[পূর্বকথা : শক্ত্রির পুত্র পরাশর পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলে পিতামহ বশিষ্ঠ তাকে শান্ত হতে বলে কৃতবীর্য্য-চরিত ও ভৃগুপুত্র ঔর্ব্বের বৃত্তান্ত শোনান..]
পরাশরমুনির যজ্ঞঃ-
এত শুনে পরাশর মুনির ক্রোধ শান্ত হল। কেবল রাক্ষস মারবেন বলে অঙ্গীকার করে বলেন – রাক্ষস আমার তাত(পিতা)কে ভক্ষণ করল। সেই পিতৃবৈরী নিশাচরদের হত্যা করব। পৃথিবীতে রাক্ষসের চিহ্ন রাখব না।
পরাশর মুনি নিজে এ সঙ্কল্পে এত দৃঢ় ছিলেন যে বশিষ্ঠ মুনিও এতে কিছু করতে পারলেন না।
পরাশর মুনি রাক্ষসবধ যজ্ঞ শুরু করলেন। সে ছিল এক অদ্ভূত যজ্ঞ। সে যজ্ঞে সব রাক্ষস মরতে শুরু করল। বেদমন্ত্র পড়ে পরাশর অগ্নিতে অঙ্গীকার করতে লাগলেন। রাক্ষস সংহারের। মন্ত্রের আকর্ষণে যত রাক্ষস ছিল পর্বত, নগর, বাগান, গ্রাম, দ্বীপ-দ্বীপান্তরে সেই লক্ষ্য লক্ষ্য কোটি কোটি অর্ব্বুদ অর্ব্বুদে হাহাকার কলরব উঠল। ব্যাকুল হয়ে কেউ উচ্চস্বরে কাঁদে। তাদের ভয়ঙ্কর সব রূপ। কারো সাতটা মুন্ড, কারো আঠারোটা হাত। বিকট দর্শন, সারা দেহে ঘন লোম, পর্বতের মত আকারের জিভ লক্লক্ করছে, বিপুল উদর, শুক্ল দেহ। কেউ বা পর্বতের কোটরে লোকাতে চেষ্টা করল। কেউ প্রাণ বাঁচাতে বৃক্ষ চেপে ধরল। কেউ বা সমুদ্রে প্রবেশ করল। পাতালে প্রবেশ করে কেউ বা দিগন্তরে যায়। তবু রাক্ষসসত্র যজ্ঞে আবালবৃদ্ধ সকল রাক্ষস দগ্ধ হতে লাগল। দশদিকে হাহাকার কলরব উঠল। প্রলয়কালে যেন সংসার ধ্বংস হচ্ছে।
পরাশরের যজ্ঞে রাক্ষসরা মারা যাচ্ছে শুনে পৌলস্ত্যমুনি সেখানে উপস্থিত হলেন। ইনি ব্রহ্মার পুত্র ও রাক্ষসদের সৃষ্টি কর্তা। সৃষ্টি নাশ হচ্ছে দেখে তিনি চিন্তিত হলেন। যজ্ঞস্থানে উপস্থিত হলে পরাশর পৌলস্ত্যমুনিকে দেখে উঠে এসে আসন পেতে দিলেন। মনে ক্রোধ নিয়ে মুনি আসন গ্রহণ করে পরাশরকে বলেন – হে, শক্ত্রির নন্দন! বড় যশ উপার্জন করছ, রাক্ষস নিধন করে! বেদশাস্ত্রে জ্ঞান হয়েও এমন কর্ম করছ! কোথায় আছে যে পর হিংসা ধর্ম! সংসারে মৃত্যু আছেই, শরীর ধরলে মরতে হবেই। যা হয়েছে শাস্ত্রানুসারেই হয়েছে। শক্ত্রি অল্প দোষে ক্রোধ করে শাপ দিয়ে নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে এনে ছিল। তুমি আমার বংশ নাশ করো না। যারা তোমার পিতার মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানে না, সেই নির্দোষ রাক্ষসদের মেরে তোমার কি আনন্দ হচ্ছে! যে কাজ করছো তা ব্রাহ্মণ-দ্বিজের নয়। ক্রোধ করে দ্বিজ যদি সংসার বিনাশ করবে, তবে কার শক্তি পৃথিবীকে বাঁচাবে! আমার অনুরোধে, ক্রোধ শান্ত কর। যজ্ঞ শেষ করে বাকি রাক্ষসকুলকে রক্ষা কর। আমার কথা যদি ভাল না লাগে, তো তোমার পিতামহ বশিষ্ঠকে জিজ্ঞেস কর।
বশিষ্ঠ বলেন – পুলস্ত ঠিক কথাই বলছেন। পূর্বেও বলেছি অকারণে হিংসা করলে পাপ জন্মায়। এসব করে কি আবার পিতাকে ফিরে পাবে! ক্রোধ ত্যাগ কর, হিংসা ছাড়। পুলস্ত্যমুনির বাক্য শোন।
অগ্নি
এত শুনে পরাশরমুনি যজ্ঞ শেষ করলেন। কিন্তু অগ্নি পূর্ব অঙ্গীকারে নিবৃত্ত হলেন না। আহুতি না পেয়ে অগ্নি বনে প্রবেশ করলেন। আজও তাই মাঝে মাঝে বনে আগুন ধরে যায়।
....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭১
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫১