somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ডলফিন'

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে কলকাতা সায়েন্স সিটি গেলাম। উদ্দেশ্য ‘ডলফিনে’র উপর একটা সিনেমা দেখা।

প্রথমে বেশ খানিকটা ঘোরা হল।




[কি কি দেখছেন বলুন তো!]




তারপর স্পেস থিয়েটারের বিশাল গোলাকার স্ক্রিনে অদ্ভূত সুন্দর ৪৫মিনিটের সিনেমাটা দেখে খুব ভাল লাগল।



যেটুকু মনে আছে লেখার চেষ্টা করছি।


বাহামার হোপটাউনের ঘন নীল স্বচ্ছ সমুদ্রে ক্যাথলিন নামে এক বিজ্ঞানী পরম মমতায় ডলফিনদের উপর কাজ করছেন। তিনি সমুদ্রের নিচে ডলফিনের আচরণ, স্বর প্রয়োগ এমন কি তারা যে পরস্পরের সাথে মানুষের মতই কথা আদান প্রদান করে তা বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে জানেন।


স্পটেড ডলফিন যেমন চুঁচুঁ, চিঁচিঁ করে ডাকছে। কখনও বা আনন্দে সিটির মত আওয়াজও করছে!
দুটি যুবক ডলফিন যখন ঘুরছে নিজেদের মধ্যে টিকটিক করে ভাবের আদান প্রদান করছে।
তারা পরস্পরকে নাম ধরে ডাকতে জানে।

এমন কি মানুষের মত মা ডলফিন সন্তানদের নানা শিক্ষা দিতে প্রচুর কথা বলে থাকে।

এরা স্বচ্ছ জলে থাকতে ভালবাসে। এতে একে অন্যকে স্পষ্টরূপে দেখতে পায়। মানুষের মধ্যে যেমন শুধু ধ্বনি ছাড়াও স্পর্ষের গুরুত্ব আছে তেমনি ডলফিনদের মধ্যেও স্পর্ষের মাধ্যমে সম্পর্ক সুগাঢ় হয়।


যদিও এদের নিয়ে কাজ করা সহজ ব্যাপার নয়। একটি দল খাদ্য সংগ্রহের জন্য কিছু সময়ের মধ্যে ৫০মাইল পথ অতিক্রম করে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে।
এরা সমুদ্রের তলদেশের অনেক নিচ থেকেও চোখ বন্ধ করে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। আসলে এরা ধ্বনির প্রয়োগ করে। এই ধ্বনি মাটির নিচে খাদ্যে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। ফলে ডলফিনরা সহজেই খাদ্যের সন্ধান পেয়ে সেখান থেকে খাদ্য খুঁড়ে বার করে।

ডলফিনের ঘুমটাও বেশ মজার! এরা এক চোখ বুজ়ে আর অপর চোখ খুলে ঘুমায়। এসময় অর্ধেক মস্তিস্ক বিশ্রাম নেয় আর অর্ধেক খুব সতর্ক ভাবে শত্রুর গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখে।

এরা লেজ দিয়ে পরস্পরের পিঠ থপথপিয়ে প্রেম নিবেদন করে।

তবে সব সময় যে এরা খুব শান্ত তা নয়। বয়স্ক পুরুষ আধিপত্য বজায় রাখতে ছোট পুরুষদের মারে। এদের লেজের শক্তি সাঙ্ঘাতিক! কখনও কোন ডলফিন যদি চোয়াল খুলে এগিয়ে আসে তখনই সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত।

এছারা এরা মানুষের মতই দলবদ্ধ ভাবে আনন্দে শান্তিতে থাকতে ভালবাসে।

আলেকজান্ড্রা স্কুলের ছোট বাচ্চাদের ডলফিন সম্পর্কে জানান। তাদের ডলফিনের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এভাবে শিশুকাল থেকে তারা সমমনস্ক আরেক বন্ধুর সাথে পরিচিত হতে থাকে।

দলবদ্ধ ভাবে ডলফিন যখন শিকার করে তখন তারা খুব উঁচুতে লাফ মারে। আসলে তারা লাফিয়ে ৫মাইল দুর পর্যন্ত খাদ্যের সন্ধান করে নেয়। দেখে নেয় আশেপাশে পাখিদের দল মাছ শিকার করছে কিনা। সেই দেখেই তারা দল বেঁধে সেদিকে এগোয়।


এরা ছোটমাছের বিশাল ঝাঁককে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং এক এক করে এগিয়ে খিদে মেটায়। তবে এক একবারে কখনই মাছের পুর দলকে খেয়ে শেষ করে দেয় না। কারণ পরে খাদ্যের জন্য এদের সঞ্চয় করতে হবে এ তথ্য ডলফিনরা খুব ভাল বোঝে।

পেট ভরে খাওয়ার পর ডলফিনরা আনন্দ করে।

আর্জেন্টিনার সমুদ্র উপকূলে দেখা যায় শ্যামল ডলফিনরা খুব আনন্দে জুটি বেঁধে থাকে। পুরুষ ডলফিন মন পাওয়ার জন্য মেয়ে ডলফিনের নিচে উল্টে সাঁতার কাটে।

ডলফিনরা সামাজিক জীব। ক্যাথলিনের মতে তার পরিচিত ডলফিনের দলটির সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর বিভিন্ন সময় তিনি দেখেন ডলফিনরা তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।


আরেক বিজ্ঞানী ডিওনের খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় জোজো নামে এক ডলফিল।
মানুষ জানার ইচ্ছায় অনেক সময়ই সীমা অতিক্রম করে অন্যের স্থানে চলে যায়।
এমনই ঘটেছিল জোজোর সাথে। এক সময় জোজো মানুষ দেখলেই আক্রমণ করত। তাকে খুনী আখ্যা দিয়ে হত্যার ভাবনাও আসে।
কিন্তু বিজ্ঞানী ডিওন এগিয়ে আসেন। জোজোর এমন আচরণের কারণ সন্ধান করতে।

তিনি জোজোর বাসস্থানকে প্রথমে নিরাপদ করেন। বন্ধুত্ব করার জন্য তার আশে পাশে সাঁতার কাটতে থাকেন। বহুদিন তাকে জোজোর মন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।
প্রথমটা জোজো তেড়ে এলেও পরে আক্রমণের চেষ্টা ছেড়ে দেয় কিন্তু বন্ধুত্বও করে না। দুরে দুরে থাকে।
কিন্তু এক অসতর্ক মুহূর্তে ডিওন হাতুড়িমুখো সার্কের কাছাকাছি চলে এলে বহুদুর থেকে তা লক্ষ্য করে জোজো সার্কের দিকে তেড়ে যায় আর ডিওনের প্রাণ রক্ষা করে।


এরপর ধিরে ধিরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। জোজোর প্রিয় হল ছোট্ট জ্যান্ত রঙিন মাছ নিয়ে খেলা।
ডিওন প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় জোজোর সাথে দেখা করতে যেতেন, সাঁতার কাটতেন, রঙিন মাছ নিয়ে খেলতেন।

এরপর কাজের জন্য ডিওনকে কিছুদিন অন্য জায়গায় থাকতে হয়। কিছু মাস পর আবার জোজোর সাথে দেখা করতে গেলে ডিওন লক্ষ্য করেন অভিমানী জোজো তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
তারা পরস্পর বন্ধু হলেও ডিওন যানেন তাদেরও কিছু সীমা আছে। তাই তিনি জোজোকে জোরাজুরি করেন না। আবার তার মন পাওয়ার জন্য দুর থেকেই তার সঙ্গী হন।
তিনি যানেন রঙিন মাছের খেলা জোজো ভালবাসে।
আর ভালবাসে বুদ্‌বুদের রিং। তিনি জলে বড় বড় বুদ্‌বুদের রিং তৈরি করে জোজোকে জানান তিনি জোজোকে খুব ভালবাসেন।

ডিওন বলেন তিনি তার সব সঞ্চয় উজার করে দিতে পারেন কেবল এক ঘন্টা জোজোর সাথে তার ভাষায় কথা বলার জন্য।


আসুন আমরা সবাই অন্ধকার দুর করি, সমুদ্রের সব প্রাণী যেখানে আনন্দে মুক্ত রূপে থাকে।।

৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×