somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:) ছায়াসঙ্গী ‘সোনা’ স্কুলে যায় সুমিতার সঙ্গেই :)

২২ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসঘরে সুমিতার সঙ্গে শালিক ‘সোনা’

সুমিতার সঙ্গেই প্রোমোশন পেয়ে ক্লাস সিক্সে উঠল সোনা। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই।
তা কেমন করে হয়?
কেন? বন্ধুত্বের জোরে।

তিন বছর ধরে সোনা যে সুমিতার ছায়াসঙ্গী। সুমিতার সঙ্গেই ঘুমায়, তার সঙ্গেই ঘুম থেকে ওঠে, সুমিতার হাতেই খায়, স্কুলেও যায় সুমিতার সঙ্গে। ফেরেও এক সঙ্গে। তিন বছর ধরে এমনটাই দেখে আসছে রায়গড়ার জঙ্গল ঘেরা মুনিসিংহ গ্রামের লোকজন। সুমিত ও সোনার সখ্য এ অঞ্চলে এখন গল্পকথা।

ইন্টারনেট, শপিং মল, সাইবার কাফে, ঝাঁ চকচকে গাড়িবাড়ির অনেক অনেক দূরে ওড়িশার এক প্রত্যন্ত গ্রাম মুনিসিংহ। এ যেন এক অন্য বসুন্ধরা। যেখানে এখনও মেলে জঙ্গলের নিবিড় গন্ধ, বনের পাখি এসে মিতালি পাতায় মানুষের সঙ্গে। বসুন্ধরার এই অংশে এখনও টাকাকড়ির থেকে বেশি দাম পায় হৃদয়ের সম্পর্ক। আর তারই প্রমাণ ১১বছরের ছোট্ট মেয়ে সুমিতা প্রধানের সঙ্গে শালিক পাখি সোনার এই অমলিন সখ্য।

এই বন্ধুত্বের সূচনা তিন বছর আগে। রায়গড়ার মুনিগুড়া ব্লকের মুনিসিংহ গ্রামের আদিবাসী শ্যামলবরণ কন্যা সুমিতা লাজুক হাসির সঙ্গে নিজেই জানাল সেই কথা। তার কথায়,“বছর তিনেক আগে গ্রামের পুকুরে স্নান করতে নেমেছি, হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে কাঁধে বসল একটা শালিক। কাঁধ থেকে নামতেই চায় না। আমার সঙ্গেই বাড়িতে এল। সেই যে এল, আর যায়নি। ওর নাম রাখি সোনা। বাড়িতে থাকলে সারাদিন আমার কাছেই ঘুরঘুর করে। এমন কী আমার সঙ্গেই স্কুলে যায়। পড়ার সময় খাতা ও বইয়ের উপরেও বসে পড়ে মাঝেমধ্যে। সারাদিন যতক্ষণ স্কুলে থাকি, সোনা ক্লাসের মধ্যেই থাকে। আবার আমার সঙ্গেই বাড়ি ফেরে। খায় শুধু আমার হাতে। রাতে আমার বিছানাতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। ও আমার দিনেরাতে অষ্টপ্রহরের সাথী। কি ভালই যে বাসে আমাকে।”

বাড়ির লোক মেনে নিলেও গোড়ার দিকে স্কুলে শিক্ষকরা বিরক্ত হতেন সুমিতার সঙ্গে সোনাকে দেখে। সুমিতাকে বলতেন,“যাও পাখিটাকে বাইরে রেখে এসো।”

কিন্তু এমনিতে শান্ত হলেও সোনা তার বন্ধু সুমিতার কাছছাড়া হতে নারাজ। তাড়া দিলেও ক্লাস থেকে যেত না। শেষে হাল ছেড়ে দেন শিক্ষকরা। এখন অবশ্য সুমিতার অন্য সহপাঠীরাতো বটেই, শিক্ষকরাও ভালবেসে ফেলেছেন সোনাকে। আর তাই তো, চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম, তারপর ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস রুমেও সোনার অবাধ প্রবেশাধিকার। সুমিতার ক্লাসের অন্য বন্ধুরা বলে,“পরীক্ষা না দিয়েই সোনা ক্লাসে প্রমোশন পেয়ে যায়। কী মজা ওর।”

মুনিসিংহ এখন শুধু অখ্যাত গ্রামের নাম নয়। প্রাণী ও মানবের সখ্যের হৃদয়ভূমি।

সুমিতার দৃষ্টান্ত দেখে এই গ্রামে ছোটবড় সবাই এখন অনুপ্রাণিত। আর তাই জঙ্গলঘেরা এ গ্রামে পা দিলে বনের সোঁদা গন্ধের সঙ্গে মিলবে ভালবাসারও গন্ধ। বসুন্ধরার সব থেকে বড় সম্পদ।

-অনমিত্রা সেনগুপ্ত, ভুবনেশ্বর: আনন্দবাজার; ২২/৩/১০।
৩৭টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×