সন্ধা নামার ঘন্টা দুয়েক আগেই আঁধারে ঢেকে যায় ডিডং ভিলা। বাড়ির পশ্চিম দিকটার বিরাট বিরাট কড়ই গাছের মধ্য দিয়ে যে টুকু ফাক ফোকর দিয়ে আলো আসার কথা সেটাও বাঁধা পড়ে কিছু ছোট বড় নানা দেশি বিদেশি গাছের ঘন ডাল পালায়। ডিডং ভিলার জানালা সংখ্যা মোট ৯টি। উত্তর দিকে ৭টি আর বাড়ির সামনের দিকটা মানে পুর্ব দিকে বসানো দুটো জানালা। দক্ষিন দিক আর পেছন দিকটায় শ'তিনেক বছরে আগে তৈরি করা বাড়িটিতে ঠিক কি কারনে কোন জানালা রাখা হয়নি সেটার প্রকৃত কারন জানা সম্ভব না হলেও গ্রামের মানুষের মাঝে নানা ধরনের ভুতুড়ে কথাবার্তা প্রচলিত রয়েছে। উত্তর দিকের একটা জানালা খোলা হয় প্রতিদিন, তাও সকালের দিকটা। সামনের দিকের জানাটা খুলতে দেখেনি কেউ কখনো। গ্রামের লোকজন বাড়িটার দিকে খুব একটা আসেনা। কেউ আসলেও তাকে বসতে হয় গেটঘেষা এক ছোট্ট দোলুজ ঘরে। খোলামেলা ঘরটিতে গোটা সাতেক চেয়ার আর একটা পুরোনো আমলের লম্বা টেবিল। মুল বাড়ির ভিতরে কেউ ঢুকার সুযোগ পায়না, কেউ ঢুকতে গেলেই লাঠি হাতে তেড়ে আসেন ৭৩ বছর বয়সি টিংটিঙে এক বুড়ি। ইনিই সুরনা দাদি।
বাড়ির বাসিন্দা সংখ্যা মোট ২ জন। দাদির সাথে নাতনি। মাস ছ'য়েক আগে বিয়ে হয়েছিল নাতনিটার, টেকেনি বেশিদিন, সপ্তাহ খানেক পরেই শুরু হয় ঝামেলা, ঘরে জামাই থাকতে রাজি হয়ে বিয়ে করা ছেলে হঠাত করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাইলো, সঙ্গে নেবে তার ২৬ বছর বয়সী সুন্দরী বউ সুরনা কে। সুরনা কিংবা তার দাদি রাজি হয়নি তাতে। অনেক চেষ্টা করেছে দাদি - নাতনি মিলে ছেলেটাকে ধরে রাখতে, লাভ হয়নি তাতে। বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় কোন এক অমাবস্যার রাতের পর সহজ সরল সেই গ্রাম্য ছেলেটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামের দু একজন নাকি সেই রাতে এক অদ্ভুত গোঙানীর আওয়াজ পেয়েছিল। আওয়াজটা নাকি মিনিট দ'শেক স্থায়ী ছিল। ৯৫ বছর বয়সি বাহার আলীর মতে এ ধরনের আওয়াজ সে জীবনের বার পাঁচেক পেয়েছে, আর প্রতি বারই ঘটেছে কোন না কোন অদ্ভুত ঘটনা।
এমন বাড়িতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে, স্বচক্ষে দেখার লোভ সামলাতে পারলামনা। সঙ্গে জুটে গেল দুই বাল্য বন্ধু, আর এক সহকর্মি। ভূতে কারো বিশ্বাস নেই বললেই চলে, তবু কোন এক অজানা কারনে যেন গা ছমছম করছে। চলবে...