somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ আমার দেশ

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোহন বসেছিল ঘরের দাওয়ায়। বাটিতে রাখা মুড়ি। সাথে একটু চানাচুর। ভাবছে ভিজিয়ে খাবে নাকি শুকনো চিবিয়ে। পেটের মধ্যে ভাল করে খিদে না লাগলে এমন ভাবনা আসে। সামনের নিষ্ফলা জমিটা আজকেই কুপিয়ে ফেলতে হবে।
তাই সবে পাঁচ সাত গাল খাওয়া শেষ করেছে এমন সময় বিলু হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল - কি রে? এখনো বসে আছিস, যাবি না?
রোহন একটু অবাক হয়ে বলল - কোথায় যাব? আর কেনই বা যাব?
বিলু বোঝানোর চেষ্টা করে - আরে বাবা, দেশ গড়ার ডাক এসেছে। চল। এ অন্যায় অত্যাচার আমরা সহ্য করব না।
রোহন এম এ পড়ছে। বিলু এম এস সি পাশ। একটু হেসে বলল - কে ডাক দিল
- পাটেকর। ওরাই সামনের ইলেকশনে আসছে। এখনও তো কোন কাজ পেলাম না। যদি এদের ধরে….....
- আমরা তো আর পরাধীন নই। আমাদের নিজেদের দেশের মানুষ দেশ চালাচ্ছে। অন্যায় অত্যাচার যা কিছু আমাদের দেশের লোক করছে।
- ঠিক তাই। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
আবার হাসল রোহন। মুড়ির বাটি রেখে বলল - মজাটা হচ্ছে। যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের তাড়াতে আবার অন্য দলের পক্ষ নেওয়া। তুই আমি কি কোন সাধারণ মানুষের মুখ হতে পারছি? তবু চল।
রোহন বেরনোর সময় বলে - মা আসছি।
মা রান্না ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বলে - কি রে? এখন কোথায় চললি? কলেজে যাবি না?
রোহন সামনের তালগাছের কাছে এসে বলে - না মা, কলেজ বলো আর স্কুল বলো ও তো শুধু পাস সার্টিফিকেটে নাম তোলার জন্য যেতে হয়। না হলে পড়াশুনা তো করতে হবে টিউশনে।
- তাহলে কোথায় যাচ্ছিস?
বিলু উত্তর দিল - যাচ্ছি, আমাদের নেতা ডাকছে। নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়েছে।
মা হাসে। বলে - আর নতুন দেশ! পেটের খিদে না মিটলে কিসের দেশ আর কিসের নতুন জীবন।
রোহন চার ভাইবোন। সবাই মিলে যা আনছে সব ভাগাভাগি করতে করতেই শেষ। কিছুতেই পেটের খিদে মিটছে না। তবে বিলু একলা বাপের ছেলে। বিন্দাস খরচ করে। পার্টি করে। রোহনের মত টেনে নিয়ে যায় মিছিলে।
গত বছর রাস্তা সারাই হয়েছে তবু গাড্ডায় ভর্তি। একটু এগিয়ে দেখে মিলনের বাড়ি। এইট পাশ। এখন প্রধানবাবু। রাস্তা যত ভাঙছে বাড়িটা তত বড় হচ্ছে। তিনতলা হয়ে গেল। এই তো বছর আট দশ আগে খেতে পেত না ।
বিলু বাড়িটা দেখিয়ে বলে - এবার এদের ভাঙা দরকার।
পাশ দিয়ে লাঙল কাঁধে এক কৃষক যাচ্ছিল। বলল - ভাই। ভাঙাভাঙি করো না। তোমাদের মত ছেলেদের তো এই দেশ গড়ে তুলতে হবে।
বিলু কোমরে হাত দিয়ে রুখে দাঁড়ায় - কিভাবে গড়ব? কাজ কোথায়? বেকার হয়ে কতদিন কিভাবে গড়ব এই দেশ?
কৃষক বলে - কাজ মানে তো তোমরা শুধু চাকরি বোঝ? দেশ গড়তে হলে কর্মী দরকার সবচেয়ে বেশি। আমরা কাজ করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি আর এরা কাজ পাচ্ছে না? আসলে কাজ করতে চাইছে না?
আর কি সব বলতে বলতে কৃষক চলে যায়। রোহন বলে - চল। আমাকে আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
- কেন?
একটু এগিয়ে বিলু তার নিজের কথার জবাব পায়। সামনে দাঁড়িয়ে দিদিতা। বলে - লুটুদা কোথায় চললে? বিকেলের কথা মনে আছে?
রোহনকে এখানে সবাই লুটু বলে ডাকে। হেসে বলে - মনে আছে। এই মিছিলে ঘুরে আসছি।
বিলু ঠেলা দেয় রোহনকে। বলে - তাহলে এই ব্যাপার। তোর চয়েস আছে বলতে হয়।
তারপর অটো ধরে সভা মঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছে গেল দুজনে। পাটেকর বিপক্ষ পার্টির নামে কি সব বলার জন্য তারা ক্ষেপে যায়। লেগে যায় মারামারি। হাতাহাতি লাঠালাঠির সাথে বন্দুক ব্যোম গুলিগোলাও চলতে থাকে। পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে সরে দাঁড়ায়। এক ইন্সপেক্টর আর একজনকে বলে - তোমরা দেশ গড়বে তাই তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে বুঝে নাও। আমাদের কি দরকার নাক গলানোর?
তারপর তিনদিন পরে হাসপাতালে রোহনকে দেখতে যায় বিলু। সান্ত্বনা দেয় - চিন্তা করিস না আমরা আছি। পায়ের ব্যাণ্ডেজ খুলে দিয়েছে?
রোহন কিছু বলে না। ব্যাজার মুখে তাকায়। কিভাবে মারামারির জন্য উস্কানি দিয়ে কে পেছনে ছিল, কিভাবে বোমের মুখে ঠেলে দিয়ে পার্টির গাড়িতে উঠে যায় বিলু সব মনে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দিদিতার হাত ধরে রোহন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×