আমার কাজ ছিল, মানুষ সরানোর, মানুষ মানে লাশ। সুস্থ মাথায় সব হচ্ছিল না, থেমে যাচ্ছিলাম , তারপর জোগাড় করলাম 'রম' এর পাঁইট । নেশা ছুটে গেছে জীবনের মত, কোনওদিন আর আমার মদে কোনও নেশা হবে না ।
ট্রেনের কামরায় বন্দী বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। কাপড় নেই বা থাকেলও ............
তাছাড়া পাকিস্তানি সৈন্যদের লাশও .....মরে গেলে শুধুই লাশ, তাই সেগুলিও ভেসে আসে এখনও..........
এইখানে এক বাড়ীর ভিতর সেকি জীবন মরন লড়াই
-------------------বলছিলেন বিএসএফ এর এক শেষ স্তরের কর্মচারী, তখন তার অবসরের আর কিছুদিন বাকী, সেটা বছর দশেক আগের কথা।
আরেকজন তিনি আগেই অবসর নিয়েছেন, তিনি বলছিলেন, শুধু মহিলাদের ইজ্জত বাঁচাতে সেদিন এই কাজ করতে হয়েছিল-----দোকানের তালা ভেঙে থান থান কাপড় বের করেছিলাম, বাড়িতে ঢুকে সামনে যা পেয়েছি সেই কাপড় নিয়ে এসেছি, গায়ের সার্ট খুলে ফেলছি আগেই, সৈন্য বাহীনির কোড তখন আর মনে ছিল না , 'উর্দি' তখন শুধুই একটা আবরনের চেয়ে বেশি কিছু না ।
এই ভদ্রলোক চট্টগ্রামের দিকে ছিলেন।
কখনই বলেন না ঠিক কোথায়, সেটা নাকি তার 'জবান', যুদ্ধের অঙ্গীকার।
একজন সাংবাদিক যিনি সেসময় নৌকা করে খাল বিল পেরিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে যুদ্ধ দেখেছেন, ফিরে এসে লিখেছেন রিপোর্ট।
মাথায় করে 'টুকরি' নিয়ে যেতে যেতে ছেলেটা চোখের সামনে টুকরো টুকরো হয়ে গেল, বয়স: ১২ এর বেশি কিছুতেই না ।
মাথায় ছিল গ্রেনেড, আর 'হাতগোলা' ফেটে গেল কোনও ভাবে ।
তখন আমি থাকি সাব্রুমে, বাড়ির পেছন দিকে বর্ডার।
এখদিন দেখি সবখালি'র অর্ডার আর মাথার উপর দিয়ে চলছে হাজার কোটি টাকার গোলা, একটি গোলায় হয়ত এক পরিবারের এক মাসের খাওয়া হয়ে যায়--------তিনিও এক সাংবাদিক।
সেইদিনগুলিতে রাস্তায় মিছিল হয়েছে বাংলার সমর্থনে, বিধানসভায় অধিবেশন মুলূবি হয়েছে, পালন হয়েছে নিস্প্রদীপ সন্ধ্যা-------এ সবই ভারতের সক্রিয় যোগদানের আগে।
কেন হয়েছিল? আর কয়েক বছর আগেই দলে দলে মানুষ 'পূর্ব পাকিস্তান' থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে রেফুজি হয়েছিলেন, তথাকথিত ধর্মীয় পার্থক্যে কিংবা তার ভয়ে।
আবার সেই মানুষের জন্যই সমর্থন ? কেন ?
কারন অধিকাংশ সাধারন মানুষ সম্ভবত রক্তপাত পছন্দ করেন না যতক্ষন তাদের গেলানো না হয় রক্তপাতের নিরিখে দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা।
সুতরাং খুব ছোট করে এনে বলতে চাই, এই রক্তপাত : গরু ছাগলের হিসাবে মাথা প্রতি হিসাবে মানুষ জবাই যারা করলেন, যে কারনে করলেন , সে সিস্টেমের কারনে করলেন, তাদের কী যারা রক্তপাত বিরোধী তারা কিছুই বলবেন না ? বদলাবেন না ?
মুজিব সাহেবের , আমার কাছে আরও মনে হয়, একটা দুধের শিশুকে যারা গুলি করতে পারে , তাদেরতো ফাঁসিতে ঝোলানো হল ( ফাঁসি সমর্থন যোগ্য কিনা , রাস্ট্র কেন মেরে ফেলবে এই প্রসঙ্গ আপাতত বাদ রেখে) ,
এখন যুদ্ধাপরাধীদের কী কিছুই করা হবে না !!!!!
যুদ্ধ, অপরাধ পুরো মানবজাতির বিরুদ্ধে, সেখানে রাজনৈতিক সীমারেখা ভেদাভেদ স্থূল।
( সকীর্ন মনাদের জন্যও বলা, আমার শারীরিক উপস্থিতি সে অঞ্চলে, সেই জায়গার মানুষও মারা গেছেন ১৯৭১ এর খুনোখুনিতে, ফলে আমিও এই দাবী রাখতেই পারি)