somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইকেল

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাইকেলটা ভাল করে তেল লাগিয়ে মুছে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখে দীপক। ঘরে গিয়ে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে মিঠুকে বলে - দাও। এক কাপ চা দাও।
চা বাড়িয়ে দিতে দিতে মিঠু বলে - কি যে একটা ভাঙা সাইকেল পেয়েছো, এবার অন্য কিছু ভাবো?
দীপক এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে। তবু চায়ে চুমুক দিয়ে বলে - কেন পেছনে লেগে আছো? অন্য মানে তো চারচাকা। তা ভাবতেই পারি।
বেশ উৎফুল্ল হয়ে পাশে বসে মিঠু। গায়ে ঢলে পড়ার মত করে বলে - কবে নিচ্ছো?
দীপক আবার গোড়া থেকে গান করে। বলে - প্রথমে দেখতে হবে গাড়ি আমাদের কি কি কাজে লাগবে? ছেলেমেয়ের স্কুল হাঁটা পথে। আমার অফিসে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার মত আমি পদাধিকারী নই। তোমার বাপের বাড়ি বা কোথাও বেড়াতে যাওয়া সেও নয়ে ছয়ে। তাহলে?
মুখ বেঁকিয়ে এক প্রকার ঠেলা দিয়ে উঠে গেল মিঠু। ঠেলার চোটে চা পড়ে যাচ্ছিল তাও মনে মনে হাসতে হাসতে সামলে নেয় দীপক।
ভাড়া বাড়ি। গাড়ি বা মোটর সাইকেল রাখার জায়গা আছে। সাইকেল রাখতে দেয় না। বলে নাকি প্রেস্টিজ চলে যাবে। বাধ্য হয়ে বলে কয়ে রেখেছে। তাও মাঝে মাঝে হাওয়া খুলে দেয়। বেল খুলে নেয়। দীপক এসব পাত্তাই দেয় না।
বেরিয়ে পড়ে সাইকেল নিয়ে। হ্যান্ডেলের দুদিকেই দুটো বাজার করা ব্যাগ। সবসময় রাখা থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়া বাজার করে সহজেই ফিরতে পারে।
আশেপাশে সমস্ত গলি চেনা। কোথায় ভালো সেলাইয়ে দোকান, কোন ছেলেটা ভালো জুতো পালিশ করে, কোথায় ফলস পিকো হয়, কোথায় চমৎকার চা বানায়, কোথায় বই পাওয়া যায়, কোথায় খাতা পেন, কোথায় সুন্দর ঝকঝকে জেরক্স হয়, ডাক্তারের খোঁজ, মোবাইলের দোকান, ভাল মাংসের দোকান ইত্যাদি আশেপাশে সব সব দীপকের চেনা জানা।
আস্তে আস্তে প্যাডেল করতে করতে গঙ্গার পাড়ে গজিয়ে ওঠা মানুষের বস্তি দেখেছে, মারামারি দেখেছে, আড়ি দেখেছে, ভাব দেখেছে, দেখেছে ঠাকুর দেবতার কাঠামো চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
এসব কথা অনেকবার অনেক ভাবে বলতে চায় দীপক। কেউ শোনে না। একটু শুনে বলে - মানুষের কত কাজ। এইসব ফালতু ব্যাপারে সময় নষ্ট করা বৃথা।
ফালতু? বৃথা? তাহলে আসল কি? উন্নতমানের হাজার বাহনের যুগে এই সাইকেলও কি বৃথা। দীপকের মত।
অথচ কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় পায় নি বলে চালানো শিখতে পারে নি। পরে শহরতলীতে চলে এল। নিজের দু চার পয়সা রোজগারে সাইকেল কিনে লুকিয়ে অন্ধকার মাঠে শিখত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জানতে পেরে কি প্যাঁক দিত। দীপক ওসব নিয়ে ভাবত না।
সেই প্রথমবার সাইকেল নিয়ে বড় রাস্তায়। সামনের একটা পুটকি ছেলে পা ঢুকিয়ে প্যাডেল করে আসছিল দীপকের বাঁ-দিক দিয়ে। দীপক ভাবল বাঁ-দিক দিয়ে ও বেরিয়ে যাবে। কিন্তু খুব দ্রুত দীপকের ডানদিকে আর ওর বাঁ-দিকের সঠিক রাস্তায় চলে এল। ফলে ধাক্কা লাগল। কারো কিছু হয় নি। লোকজন ছিল না। তাই ছেলেটাকে বুঝিয়ে দীপক জোরে সাইকেল চালিয়ে পালায়। গা দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেল।
কিছু শিখতে পারে নি। মোটরসাইকেল চারচাকা বাস লরি ট্রাম ট্রেন প্লেন কিছুই না।
বছর পনের আগের এক পূজোর মুখে এই সাইকেলে এক বিকেলবেলা এক কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য এক চারচাকার ধার ঘেঁষে আসা থেকে বাঁচতে মিঠু দীপকের সামনে চলে আসে।
দীপক ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যায়। চোখে চোখ হয়। আর গড়গড়িয়ে জীবনের এতটা পথ চলে এল।
মিঠু ভুলে গেছে। দীপক ভোলেনি। ভুলেনি যেদিন মেয়ে নৈনি মাঝরাতে পেট ব্যাথায় ছটপট করেছিল আর এই সাইকেলে বসিয়ে সহজেই ডাক্তার দেখিয়ে ফিরেছিল। আর ছেলে রুহাকে অলিগলি পেরিয়ে টিউশনে নিয়ে যেতে হয়।
দুটো বাজার ভর্তি থলেসহ সাইকেল রাখার জায়গায় এসে দেখে ঝাড়ুপোচা ড্রাম ঝাঁটা ডাঁই করে রাখা। ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার এমনিতে ভাল ব্যবহার করে সমীহ করে কিন্তু সাইকেল পছন্দ করে না। বলে - বাবুদের এসব মানায় না।
ও বোধ হয় এসব করেছে। কি আর করা যাবে। জিনিসপত্র সরিয়ে সাইকেল রেখে ঘরে ব্যাগদুটো রাখতেই মিঠু খ্যাঁক করে উঠল - এই তোমার আসার সময় হলো?
- আরে বাবা! আজ রবিবার। আর তুমি তো জানো, আমার বাহনে চেপে আজই তো বিশ্ব ঘুরে দেখার সময় পাই।
নৈনি আর রুহা ঘরেই ছিল। হ্যা হ্যা করে হেসে উঠল। বলল - মা দুর্গার মত। আগমন হলেই সিংহ থুড়ি সাইকেল বাহন।
সোফায় বসে দীপক। কেউ জলটুকু বাড়িয়ে দেয় না। নিজে বোতল থেকে জল খেয়ে বলে - নৈনি, ভুলে যেয়ো না মানুষের সবচেয়ে বড় বাহনের নাম এগারো নং ।
- এগারো নং?
দীপক বলে - আমাদের পা। পায়ে হেঁটে কত পথ পাড়ি দিয়েছি। যখন কোন যানবাহন আসেনি।
জানে আর কেউ শুনবে না। যখন এ রকম ভাবুক মনের বিস্তার ঘটে তখন কেউ শোনে না। দীপক তার অফিস মত কাজের জায়গাতেও এমন কি না কথা বলা রহস্যের জালে। কেউ বুঝতে চায় না। দীপকও বোঝাতে পারে মনের এই আকাশ কথা।
তাই একদিন রুহা প্রতিষ্ঠিত হয়ে দীপকের সহযোগিতায় নিজের বাড়ি করল গাড়ি করল। ঘরে এল খুশি জীবন। তখন খুশি হয়ে দীপক বেরিয়ে পড়ল সাইকেল নিয়ে। ভাঙড়িতে কিছুতেই বেচতে দেয় নি।
মাঠ ঘাট শহর গ্রাম সবুজ গাছগাছালি ছাড়িয়ে দূরে আরো দূরে চলেছে দীপক। প্যাডেল করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে কিন্তু কোন কষ্ট নেই। একটু খিদে লাগছে না। জল তেষ্টা পাচ্ছে। মনের কোনে স্পষ্ট ভেসে উঠছে বাবা মা। যারা কোনদিন পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোন বাহনে যানে চড়েনি। তাদের দৌলতে আজ যানবাহন দীপকের। সব পেছনে পড়ে রইল। দীপকের পছন্দের সাইকেল তাকে আজ পৌঁছে দিচ্ছে শেষ জীবনের পথে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×