মাকসুদ আলমরা যেভাবে বুকে রাখে চলন্ত সভ্যতা কিংবা গরম বাতাস
___________________________________________
নৌকো আটকে ছিল লবনভেড়ির পাশে। ঠিক দুটো কাক, কাকভুষুন্ডির নির্মোহতা কাটিয়ে মাস্তুল ঠুকরে খায়। কাঠের তক্তার সাথে অসম বয়সী ছেলে-মাঝবয়সী চোখে চোখে বোঝাপড়া করতে গিয়ে একজন কাঁপে, অন্যজন দেখে বোকা ম্যাগটেটিক ট্যাপের ছায়াবাজি।
আটোচালক ততক্ষনে তর্জমা শেষে বুঝে গেছেন, এ সাহেব-বাবু নন, এটি বাবু কিঞ্চিৎ খসখসে, মোলায়েম ত্বক নেই, ইনানী চরিত্রে অপরিচিত কিন্তু আগুন্তুক নন।
খড়ড়ড়!! খড়ড়ড়ড়!! ম্যাডাম---ভাবী---আপা----দিদি, দিদি !!! কিস্যু না, তেলে পানি পড়ছে মোনায়: এই প্রথম, কথা বলেন, মাকসুদ।
এই যে দেখেন, সব লবনের প্যাকেট হয়। আপানদের আইকানেতো আরও বড় বড়।
এই মিঞা, চাটগাইয়া জানেন না নিকি? কনডে-মনডে কন না ?
হে হে হে, ভাইজান....দাদা, ঢাকার কথা আমি পাক্কা জানি।
মিয়া, ঢাকাতে কী বিলাতি বাংলা কয় নাকি ?
আমার কথা কী ঢাকাইয়া নিকি ?
------দিদিরে দেইখ্যা মনে হয়, গুলশান.......আরে ভাই, আমি ...........ইন্ডিয়া ........ঢাকায় লবনের বড় কারখানা....সমুদ্রের পাড়........
মাকসুদ আলম, বুঝতে বুঝতে আটকে যায় । তারপর গাড়ি থামিয়ে..........চেঁচামেচি করে বলে ওঠে, কলিকাতা...........
ত্রিপুরা.............এই পাহাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমার গৃহস্থবাজি।
আলম, এইবার হালকা বার্মা'র দিকে যেতে চায়, থামিয়ে ভূগোল সেরে, জলে গরুর হাঁটাহাঁটি দেখি, কানাডা ফেরত পরিবারকে দেখি, আড়চোখে দেখি তাদের পর্যবেক্ষন।
মাকসুদ এইবার গাড়ির চাবি আমার হাতে ধরিয়ে, বুকে হাত দিয়ে বলে উঠে: ভাইজান, সাবধানে, আমরা মানুষ ভালা না .....হাতপাইত্যা পইসা লই, আমার দিলে কয়, আপনে আইজ পইসা কড়ি খোয়াইবেন ভালাই।
মাকসুদ বয়সে আমার মতই। আমি শুধু ব্যাখ্যা করছিলাম, একটা পার্থক্য,
আমার তথাকথিত শিক্ষা ভিত্তিক চাতুর্যে, তার ভালবাসার প্রতিশ্রুতিও বুঝে নিচ্ছিলাম বুদ্ধিকরে: হুম, তুমি মিয়া মানুষ খারাপ না, কিন্তু বিদেশীর কাছে দেশের কথা .......হ ! দেশ কৈ!! একই তো বিষয় ......একই কাহিনী।
সম বন্টন....আমি মুখ ফুটে মাকসুদকে সম বন্টনের কথা সেসময় আর বলি না.......বলি না কারন আমরা এই প্রকারই.....বুঝে নেব .....কথা বলব, নিজের খোলসে, যেখানে আসলেই বলার বদলে চাবকানো দরকার।
প্রচুর ছবি তোলা। আমার মেয়েটি ভয়ানক ঘুমে। তার আগেরদিনও হাসপাতালে ছিল। ডাক্তার বল্লেন, কোনও ভয় নেই।
মাকসুদ ফেরার পথে হঠাৎ গাড়ি ৬০ কিলোমিটার ঘন্টায় নিল: লুঠপাঠ হতে পারে ......রেফুজি এবং স্থানীয় সম্মলনে, সেনা আসতে পারে।
দু'জন আমার পরিচিত মুখ দেখে, গাড়ি থামাতে বল্লাম, গাড়ি থামল, তারা উঠলেন, মাকসুদ, হা হল কিছুক্ষন......তারপর হাসল।
পরে সেই প্রতিক্রিয়ায় বল্লেন, দাদা আপনেরে যেন বুঝলাম কিন্তু বুঝলাম না ।
পরিচিত তো তারা আপনার না । আমি বল্লাম: পাহাড় পেরিয়ে আমার ঘর। পাহাড় থেকে নেমে সমতলে আমার ঘর।
মাকসুদকে নিয়ে ডাক্তারের বাড়ি গেলাম। তাকে ২০০ বেশি দিলাম। তখন আবার মাকসুদ বল্লেন, আমার ফোন নম্বর রাখেন, কক্সবাজার আবার আইলে, কোনও দিকে না চাইয়া আমারে ফোন দিবেন।
আলম মিয়াকে বল্লাম, ভাই, দিলটা সাফ রাইখ্যা আওয়াজ দিতে হবে, সবার দুইবেলা খাবার।
মিয়া আমারে এইবার জড়ায়া ধইরা কইলো, সাহস পাইতাছিলাম না, আপানারে আঞ্জা কইরা ধরার।
তারপর দিন চট্টগ্রামে নির্ঝর ও অনান্যদের সাথে গুলতানি করে, পাসপোর্টে সিল করিয়ে, খুচরো ফেরত না পেয়ে, অভিযোগ সেখানেই জমা রেখে 'সীমান্ত' পেরিয়ে গেলাম কিছু না বুঝেই মার্চের প্রথম সপ্তাহে।