somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫৬

১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে রাজপুত্রগণের অস্ত্রশিক্ষার পরীক্ষাঃ



সকল শিষ্য যখন স্ব স্ব বিদ্যায় প্রখর হয়ে উঠলেন তখন দ্রোণ অন্ধ নৃপতি ধৃতরাষ্ট্রের সভায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। ভীষ্ম, কৃপাচার্য এবং অন্যান্য সকল ক্ষত্রিয়দের সামনে ভরদ্বাজ পুত্র নিবেদন করলেন সকল কুমার বিদ্যায় প্রখর হয়ে উঠেছেন। তাদের বিদ্যার পরীক্ষা নেওয়া হোক। শুনে ধৃতরাষ্ট্র অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বিদুরকে ডেকে আজ্ঞা দিলেন পরীক্ষা স্থল নির্মাণের। রাজ আজ্ঞা পেয়ে দ্রোণের নির্দেশে বিদুর রঙ্গভূমির সজ্জা শুরু করলেন।

একটি প্রশস্থ স্থান তার চারদিক সমতল, রঙ্গভূমি তার ভিতর রচনা করা হল। চারদিকে উঁচু গৃহ নির্মিত হল, সেগুলি নানা রত্নে সাজান হল। রাজাদের বসার জন্য বিচিত্র পালঙ্ক শয্যা রাখা হল। রাজনারীদের জন্য আলাদা স্থান নির্মাণ করা হল। জলের জন্য সুকোমল মঞ্চ নির্মাণ হল। এভাবে রঙ্গভূমি তৈরী করে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে জানালেন।

শুভদিনে সকলে চললেন। কৃপাচার্য, ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম সকলে এলেন। বাহ্লীক পুত্র সোমদত্তকে নিয়ে চললেন। আরো অনেক রাজপুরুষরা এলেন।

সুবলরাজার কন্যা গান্ধারী, কুন্তী এবং আর অন্তঃপুরনারীরাও এলেন। রথে, গজে, অশ্বপৃষ্ঠে, মঞ্চের উপর সকলে বসলেন রাজপুত্রদের শিক্ষার নিদর্শন করতে।


আচার্য দ্রোণ

নানা বাদ্য বাজতে লাগল। যেন প্রলয়কালে সিন্ধু কল্লোলিত হয়ে উঠল, কানে তালা লাগার মত অবস্থা হল। এই সময় আচার্য দ্রোণ মঞ্চে উপস্থিত হলেন। মনে হল যেন তারাদের মাঝে চন্দ্রের উদয় হল। সাদা বস্ত্র পরিধান করে, শুক্ল কেশে, শুক্ল পুষ্পের মালা গলায় দিয়ে তিনি উপস্থিত হলেন।

পুত্রদের নিয়ে গুরু সভা মাঝে উপস্থিত হলেন। শুক্লবাস পরিহিত দ্রোণ সর্বাঙ্গে শুক্ল মলয়জ অর্থাৎ শ্বেত চন্দন লেপন করেছেন।


যুধিষ্ঠির

দ্রোণ সকলের প্রথমে যুধিষ্ঠিরকে মঞ্চে আসতে আজ্ঞা করলেন। সভায় প্রবেশ করলেন যুধিষ্ঠির। বিকশিত পদ্মের মত নির্মল শরীর। ধনুকে টঙ্কার দিয়ে শর স্থাপন করলেন। ধনুর গুণের মহাশব্দে লোকে ভয় পেল। যুধিষ্ঠির এক অস্ত্রে বহু অস্ত্র সৃজন করলেন। বায়ু সংক্রান্ত, অগ্নি সদৃশ্য বহু অস্ত্রের চমৎকারিত্ব দেখে সকলে ধন্য ধন্য করে প্রশংসা করলেন। সকলে মানলেন তার মত বীর কেউ নেই। দ্রোণ যুধিষ্ঠিরকে আসন গ্রহণ করতে বললেন।


ভীম ও দুর্যোধন

এরপর দ্রোণ ভীম ও দুর্যোধনকে মঞ্চে আসতে নির্দেশ দিলেন। গদা হাতে দুই বীর উপস্থিত হলেন। মল্লবীরদের মত বেশ পরিধান করে, শরীরে মাটি লেপলেন দু’জনে। মাথায় মুকুট ধারণ করলেন দুই বীর। দেখে মনে হল যেন দুটি পর্বতের চূড়া। গদা হাতে ভীম ও দুর্যোধন দু’জনে দু’জনকে প্রদক্ষিণ করতে লাগলেন। তাদের হুঙ্কারের শব্দে সকলের কানে তালা লেগে গেল। মনে হল দুই মত্ত হস্তি পরস্পরকে শুঁড় দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। চরণে চরণে, মুন্ডে মুন্ডে দু’জনে আঘাত করতে লাগলেন। তাদের ভয়ঙ্কররূপ দেখে সকলে আতঙ্কিত হলেন। ধিরে ধিরে সভা দু’ভাগে ভাগ হতে থাকে। কেউ বলে বীর বৃকোদর মহাবলীয়ান। কেউবা বলেন ভীমের থেকেও বীর কুরুবীর। দু’দলের এই কথা কাটাকাটিতে দর্শকাসনেও গন্ডোগোল শুরু হল। ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী ও কুন্তী তিনজনে বিদুরের সাথে কথা বললেন। তাদের অন্তরের আবেদন বুঝে দ্রোণ ভীম ও দুর্যোধনকে আসন গ্রহণ করতে নির্দেশ দিলেন।


অর্জুন

ভীম ও দুর্যোধন নিবৃত্ত হলে দ্রোণ মঞ্চে অর্জুনকে আসতে আজ্ঞা দিলেন। ধনঞ্জয় ধনুঃশর হাতে উপস্থিত হলেন। নতুন মেঘের মত প্রায় তার অঙ্গের বর্ণ। পূর্ণচন্দ্রের মত তার মুখ, পদ্মের মত তার দুই চক্ষু। তাকে দেখে সভাজন সকলে মোহিত হলেন। কেউ জয়ধ্বনি করলেন কুন্তীর পুত্র এলেন বলে। কেউবা পান্ডুপুত্র মধ্যম পান্ডব বলেন। কেউবা বলেন এই পুত্রই কুরুশ্রেষ্ঠ এবং শত্রুদের কাছে যম স্বরূপ। সকলে এক বাক্যে মেনে নেন এই কুমারই বীর ধর্মশীল এবং সাধু ব্যক্তি হবেন। এর সমান বীর্য্যবান ভূমন্ডলে আর কেউ নেই। এমন কথাবার্তা চলতে চলতে হঠাৎ সকলে ধন্য ধন্য রব করে উঠলো।


কুন্তীদেবী

শব্দ শুনে ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে জিজ্ঞেস করলেন কি কারণে এই জয়ধ্বনি। বিদুর বলেন, রাজা অর্জুন উপস্থিত হওয়াতে সভাসদ সকলে তার গুণ প্রশংসা করছেন। ধৃতরাষ্ট্রও নিজেকে ধন্য মনে করলেন কুরুবংশে এরূপ পুত্র আগমনের বার্তা শুনে। তিনি কুন্তীকেও ধন্যবাদ জানালেন এরূপ সুলক্ষণযুক্ত পুত্রের জননী হওয়ার জন্য। কুন্তীদেবী শুনে আনন্দিত হলেন। তার চক্ষু সজল হল, স্নেহানন্দে স্তন থেকে দুগ্ধ ক্ষরিত হল।


এভাবে পার্থ মহাবীর সভা মাঝে উপস্থিত হলেন। ধনুকে টঙ্কার দিয়ে তার বীরত্বের সূচনা করলেন।

অনল অস্ত্র মারতেই অগ্নি বর্ষণ হল। সেই অগ্নি উপরে উঠে স্পর্ষ করল আকাশ। দেখে সকলে বিস্মিত হলেন। সকলে দেখলেন চতুরদিক অগ্নিময় হয়ে উঠেছে।


এরপর অর্জুন বরুণ বাণ মারলেন। অগ্নিবর্ষণ বন্ধ হয়ে জলধারা শুরু হল।
আবার বায়ু অস্ত্রে সেই জলবর্ষণ বন্ধ করলেন।
আকাশ অস্ত্রে আবার সেই বায়ুতে আবরণ দিলেন।
পর্বত অস্ত্রে তিনি গিরিবর সৃজন করলেন।
বজ্রশরে সেই গিরি চূর্ণ করলেন।
ভূমি অস্ত্রে ভূমন্ডল সৃজন করলেন।
সিন্ধু অস্ত্রে সব কিছু জলে পূর্ণ করলেন।
অন্তর্দ্ধান অস্ত্র মেরে নিজে লুকিয়ে গেলেন। কোথায় আছেন পার্থ তা কেউ খুঁজে পেল না। কখনও বা তাকে রথে, কখনওবা ভূমিতে দেখা গেল। বেদের বাজির মত তিনি চতুর্দিকে ঘুরতে লাগলেন।

এভাবে অর্জুন তার নানা বিদ্যা প্রদর্শন করলেন। সকলে তাকে ধন্য ধন্য করতে লাগলেন। সকল বিদ্যা দেখিয়ে অর্জুন বাহ্বাস্ফোটে(তাল ঠোকার শব্দ) বজ্রের ধ্বনি নির্গত করলেন। সে শব্দে সকলের কর্ণে তালা লেগে গেল। শেষে গুরু দ্রোণের কাছে গিয়ে কৃতাজ্ঞলি করলেন।
....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫৫
Click This Link
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×