somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যবসা যেভাবে চলে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সফটওয়ারের ব্যবসা চালানোটা অন্য ব্যবসার থেকে একটু আলাদা। ওপরতলার সফটওয়ারের মূল ব্যবসা মূলত দুভাগে ভাগ করা যায়। একটা সেবা-ভিত্তিক বা সার্ভিস ও কনসাল্টেন্সি ওরিয়েন্টেড - যেটা মূলত করে থাকে আই-বি-এম, ক্যাপজেমিনাই, অ্যাক্সেঞ্চার বা টি-সি-এস। আরেকটা হল দ্রব্য-ভিত্তিক বা প্রোডাক্ট ওরিয়েন্টেড - যেমন মাইক্রোসফট, ওর‌্যাকল, গুগল।

ভারতে মূলত প্রথম ধরণের ব্যবসা বেশী করে চলে, কারণ এই ব্যবসার জন্য দরকার পড়ে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক - যাদের মান খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বা নতুন কোনো অভিনব কাজও তাদের করতে হয় না। এতে কোম্পানী কনট্রাক্ট বা চুক্তি করে তার গ্রাহক কোম্পানী বা ব্যক্তির সাথে সার্ভিসের ব্যাপারে। ধরা যাক এ-বি-এন আম্রো ব্যাঙ্ক (হল্যান্ডের একটি নামকরা ব্যাঙ্ক) টি-সি-এস এর সাথে চুক্তি করল যে আগামী পাঁচ বছর তাদের কম্পিউটার সংক্রান্ত সার্ভিস দেবার জন্য। এর মধ্যে আছে কোনো সমস্যা এলে সমাধান, কিছু টুকরো আপগ্রেড বা ইন্সটলেশন, নতুন সেন্টারের সবকিছু সেটাআপ করে দেওয়া ইত্যাদি কাজ। আবার অনেক সময় টুকরো কাজের ভিত্তিতেও চুক্তি হয়। চুক্তিমত ঘন্টাপিছু টাকা দেওয়া হয় কোম্পানীকে। যেমন ধরুন, মাথাপিছু ঘন্টায় ৪৫ ডলার দেয় এ-বি-এন আম্রো। এদের মধ্যে কিছু লোকজনে কোম্পানীর সাইটে বসে থাকে - সরাসরি সাহায্য দেবার জন্য। আর কিছু লোকে ব্যাকএণ্ডে বসে সাপোর্ট দেয়। এই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকজন যথাক্রমে অনসাইট টিম আর অফশোর টিম বলে। বেশী বেশী ছেলে অফশোরে রেখে কাজ করাতে পারলে কোম্পানীর মুনাফা বাড়ে। কিন্তু অনসাইটে থাকলে টাকা বেশী মেলে বলে (টি-সি-এস মাসে ৩২০০ ডলার দেয় আমেরিকায়), সকলে অনসাইটে যেতে চায়। এই দুপক্ষকে সামাল দিয়ে মোটামুটি ৩০-৭০ থেকে ১০-৯০ অনুপাতে লোকজন রেখে কাজ চালানো হয়।

এইখানে আরেকটা মজার কনসেপ্ট আছে - সেটা হল বেঞ্চ। এদের ভূমিকা অনেকটা রিজার্ভ ফুটবলার বা আরো ভাল বললে রিজার্ভ পুলিশবাহিনীর মত। এসব সার্ভিস কোম্পানীতে অনেক লোকজন আছে যারা শুধু কাজ না করে সই করেই মাইনে পায়। মূলত এক প্রোজেক্টের শেষে আরেক প্রোজেক্টের শুরুতে এরকম ঘটনা ঘটে। অলাভজনক হলেও সব কোম্পানী বেঞ্চে এরকম কিছু কর্মীকে রাখতে চায়। কারণ, নতুন প্রোজেক্ট ধরার সময় গ্রাহককে বোঝানো হয় যে তাদের কর্মীর কোনো অভাব পড়বে না - এই বেঞ্চের কর্মীদেরই সরাসরি কাজে লাগানো যাবে সহজে।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ধরনের কোম্পানীর কথায়। প্রোডাক্ট কোম্পানী উলটোভাবে কাজটা করে। এরা আগে কাজ করে, তারপরে সে জিনিস বেচে মুনাফা অর্জন করে। প্রোডাক্টের ঝুঁকি বেশী, তাই খুব অভিনব কিছু না বের হলে এই বাজারে টিঁকে থাকা দুষ্কর। প্রোডাক্ট কোম্পানী উঠে যাবার সম্ভাবনাও তাই অনেক বেশী। উদাহরণ দেওয়া যায় মাইক্রোসফট আর গুগলের। মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম - যা ঘরে ঘরে কম্পিউটার পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে। এর পরে একে একে এনেছে মাইক্রোসফট অফিস আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। গুগল বাজার ধরেছে তাদের যুগান্তকারী সার্চ-এর সাইট দিয়ে। এ ব্যাপারে বলে রাখা ভাল, ওর্যা কল বা মাইক্রোসফটের মুনাফা আসে মূলত প্রোডাক্টের লাইসেন্স বেচে - মানে আপনি এম-এস অফিস কিনলেন পয়সা পেল মাইক্রোসফট। কিন্তু গুগল মুনাফা করে অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সে আরেকটা ব্যবসার উপায়। আপনার সাইটে বেশী বেশী লোকে আসে বলে আপনার সাইটের বিজ্ঞাপন বেশী হারে সবার চোখে পড়বে। আর সেই বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢুকে জিনিস কিনলে তার লভ্যাংশ পাবে গুগল। ভারতে বিশেষ একটা প্রোডাক্ট কোম্পানী নেই, তবে আই-ফ্লেক্স বলে একটি কোম্পানী সম্প্রতি নাম করেছে।

একটা ব্যাপার এখানে বুঝে নেওয়া যায় যে আপনি যখন প্রথম প্রোডাক্ট তৈরী করতে বসেন, তখন আপনি জানেন না যে জিনিসটা চলবে কিনা। আর আপনার অর্থ-সংস্থানও করতে হবে সেই সময়ের জন্য। তাহলে কি ভাবে প্রথম প্রোডাক্ট তৈরী হয়? এটার মধ্যেও আছে একটা ব্যবসার সুন্দর মারপ্যাঁচ। কিছু কিছু ব্যক্তি বা সংস্থা আছে যারা শুধু মাত্র এইরকম ব্যবসায় টাকা খাটিয়েই কোটিপতি হয়ে গেছেন - এদের বলে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বা সংক্ষেপে ভিসি। ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম -
১) এক উদ্ভাবক আইডিয়া বা প্ল্যান করল কোনো নতুন প্রোডাক্টের - ধরা যাক সে কপর্দকশূন্য।
২) সেই আইডিয়া নিয়ে সে গেল কোনো ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট-এর কাছে।
৩) ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট তাকে জানালো যে সে এই আইডিয়া থেকে বাস্তবায়িত করে প্রোডাক্ট বানানোর জন্য টাকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু বিনিময়ে প্রস্তাবিত কোম্পানীর ৫০ শতাংশ মালিকানা দিতে হবে।
৪) দরাদরির পরে অবশেষে উভয়েই রাজী হল টাকার পরিমাণ আর মালিকানার শতাংশে।
৫) প্রোডাক্টের কাজ শুরু হল।
৬) প্রোডাক্টের প্রথম ভার্সন বাজারে এল।
এখানে বলাই বাহুল্য যে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টকে যেমন ভাল বাজার বুঝতে হয়, তেমনই যে বিষয়ের প্রোডাক্টটি - সেই ক্ষেত্রেও তার জ্ঞান থাকা দরকার। আর প্রোডাক্ট একবার বাজারজাত হলে অনেকসময় কোম্পানীটাকে বেচে দিয়ে ভিসি আর আর উদ্ভাবক টাকা ভাগাভাগি করে নেন। অনেক সময় শেয়ার মার্কেটে কোম্পানীর কিছু অংশ বেচে টাকা তুলে আরো বড় করে ব্যবসা শুরু করেন। ওয়ারেন বাফেট এরকমই এক সফল ভিসি, যিনি এককালে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্পদের অধিকারী ছিলেন। ভারতে ভিসিদের লগ্নির পরিমাণ সম্প্রতি ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

এবারে সবশেষে আসা যাক কিছু নিচুতলার কথায়। ব্যবসা সবাই যখন করছে তখন নিচুতলার সাইবারক্যাফে-রাই বা বাদ যাবে কেন? ব্যক্তিগত সাইবারক্যাফে শুরু হয় সাধারণত বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ফেলে দেওয়া কম্পিউটার সুলভে কিনে নিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে গ্রাহককে ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে টাকা আয় করে বলে মনে হলেও এদের মূল আয়ের উতস কিন্তু অন্য জায়গায়। এখানে সাইবারক্যাফে থেকে রাতের বেলায় চলে ডাটা এন্ট্রির আর কনটেন্ট ভরার কাজ। ধরা যাক কোনো এক ব্যাঙ্কের অজস্র তথ্য কাগজের ফাইলবন্দী হয়ে আছে। কিন্তু তারাও প্রতিযোগিতার বাজারে সব কিছু ইন্টারনেটে তুলতে চায়, ডেটাবেস বানিয়ে তা থেকে সহজে তথ্য আদান-প্রদান করতে চায়। তারা শরণাপন্ন হয় এই সাইবারক্যাফেগুলোর। এরা রাতের বেলায় ওই ফাইল থেকে ডেটা পড়ে অনলাইনে তুলে দেয়। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে স্ক্যান করে কোনো বিশেষ সফটওয়ারের সাহায্যে সেগুলো পড়ার ব্যবস্থাও হচ্ছে, কিন্তু কম মূল্যে ম্যানুয়াল আর রিপিটেটিভ কাজ করে সহজে মুনাফা লাভ করে থাকে সাইবারক্যাফেগুলো।

অনেক কথা লিখে ফেললাম। জানিনা কতটা বোঝাতে পারলাম। তবে এই ব্যবসা চালানো ব্যাপারটা যতটা সোজা বলে বাইরে থেকে মনে হয় ততটা সোজা নয়। সবথেকে বড় সমস্যা হল কর্মীদের নিয়ে। অখুশী হলেই তারা ছেড়ে অন্য কোম্পানীতে যোগদান করবে। তাদের খুশী করে আটকে রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকে। একজন কর্মী ছেড়ে গেলে তার শূন্যস্থান পূরণ করা দুঃসাধ্য। কোম্পানীর মুনাফা অনেকসময়েই নির্ভর করে কি ধরণের কর্মীকে কোম্পানী কাজে লাগাতে পেরেছে তার ওপর। আর কর্মীদের ছলে-বলে-কৌশলে টেনে ধরে রাখাই একটা ব্যবসার খেলা - বেড়াল-ইঁদুরের খেলার মত। খেলাটা কিন্তু বেশ মজার ...

সাথে দেখুন -
বিশ্বের সবথেকে বড় সফটওয়ার কোম্পানীর তালিকা
কিছু সার্ভিস কোম্পানী ও তাদের কর্মীসংখ্যা
(সচলায়তনে আগে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×