আমার ঠাকুরদা খুব রাশভারি লোক ছিলেন । একদম নিজের ভাবনায় থাকেন । তিনি বাড়ির প্রায় যে কোন কাজে সবাইকে ডাকতেন । সবার মতামত নিতেন । কিন্তু সমস্ত আলোচনার শেষে তাঁর ঠিক করা মতামতের ভিত্তিতে সেই কাজ করতেন ।
আর আমাদের মতামতের কোন দাম দিতেন না বলে আমি সবচেয়ে ছোট সদস্য হয়ে খুব রাগ করতাম । মা বাবাকেও রাগ করতে দেখেছি । কাজ ঠিক না ভুল তা সময় বলবে ? সেই বলা অনেক ভুল অনেক ঠিক ও হয়েছে । বাড়ির খাট আলমারি পূর্ব কোনে বা পশ্চিম কোনে যেখানেই রাখা যায় তাই ঠিক । যেহেতু ঠাকুরদা বলেছেন ।
পরে গ্রামের কোন কাজেও তাই হতে দেখেছি । অনেকে অনেক কথা বলেছে । উনি পাত্তা দেন নি । খালি বলত - ভাল কাজের কথা ভাবতে হবে । আর একটা জিনিস আমিও ধীরে ধীরে বড় হতে হতে লক্ষ্য করি , সবার মতামত নেওয়া হবে কিন্তু তাঁর নির্দিষ্ট করা লোকেরাই আগে সুযোগ পাবেই পাবে । তাতে সারা গ্রামে ধীরে ধীরে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল ।
ঠাকুরদা খুব একটা পাত্তা দিতেন না । কারন যে তাঁর সঙ্গে মত বিরোধে এসেছে সে ই সরে যেতে বাধ্য হয়েছে । ঠাকুরদার মতে হ্যাঁ বলার লোকও কম ছিল না ।
এই মান উৎকর্ষ ভাল এ সব ঠাকুরদা আর তার ...... ঠিক করেন , ফলে ভুল ঠিক থাকবেই । তাতে সবার সুযোগ কখনই সম্ভব নয় তাই এ ধরণের বিতর্ক চলতেই থাকবেই ।
অবিচল ঠাকুরদা সময়ের হাত ধরে এগিয়ে চলার বিভাজনে নিজেকে বদলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু নিজের সংস্কারে বাধা পেয়ে আটকে যেতেন ।
আমি দেখে বুঝেছিলাম তাই আমিও কিছুতেই বলতে পারি নি - না দাদু , ভাল লাগে নি । কিংবা কি গো এ কি যাচ্ছেতাই করলে ।
কিছুজন মুখ ফিরিয়ে নিলেও তাঁর ধারার মূল্যায়ন আমি করতে পারি নি ।
হয়তো তিনিই সফল , হয়তো তিনিই .........।
কিন্তু বিতর্ক পেছন ছাড়ে নি । সবাইকে নিয়ে চলতে হয় , সবার কথা শুনতে হয় , বিশ্লেষণ করতে হয় । তাতে কিছু ভুল থাকলেও ঠিক হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি ।
আমার বাবা এখানে অনেক খানি সফল । কাজ করতে প্রায়ই আমাদের সঙ্গে বসতেন । এমন কি আমি ছোট সদস্য হলেও আমার কথা শোনার জন্য আমি নিজেকে আরো বেশি করে সেই সম্বন্ধে জানার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ।
ভেবেছি অনেক কিছু না জানলে আমি কি করে আলোচনায় কথা বলব । সেই সব আলোচনায় আমারও অনেক শেখা হয়ে যেত ।
বাবা আরো বেশি করে তাঁর বিপক্ষে যিনি বলতেন তাঁর সঙ্গেই তিনি আরো গভীর আলোচনা করতেন । তাঁর না কে নানান বিশ্লেষণের আতস কাচে ফেলে দেখতেন বুঝতেন আর খুব শিখতেন । ফলে বাবার কাজে জীবনমুখীতার স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেতাম ।
আর সবার হাত ধরে সুযোগ খুব জীবনের কথা বলত ।
-০-০-০-