটিয়েছি । এরমধ্যে বক্লু ছিলো আবার আমার রুমমেট ৫বছরের অধিকারের বলে ঘুমানোর মাঝে থাপ্পড় তো মারাই যায় গল্পে গল্পে ফিরে গেলাম সেই সময়ে আহা...কত মধুর ই না ছিল সেই সময়গুলো । এখনও বা কম কিসে । ১০ বছর ধরে সেই একই বন্ধনে আবদ্ধ আমরা ।।
কুমিল্লায় যাত্রা বিরতিতে হালকা খেয়ে সব একটু ঘুম দিলাম সবাই । ভোরের দিকে ঘুম ভাংলো । ঢাকা থেকেই বাস খুব ঢিমেতালে
চলছিলো । তাই আমরা মোটামুটি একমত প্ল্যান B তে শিফট করার যদি টেকনাফ যেয়ে দেখি জাহাজ ছেড়ে গেছে তাহলে একদিন টেকনাফে কাটিয়ে কক্সবাজারে এসে শুয়ে থাকবো। মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত কক্সবাজারের আগে টেকনাফের রাস্তায় ঢুকার আগেই বাসের চাকা পাংচার হলো । ঘড়ির কাঁটা ৭ টা ছুঁই ছুঁই করছে । আমরা সবাই অধৈর্্য্য হয়ে গেলাম । বাসের কারো কোন বিকার নাই কারন ওই বাসে আমরা ৪জনই শুধু সেন্টমার্টিন যাচ্ছি । বাকীরা সবাই টেকনাফের যাত্রী । বাস কখন গেল তাতে তাদের বিশেষ কোন মাথা ব্যাথা নাই যাহোক মূল্যবান ৩০মিনিট সময় বের হয়ে গেল ।
আমরা শুরু করলাম চালককে তাগাদা দেয়ার । উনিও যথা সম্ভব সাবধানে দ্রুত বাস চালনা শুরু করলেন । আমাদের হাত-পা ঘামতে শুরু করেছে অলরেডি । মেরুদন্ড শিরশির করছে ।
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা!
এরপর শুরু হলো লুমনের কেরামতি । কক্সবাজারে ওর এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে সে জাহাজের টিকেট, সেন্টমার্টিনে হোটেল রুম বুকিং সব ম্যানেজ করছে । সে ওই লোককে ফোন করে বলল যে আমাদের এই অবস্থা । আমাদের পৌঁছাতে দেরী হতে পারে, বাসের চাকা পাংচার হয়েছিলো। আমরা তাকে ফোন
করি । সে জাহাজে ফোন করে । আবার আমাদের ফোন করে বলে আপনারা যান আস্তে আস্তে । জাহাজ দেরী করবে আমরা আশ্বস্ত হই ।
সেন্টমার্টিনের জাহাজ যেখানে থাকে সেখানে পৌছানোর আগের রাস্তাটা বেশ উচু । আমাদের বাস যখন ওই পাহাড়ের উপর উঠলো তখন দেখলাম ২টা জাহাজ নদীর মাঝখানে কি যে ভয়ঙ্কর খারাপ লাগছিলো আমাদের তখন যে এতদুর এসে জাহাজ মিস করলাম
আগামী পর্বে সমাপ্ত...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৫৯