somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ?

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকাল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কথার ফাঁকে যেকোনো প্রসঙ্গে এই শব্দগুলোর উল্লেখ প্রায়ই শোনা যায়। বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছিল এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছে, সেগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা যায়। ওয়া ছিল, বৈষম্যের অবসান। বাঙালি সম্প্রদায় যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করত, তাদের সরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদ ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করা হতো। তাদের প্রতি পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা ইত্যাদির ফলে বাঙালিরা পাকিস্তানের অন্য নাগরিকদের তুলনায় নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করত।দুঃখের বিষয় হলো, অনেককে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে লালন করে আমাদের এই দেশটি স্বাধীন করা হয়েছিল। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কতটুকু এখন বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে অনেক কিছুই হচ্ছে, অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে কি কি বিষয় ছিল সে বিষয়গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় আমরা সেই চেতনাকে ভুলে গেছি অথবা জানা থাকা সত্বেও ভুলে যাওয়ার ভান করছি।
নুরুল হক ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাকে নির্বাচিত করে নেতা বানিয়েছে। নুরের কার্যালয়ে আলো নিভিয়ে (নিজেদের আড়াল করতে) যেভাবে হামলা হয়েছে, তা সভ্য সমাজে অচিন্তনীয়। এমনকি হামলাকারীদের নির্দয় আঘাতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এক নেতাকে লাইফ সাপোর্টে পর্যন্ত নিতে হয়েছে। একজন নির্বাচিত ভিপির ওপর দাঙ্গাবাজির কায়দায় বারবার এবং প্রকাশ্যে হামলা কেন? ঢাকার বাইরেও আক্রমণের শিকার হয়েছেন এই ভিপি। এভাবে বারবার প্রাণঘাতী হামলা হচ্ছে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা সরকার কেউ তাকে ক্যাম্পাসে কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে ডাকসু ভবনে নুরুর সঙ্গে বহিরাগতরা ছিল। নুরু তা স্বীকার করেই বলছেন, তিনি অনিরাপত্তাজনিত কারণে একা চলাফেরা করেন না। যদি প্রশাসন বহিরাগত বিষয়টিকেই জোর দেয় তাহলে প্রশ্ন, নুরুর নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল?

‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ সংগঠনটির কর্মী পরিচয়ে এর আগেও নুরুলসহ একাধিক ছাত্রনেতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাদের খুঁটির জোর কোথায়? হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনের নেতারা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার কথা নয়। কিন্তু তারা করেছে। এটা নিছকই গু-ামি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে পবিত্র বিষয়। এ নাম নিয়ে সংগঠন বানিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- করা ঘৃণ্য কাজ। কারা এসব সন্ত্রাসী কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে কোনো কঠিন কাজ নয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নাম দিয়ে কেউ এ ধরনের কাজ করলে তা সমর্থনযোগ্য নয়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ঘৃণার আগুন যেন মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র নাম স্পর্শ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে দায়ী সব নেতাকর্মীর বিচার ও শাস্তি দেওয়া জরুরি।
এ ধরনের বেআইনি ও অমানবিক কাজে উসকে দিয়ে সরকারের অবশিষ্ট ভাবমর্যাদা ডোবাচ্ছে কারা। কারা কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলে আনন্দ পাচ্ছে। সরকার নিজের দায়মুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন এবং রাষ্ট্রের ওপর থেকে অভিযোগের আঙ্গুল সরানোর জন্য হলেও আইন, বিচার ও মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে খেলা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। সরকারের বোধোদয় না ঘটলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এবং জনমনে অবিশ্বাসের যে ডালপালা গজাচ্ছে, তার শেষ ভালো হওয়ারও কথা নয়।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে দুটি উদ্ধৃতির মাধ্যমে আমার এ লেখার পরিসমাপ্তি টানছি। এক. বঙ্গবন্ধু ৫০-এর দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ বিরোধী পার্টি। তাকে কাজ করতে দেয়া উচিত। বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র চলতে পারে না। আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তা আমি জানি”। দুই. “মানুষকে ব্যবহার, ভালোবাসা ও প্রীতি দিয়েই জয় করা যায়, অত্যাচার, জুলুম ও ঘৃণা দিয়ে জয় করা যায় না”।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×