কুড়াল বদলে দিয়েছে সুকুমারের ভাগ্য
ডিজিটাল দিনাজপুর ## নীলফামারীতে এক যুবক ১০ কেজি ওজনের কুড়ালে ৫০ মণ জ্বালানি কাঠ ফাড়াই করে ভাগ্যের পরিবর্তনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
জেলা শহরের উপকণ্ঠে রামনগর ইউনিয়নের বিষমুড়ী গ্রামের ঈশ্বর রায় কুমারের ছেলে শুকুমার রায় (২৮) বন ও ফলদ গাছ তার হাতের ১০ কেজি ওজনের কুড়ালে প্রতি ঘণ্টায় ৭ মণ জ্বালানি কাঠ ফাড়াই করছে। প্রতি মণ কাঠ ফাড়াইয়ের নির্ধারিত মূল্য ১১ টাকা। এ যুবক দৈনিক ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ৫০ মণ কাঠ ফাড়াই করে পারিশ্রমিক গুনছে প্রায় ৫৫০ টাকা। এ কাজের আগে সে ক্ষেতমজুরের কাজ করতো। বাবা-মা এক সঙ্গে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও পথ্যের অর্থ জোগান দিতে শেষ সম্বল বসতভিটা হাতছাড়া হয়ে যায়। কারণ শিল্পহীন এ জেলা দেশের মঙ্গাপীড়িত হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় প্রায় ১৯ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ১৭ লাখ কৃষির ওপর আর ২ লাখ মানুষ গতর খাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এ জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার দর দেশের বিভিন্ন হাটবাজারের মূল্য তালিকায় বেচাকেনায় তফাত নেই। কিন্তু দেশের শ্রম বাজারের চেয়ে এ জেলার শ্রম বাজার কেনাবেচা চলছে অর্ধেক দামে। ফলে এ অঞ্চলের একজন ক্ষেতমজুর ও দিনমজুর ১৬ ঘণ্টা শ্রম বিক্রি করে পায় মাত্র ১২০ টাকা। এ শ্রম বাজারের একজন শ্রম বিক্রেতা সুকুমার। তার এ সামান্য রোজগার ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও পথ্যের জোগান দিতে প্রতিদিন টাকার প্রয়োজন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর বাকি ৬০ টাকা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একবেলা খাবারও জুটতো না তার। এভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাতের যন্ত্রণায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সুকুমার। তার দৈহিক শক্তি আর মনোবল নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসে জেলা শহরের আনন্দ বাবুর পুল এলাকার জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ী মনির প্রধানের কাছে। জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কর্মসংস্থানের আলোচনায় অধিক পারিশ্রমিকের আশায় জ্বালানি কাঠ ফাড়াই করার মনস্থ করে সুকুমার। এতে প্রয়োজন একটি কুড়ালের। কিন্তু কুড়াল তৈরিতে যে টাকার প্রয়োজন তার কানাকড়িও নেই তার হাতে। পরে ওই কাঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে পারিশ্রমিকের টাকা কর্তন ও পরিশোধ চুক্তিতে ৭০০ টাকা কর্জ নেয়। এরপর ১০ কেজি ওজনের একটি কুড়াল তৈরি করে কাঠ ব্যবসায়ীর টাকা ধীরে-ধীরে পরিশোধ করে। এখন সুকুমার দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘামঝড়া পরিশ্রমে ৪৫ থেকে ৫০ মণ কাঠ ফাড়াই করে পারিশ্রমিক গুনছে প্রায় ৫৫০ টাকা। এখন তার সংসারে বইছে সুখের হাওয়া। অভাব নামে দানবটা পরাজিত তার দৈহিক শক্তি আর মনোবলের কাছে। ইতিমধ্যে সুকুমার তার পরিবারের ভরণপোষণে সন্তুষ্ট করে জমানো টাকায় মাথা গোঁজার এক টুকরো (আড়াই শতক) জমি কিনে বসতভিটা তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সূত্র :: আবু সাঈদ অপু, দৈনিক ডেসটিনি, ৬ নভেম্বর'২০১০