somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৩

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা : শক্ত্রির পুত্র পরাশর পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলে পিতামহ বশিষ্ঠ তাকে শান্ত হতে বলে কৃতবীর্য্য-চরিত ও ভৃগুপুত্র ঔর্ব্বের বৃত্তান্ত শোনালে তিনি শান্ত হন কিন্তু পিতৃহন্তা রাক্ষস বধ যজ্ঞ শুরু করেন...রাক্ষসরা মরতে থাকলে পৌলস্ত্যমুনি তাকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন...]

বশিষ্ঠ মুনির ক্ষমাঃ



গন্ধর্ব অর্জুনকে বলেন – হে, পান্ডুর নন্দন! সব পুরাতন কথাই তোমায় বললাম। বশিষ্ঠের ক্ষমার সমান সংসারে কেউ নেই। বিশ্বামিত্র তাঁর শতপুত্র সংহার করল, তবু তাকে সে রাগ দেখায় নি। যমের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বুঝে মুনি তাকে ক্ষমা করে দেন। নৃপতি কল্মাষপাদ, যিনি তাঁর শতপুত্র নাশ করল, তাকেও তিনি আপন ঔরসে পুত্র দান করেন।

অর্জুন বলেন – কহ কি কারণে বশিষ্ঠ এমন কাজ করলেন। পরের স্ত্রী, তাঁর উপর অধর্মও বটে।


গন্ধর্ব বলেন- শুন তাঁর কারণ। বশিষ্ঠের পুত্র শক্ত্রিমুনির অভিশাপে রাজা কল্মাষপাদ যখন রাক্ষস হয়ে ক্ষুধার জ্বালায় আকুল হয়ে অরণ্যে ঘুরছেন তখন তাঁর এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর সাথে দেখা হল। রাজাকে রাক্ষসরূপে দেখে তারা পালাল। রাক্ষসরাজা দৌড়ে গিয়ে ব্রাহ্মণকে ধরল। ভয়ে তাঁর যুবতী ব্রাহ্মণী বিলাপ করতে লাগল।
কাতর স্বরে ব্রাহ্মণী বলল – হে, সৌদাস পুত্র, তুমি পৃথিবীর রাজা। তোমার পূর্বপুরুষরা সকলে ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধা করতেন। তুমি আমার স্বামীকে হত্যা করো না। আমি প্রথমবার ঋতুস্নান করলাম। বংশরক্ষার্থে আমার স্বামীর প্রাণদান করুন। যদি বেশি ক্ষুধার্ত হন তবে আমার স্বামীকে ছেড়ে আমায় ভক্ষণ করুন।

কিন্তু বাহ্য জ্ঞানশূণ্য রাজা ব্রাহ্মণীর কাতর উক্তি কিছুই শুনতে পেলেন না। বাঘ যেমন পশু শিকার করে ভক্ষণ করে, তেমনি রাক্ষসরূপী রাজা ব্রাহ্মণের ঘাড় ভেঙ্গে রক্তপান করল।

ব্রাহ্মণের মৃত্যু দেখে ব্রাহ্মণী স্তব্ধ হয়ে গেলেন। বন থেকে কাঠ কুড়িয়ে এনে আগুন জ্বাললেন।
অগ্নিকে প্রদক্ষিণ করে রাজাকে ডেকে বলেন – ওরে দুষ্ট, দুরাচার! আমি শাপ দিলাম আমার ঋতুরক্ষার্থে স্বামীকে না পেয়ে যেমন নিরাশ হলাম, তেমনি তুইও নিরাশ হবি। স্ত্রীকে স্পর্শ করলে তোরও অবশ্যই মৃত্যু হবে। এ অভিশাপ কেউ খন্ডন করতে পারবে না। তবে সূর্য্যবংশ রক্ষার্থে উপদেশ দিতে পারি তোর বংশ রক্ষার একমাত্র উপায় কোন ব্রাহ্মণই হবেন।
এই বলে ব্রাহ্মণী অগ্নি মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

বারো বছর রাজা রাক্ষস হয়ে বনে ঘুরে বেড়াল। বশিষ্ঠের সাহায্যে তিনি মুক্ত হলেন। চেতনা ফিরে পেয়ে তিনি দেশে ফিরে গেলেন।
স্নান, দান, জপ, হোম করে সিংহাসনে বসলেন। স্ত্রী মদয়ন্তীর শয়নকক্ষে গেলেন। স্ত্রী মদয়ন্তী রাজাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন ব্রাহ্মণীর সেই অভিশাপের কথা। রাজাকে রক্ষা করার জন্য তিনি তাকে স্পর্শ না করার অনুরোধ জানালেন। রাণীর কথায় রাজা নিজেকে সংযত করলেন। কিন্তু বংশরক্ষার কথা ভেবে চিন্তিত হলেন। সকলে বশিষ্ঠের স্মরণ নিতে বললে রাজা মুনি বশিষ্ঠের কাছে নিজের মহিষীকে পাঠিয়ে ছিলেন। এভাবে বশিষ্ঠের ঔরসে রাজার সন্তান হল। এভাবে সূর্য্যবংশ রক্ষা করেন বশিষ্ঠ মুনি।

সমস্ত ঘটনা জেনে অর্জুন সন্তুষ্ট হলেন। গন্ধর্বকে অর্জুন বিনয়ের সাথে বলেন – আপনি সব জানেন। আমি ব্যগ্র জানতে যে আমাদের উপযুক্ত পুরোহিত কে আছেন! রাজারা পুরোহিতের তেজে অনেক সঙ্কট থেকেই রক্ষা পান দেখছি।


গন্ধর্ব বলেন – দেবল ঋষির কনিষ্ঠ ভাই ধৌম্য উৎকোচক তীর্থে তপস্যা করছেন। তাঁকেই পৌরোহিত্যে বরণ করতে পারেন।

শুনে পার্থ প্রসন্ন হলেন। গন্ধর্বরাজাকে তিনি বলেন যা কিছু গন্ধর্বরাজ দান করলেন তা এখন তাঁর কাছেই থাকুক। দরকার মত তিনি চেয়ে নেবেন। গন্ধর্বরাজ খুশি হলেন। তারপর তারা পরস্পরকে সন্মান দেখিয়ে নিজেদের অভীষ্ট স্থানে প্রস্থান করলেন।

কুন্তীসহ পঞ্চপান্ডব উৎকোচক তীর্থে গিয়ে ধৌম্যকে পুরোহিত রূপে বরণ করলেন। ধৌম্য আনন্দিত হয়ে তাদের আশীর্বাদ করলেন। ধৌম্যকে নিয়ে পান্ডবরা পাঞ্চালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে আরো অনেক ব্রাহ্মণদের সাথে দেখা হল।


ব্রাহ্মণরা প্রশ্ন করেন - তোমরা পাঁচজন কে, কোথা থেকে আসছো, কোথায় বা চলেছো!
যুধিষ্ঠির বলেন – একচক্রা থেকে পাঁচভাই মাকে নিয়ে যাচ্ছি।
ব্রাহ্মণরা বলেন – আমাদের সাথে চল পাঞ্চালরাজের কন্যার স্বয়ম্বরে। বহুদিন থেকেই সেখানে ব্রাহ্মণরা আসছেন। সবাই বিজয়ের আশায় বহু ধন দান করছেন। সেই সাথে অদ্ভূত স্বয়ম্বরও দেখা হবে। তোমাদের পাঁচজনকে দেখে যদি পাঞ্চালীর মনে ধরে তাহলে হয়ত কাউকে তিনি বরণও করতে পারেন। তোমরা পাঁচজনেই দেবতুল্য রূপবান, তিনি কাকে পছন্দ করেন সেটাও দেখার।
এত বলে ব্রাহ্মণরা তাদের সঙ্গে নিয়ে পাঞ্চালনগরে চললেন।
আদিপর্বের সবচেয়ে উত্তম বশিষ্ঠ উপাখ্যান।
কাশীরাম দাস কহেন, শুনে পুণ্যবান।
....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭২

Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×