somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব কিছু বিবেচনায় আনতে হবে । কপি-পেস্ট

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এখন জেলে। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দল নিয়ে ঔৎসুক্যের শেষ নেই। অনেকেই দলটির এ অবস্থাকে ‘খুবই নাজুক’ অথবা দলটি ‘কঠিন চ্যালেঞ্জে’ আছে মনে করেন। মূলত জামায়াতে ইসলামীর সঠিক স্বরূপ না জানার কারণেই এ কথাগুলোর সৃষ্টি হয়। জামায়াতে ইসলামী গতানুগতিকভাবে কোন রাজনৈতিক দল যেমন নয়। বরং জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলন অতীতে নবী রাসূলগণ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। এ দুনিয়াতে মানুষের সমাজে পূর্ণাঙ্গ শান্তি কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আখেরাতে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার জন্যে আল্লাহ রাববুল আলামীন পথ প্রদর্শক হিসেবে যুগে যুগে নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত অসংখ্য নবী রাসূল এসেছেন। তারা সবাই ছিলেন মানবতা মনুষ্যত্বের পূর্ণাঙ্গ সার্থক মডেল। তারা নিজেরা যেমন নিজের মনগড়া পথে চলেননি-আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলেছেন তেমনি মানুষকেও আল্লাহর পথে ডেকেছেন। সমস্ত নবী রাসূল একই আহবান জানিয়েছেন ‘‘হে আমার জাতির জনগণ তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। কোন গাইরুল্লাহর দাসত্ব করো না। ’’ শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার সর্বশেষ মডেল। তিনি এসেছিলেন এক অশান্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে। সেই সমাজকে-সেই সমাজের মানুষকে তিনি আল্লাহর দেয়া হেদায়েতের আলোকে আলোকিত করে একটি সুন্দর সমাজ-একদল উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষে পরিণত করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছিল শেষ কিতাব ‘‘আল কোরআনের’’ বদৌলতে। নবুয়তের পূর্বে দীর্ঘ ৪০ বছর তাঁর কেটেছিল অত্যন্ত ভালো। সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা এগুলো ছিল তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। এ জন্যে সবাই তাঁকে ‘আল-আমীন’, ‘আস-সাদিক’ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু এই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিও নবুয়ত পূর্ব যুগে সর্বাত্মক চেষ্টা করেও সেই সমাজে কোন পরিবর্তন আনতে পারেননি। কিন্তু নবুয়ত লাভের পর মাত্র ২৩ বছরে আল্লাহর দেয়া হেদায়েতের বদৌলতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধন করেন। এ থেকে বুঝা যায় মানুষের নিজের চেষ্টায় এ কাজ সম্ভব নয় বরং এর জন্যে প্রয়োজন আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়েত। সেই হেদায়েত আমাদের কাছে অবিকৃত আছে-সেটা কোরআন এবং সুন্নাহ রাসূল (সা.)-এর হাদীস, যতদিন তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। জামায়াতে ইসলামী সেই দল যারা কোরআন এবং সুন্নাহর এই পথেই চলে। এ দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এ পথেই কেবল মানবতা মনুষ্যত্বের কল্যাণ সম্ভব। জামায়াত মনে করে যে কোন পরিস্থিতিতে বা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কোন কর্মকৌশল নয় বরং শাশ্বত সেই কর্মকৌশল অবলম্বন করতে হবে যে কর্মকৌশল অবলম্বন করেছিলেন মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)। পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক-চ্যালেঞ্জ যত কঠিনই হোক ‘শর্টকাট’ কোন পথ নেই। কারণ এ হেদায়েত নির্দেশনা এসেছে সেই মহান সত্তার পক্ষ থেকে যিনি সমস্ত বিশ্ব জাহানের রব। যার কাছে অতীত, বর্তমান ভবিষৎ সব পরিষ্কার। তিনি যেমন অতীতকে জানেন তেমন বর্তমান দেখেন এবং ভবিষ্যতে কি হবে তাও জানেন। বান্দার সামনে যা আছে তাও তিনি জানেন আবার পিছনে যা আছে তাও জানেন। তিনি মানুষের শেখার জন্য, বুঝার জন্য কোরআন মজিদে বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন নবী রাসূলের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। সরাসরি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যা শুধু সুর করে তেলাওয়াতের জন্য নয়। নয় জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে পন্ডিত হিসেবে জাহির করার জন্য বরং বাস্তব জীবনে যখন ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে বাতিলের মোকাবেলা করতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে গিয়ে জীবনে বাস্তবে অনুসরণ করার জন্য। কোরআনের ঘোষণা :
‘‘তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ এখনও তোমরা সে লোকদের অবস্থায় আসনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর বহু বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট এসেছে তাদেরকে অত্যাচার নির্যাতনে এমনভাবে জর্জরিত করে দেয়া হয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাসূল এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে। (সূরা আল-বাকারা-২১৪)

‘‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। যদি তোমরা (এখন ওহুদ যুদ্ধে) আঘাত প্রাপ্ত হও, তাহলে তারাও তো (বিরোধী পক্ষ) তেমনি আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে (বদরের যুদ্ধে)। আর এ দিনগুলো আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। আর এ সময় ও অবস্থাদি তোমাদের উপর এ জন্যে আনা হয়েছে যে, আল্লাহ জানতে চান তোমাদের মধ্যে কারা সাচ্চা মুমিন। আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমেই সাচ্চা মুমিনদেরকে বাছাই করে নিয়ে কাফেরদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান। তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে জিহাদ করেছে এবং কে তাঁর জন্যে সবরকারী।’’ (সূরা আল ইমরান-১৩৯-১৪৩)
‘‘যেদিন দু’দল সৈন্যের মোকাবিলা হয়েছিল সেদিন তোমাদের যে ক্ষতি হয়েছিল তা আল্লাহর হুকুমেই হয়েছিল এবং তা এ জন্যে হয়েছিল যাতে আল্লাহ দেখে নেন কে তোমাদের মধ্যে মুমিন এবং কে মুনাফিক।’’ (আল ইমরান-১৬৬-১৬৭)

‘‘তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমাদেরকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখন পর্যন্ত দেখেননি তোমাদের মধ্যে কে (তাঁর পথে) যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ অবহিত।’’ (আত তওবাহ-৯৬)

‘‘মানুষ কি মনে করে যে, তারা ‘আমরা বিশ্বাস করি’ একথা বলেই ছাড়া পেয়ে যাবে? এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তো তোমাদেরকে পরীক্ষা করেছি যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।’’ (আল আনকাবুত-২-৩) ‘‘আমি তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করবো, যতক্ষণ না প্রকাশ হয় কে কে তোমাদের মধ্যে জিহাদকারী এবং কে কে সবরকারী এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থা যাচাই করি।’’ (সূরা মুহাম্মদ-৩১)

‘‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎ পথ দেখান, আর আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত আছেন।’’ (আত তাগাবুন-১১)
‘‘পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না, কিন্তু তা জগৎ সৃষ্টির আগেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। এটা এ জন্য বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তাতে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তার জন্য উলস্নসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’’ (আল হাদীস-২২-২৩)

আল কোরআনের অনুরূপ রাসূল (সা.)-এর বর্ণনাও (আল হাদীস) অনুরূপ কথা এসেছে :
‘‘হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘রাসূল (সা.) বলেছেন : মুমিন নর-নারীর উপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে, কখনো সরাসরি তার জীবনের উপর বিপদ আসে, কখনো তার সন্তান মারা যায়, আবার কখনো তার ধন সম্পদ ধ্বংস হয়। অবশেষে সে এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হয় যে, তার আমলনামায় আর কোন গুণাহ অবশিষ্ট থাকে না। (তিরমিজি)

‘‘হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : বিপদ আপদ ও পরীক্ষা যতো কঠিন হবে তার প্রতিদানও হবে ততো মূল্যবান। আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন তখন অধিক যাচাই ও সংশোধনের জন্য তাদেরকে বিপদ মুসিবত ও পরীক্ষার সম্মুখীন করে। অতঃপর যারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে খুশি মনে মেনে নেয় এবং ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা এ বিপদ ও পরীক্ষায় আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হয় আল্লাহও তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন। (তিরমিজী) এবং (মালিক তার) মেষ পালনের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া (বাঘ) অন্য কারো ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা খুবই তাড়াহুড়া করেছো। (বুখারী)

হযরত খাববাব ইবনে আরাত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আমরা নবী করীম (সা.)-এর নিকট (আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ও অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তার চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবাঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আমরা তাঁকে বললাম : আপনি কি আমাদের জন্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান না? আপনি কি আমাদের জন্যে দোয়া করেন না? তখন তিনি বললেন : (তোমার উপর আর কি বা দুঃখ নির্যাতন এসেছে) তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোঁড়া এবং সে গর্তের মধ্যে তার দেহের অর্ধেক পুঁতে তাকে দাঁড় করিয়ে তার মাথার উপর করাত দিয়ে তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এ অমানুষিক অত্যাচার তাকে তার দ্বীন থেকে বিরত রাখতে পারতো না। আবার কারো শরীর থেকে লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে হাড় থেকে গোশত আলাদা করে ফেলা হতো। কিন্তু এতেও তাকে তার দ্বীন থেকে ফিরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম এ দ্বীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। তখন যে কোন উষ্টারোহী সান’আ থেকে হাযরামাউত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ নিরাপদে সফর করবে আর এ দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না এবং (মালিক তার) মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া (বাঘ) অন্য কারো ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা খুবই তাড়াহুড়া করছো। (বুখারী)

কোরআন সুন্নাহর এ আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার বোঝা যায় যে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসই হচ্ছে বাতিল শক্তির পক্ষ থেকে যুলুম নির্যাতনের ইতিহাস। যারা বাতিলের সাথে Compromise করে অথবা Alternate কোন পথ খোঁজে হয়তো বা আপাতত দৃষ্টিতে তারা সমস্যা এড়াতে পারে। কিন্তু এটা মোটেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পথ নয়।

জামায়াত নিছক ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রবণতাও জামায়াত নেতৃবৃন্দের নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে ধারা-১৫ র ২ নং এ বলা হয়েছে সদস্যগণের (রুকনদের) সরাসরি গোপন ভোটে আমীরে জামায়াত তিন বৎসরের জন্য নির্বাচিত হবেন। অষ্টম অধ্যায়ে নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়। এ ধারা ৬৫-এর ১ নং এ বলা হয়েছে : জামায়াতের সকল সাংগঠনিক স্তরে যে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন কিংবা নিযুক্তিকালে ব্যক্তির দ্বীনি ইলম, আল্লাহ ভীতি, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, রাসূল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য, দেশ প্রেম, আমানতদারি, অনড় মনোবল, কর্মে দৃঢ়তা, দূরদৃষ্টি, বিশ্লেষণ শক্তি, উদ্ভাবনী শক্তি, প্রশান্ত চিত্ততা, সুন্দর ব্যবহার, মেজাজের ভারসাম্য, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিধানের যোগ্যতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হইবে। ২ নং এ বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পদের জন্য আকাঙ্ক্ষিত হওয়া বা ইহার জন্য চেষ্টা করা উক্ত পদে নির্বাচিত বা নিযুক্ত হওয়ার জন্য অযোগ্যতা বলিয়া বিবেচিত, গঠনতন্ত্রের এই ধারাসমূহ সংগঠনের সর্বত্র খুবই কঠোরভাবে Practice করা হয়। জামায়াতে ইসলামীতে কেউ নেতা হওয়ার জন্য যেমন আসে না তেমনিভাবে নেতৃত্ব আঁকড়েও থাকে না। জামায়াতের নেতাদেরকে নেতা না বলে দায়িত্বশীল বলার রেওয়াজ আছে। দায়িত্ব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ দায়িত্ব যেমন চেয়ে নেয়া যায় না তেমনি এ দায়িত্ব থেকে পলায়ন করার সুযোগও নেই। আজকে জামায়াতে ইসলামীর যে সমস্ত নেতা জেলে আছেন তারা কেউই ব্যক্তিগত কারণে জেলখানায় আবদ্ধ নন। ব্যক্তি জীবনে সৎ, যোগ্য এবং নীতিবান বলে তারা সমাজে পরিচিত। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজ তারা জেল যুলুমের মত কষ্ট ভোগ করছেন। এদের কেউ কেউ মন্ত্রীও ছিলেন। মন্ত্রী থাকালীন সময়ে সততা যোগ্যতার পথে তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। এর সাক্ষী যেমন মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তেমনি সাক্ষী দেশবাসী। দূরবীন দিয়ে খুঁজেও তাদের দুর্নীতি বের করতে কেউ পারেনি। তাহলে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রশ্ন কেন আসে। জামায়াতে ইসলামী কেউ দুনিয়াতে ক্ষমতাবান হওয়ার জন্য করে না, করে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির লক্ষ্যে। স্বহসেত্ম কষ্টোপার্জিত অর্থ বায়তুলমালে দিয়ে এ সংগঠনের জনশক্তি সংগঠনের ঋঁহফ কে সমৃদ্ধ করে। (ষষ্ট অধ্যায় : ধারা-৬০)। উল্লেখ্য, প্রত্যেক রুকন (সদস্য) নিজ নিজ মাসিক আয়ের কমপক্ষে শতকরা পাঁচ ভাগ এয়ানত হিসেবে প্রদান করে। জামায়াতের জনশক্তি বিশ্বাস করে : ‘‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের জান এবং মাল বেহেশতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।’’ কাজেই সাধ্যমত তারা জানমাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে অংশ নেয়।

জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কোন নেতার নয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রুকনদের প্রত্যক্ষ গোপন ভোটে। আমীর নির্বাচিত হন। কাজেই এখানে কোন New Generation-এর হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার বা ধরে রাখার প্রশ্ন অবান্তর। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। যদি এ সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে তাহলে আরও তিন বছর ক্ষমতায় থাকবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (?) নিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতার দাপটে তারা জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক রেখেছে। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করলেই কি তাকে আটক রাখা যায়? এটা তো সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত একজন মানুষ নিরপরাধ। এটাই আইনের কথা। দীর্ঘ সাত মাস আটকে রাখার পরও এখনও পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা কোন অভিযোগ গঠন করতে পারেনি। যেখানেই তারা তদন্ত করতে গেছে সেখানেই তারা গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। আর এদের অনেকেই একাধিকবার এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির আমীর ২ বার তার এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ৪ বার তিনি নির্বাচিত করেছেন। বাকি দুইবার তিনি বিপুল ভোট পেয়েছেন ষড়যন্ত্র করে তাকে হারানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন থানায় কোন মামলা নেই। তার সততা, যোগ্যতার ব্যাপারে বিরোধী শিবিরেরও দ্বিমত নেই। শুধু আদর্শগত কারণে তারা এ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতার দাপটে অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর সর্ব পর্যায়ের জনশক্তি (নেতৃবৃন্দসহ) বিশ্বাস করে : ‘‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর সবকিছু আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে।’’ (আলে ইমরান-১০৯)
‘‘বলুন : হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করো। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। তুমিই রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই মৃত থেকে জীবিতদের আবির্ভাব ঘটাও। আর তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিসীম জীবিকা দান করো।’’ (আলে ইমরান-২৬-২৭)
অসীম ক্ষমতার মালিক আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সব ক্ষমতাই নগন্য। যারা আল্লাহর পথে চলে তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক মত পার্থক্য ছিল। কিন্তু খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত মানবতা বিরোধী কোন কর্মকান্ডেই তারা ছিলেন না। যদি থাকতেন তাহলে এ ৪০ বছরে এ দেশে তারা টিকতে পারতেন না। বরং চরিত্র মানুষের বদলায় না। ক্ষমতাসীন দলের সোনার ছেলেদের কর্মকান্ডে দেশের মানুষ আজ দিশাহারা। আজ যে চরিত্রের প্রকাশ তারা ঘটাচ্ছে-ভাবতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, যে অতীতেও এসব কর্মকান্ডের নায়ক ছিল তারাই। জামায়াতের নেতৃবৃন্দের নামে অপপ্রচার চালিয়ে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এত সহজ নয়। তারা এদেশেরই মানুষ। এদেশের নাগরিক। রাজনৈতিক মতবিরোধ কোন দলের থাকতেই পারে। কিন্তু যে দিন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে সেই মুহূর্ত থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জানমাল দিয়ে কাজ করাকে জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তি ঈমানী দায়িত্ব মনে করে। আন্দোলন সংগ্রামের সময় অনেক দলেই দেখা যায় পয়সা নেই তো কর্মী নেই। কিন্তু সবাই জানে জামায়াতের ব্যতিক্রম। গাটের পয়সা খরচ করে তারা হকের জন্য মাঠে ময়দানে সব সময় সক্রিয়। সৎ নেতৃত্বের কথা বলে বুদ্ধিজীবীরা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। জামায়াত এই সৎ নেতৃত্ব তৈরি করতে জানে। যারাই জামায়াতকে কাছ থেকে দেখেছেন তারাই একথা স্বীকার করবেন। কাজেই জামায়াত নেতৃবৃন্দের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এত সহজ নয়। এটা মানুষের অন্তরে গভীরে প্রোথিত।

অতীতে যারা ইসলামী আন্দোলন করেছে (আমি আগেই বলেছি) তাদের উপরও বিভিন্ন মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ পাকের বাণী :
‘‘দুনিয়ার এ জিন্দেগী একটা খেল তামাশার ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে পরকালের আবাস পরহেজগারদের জন্য উত্তম। তবে কি তোমরা বুঝ না? আমার জানা আছে যে, তাদের (কাফেরদের) উক্তি (হে নবী) আপনাকে অবশ্যই কষ্ট দেয়। কিন্তু তারা তো আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে না। বরং জালেমরা তো আল্লাহর আদালতকেই অস্বীকার করে। আপনার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের মিথ্যাবাদী বলা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। অতঃপর আমার সাহায্য এসে পৌঁছেছে। আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে পূর্বের নবীদের কাহিনী পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও যদি তাদের অনাগ্রহ ও উপেক্ষা আপনার সহ্য করা কষ্টকর হয়, তাহলে আপনি পারলে ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে সিঁড়ি তালাশ করুন এবং তাদের নিকট কোন মোজেজা আনুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাইকে একত্রিত করে হেদায়েত করতে পারতেন। অতএব আপনি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।’’ (আল আনয়াম ১৩২-১৩৫)

জামায়াতে ইসলামী যারা করে তারা জেনে বুঝেই করে। কোন আশংকা কোন ভয় তাদেরকে ভিন্ন পথে চালিত করতে পারে না। মৃত্যু ভয়ও তাদের থাকে না। তারা জানে : ‘‘আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত।’’ এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (র.) ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন : ‘‘আমি ক্ষমা কেন চাইবো? এ জন্যে কি যে হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে পাঠিও না।’’ দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবন শেষে চিরস্থায়ী আবাস জান্নাতে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় যারা জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় অংশ নিল তাদের চিন্তায় কোন বিকল্প পথ নেই। এটা সেই পথ যা সরাসরি জান্নাতে চলে গেছে। পরম নিশ্চিন্ততার সাথে এরা পথ চলে। জেল জুলুম কোন কিছুই তাদেরকে বিচলিত করে না। ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব মানুষের নয় আল্লাহর। কাজেই তার নির্দেশিত পথে চলাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার দাবি।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×