somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জল্লাদ- একটি আপকামিং বাংলা সিনেমা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমা নিয়ে পড়াশুনা করতে গেলে সবথেকে যে বিষয়টা বেশী আসে তাহল সাবজেক্ট। সিনেমার বিষয়বস্তুকে প্রাধন্য দেবার জন্য প্রচুর চাপ দেয়া হয়। অধিকাংশ বই ইংরেজি তার ফলে বিভিন্ন দেশের সিনেমার বিষয়বস্তুতেও থাকে মার্কিন, ইংরেজ প্রভাব। যেরকম সুপার হিরো মুভি, মার-মার কাট কাট একশান, তেলুগু স্টাইল, বলিউড কপি পেষ্ট এবং মূল ধারার ইরানি চলচ্চিত্র। ইরানে সম্রাট আওরঙ্গজেব জন্মায় নি এবং কখন যাই নি। যার ফলে ইরানের ইসলামী মনোভাব আর এ উপমহাদেশের ইসলামী মনোভাব এক নয়। এককথায় বলা যায়, সম্রাট আওরঙ্গজেব ইসলামকে তার মতন করে সাজিয়েছেন এবং বর্তমান বাংলাদেশে যে ইসলাম পালন হয় তার শুরু ঐসময়েই। কোন ইসলামী বা আসমানী কিতাবে লেখা আছে বিয়েতে গায়ে হলুদ দিতে হবে ? নেই কোথাও। অন্য কোথাও দেয়না। এটা বাংলার নিজস্ব কালচার। এরকম প্রায় সব বিষয়ে আছে আমাদের মৌলিকত্য। সেগুলো যারা ধরতে না পারে, আর তারাই যদি সিনেমা বানায় তাহলে যা হয়, তাই হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের প্রতি দুর্নাম, ভুল ধারনা প্লাস একের পর এক হল উঠে যাওয়া- আরও জানতে চান ?

সিনেমার বিষয়বস্তু ঠিক করার এক বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে, একটা টিম গঠন করে- একটা সাবজেক্ট চুজ করে, রানডমলি প্রশ্ন করা। প্রশ্নের উত্তর থেকে বের হয়ে যাবে গল্পের কাহিনি। আচ্ছা একটা সাবজেক্ট ধরা যাক বাংলাদেশের পেক্ষিতে- ( খুন ) ।
এবার প্রশ্নের পালা- উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে একটা সাদা-মাটা কিন্তু বেশ চিন্তাশীল বিষয়বস্তু পেলাম। তার কিছুটা ব্লগারদের সাথে শেয়ার করছি।
খুন কারা করে ?
খুনীরা।
কেন করে ?
বহু কারনে।
কোন কারনে বেশী ?
রাজনীতি,প্রেম,ব্যক্তিগত শত্রুতা।
এরকম প্রশ্নের পর প্রশ্ন এগুচ্ছে। একসময়ে তাল হারিয়ে এক জায়গায় গিয়ে আটকে গেলাম।
খুনে কার ক্ষতি হয় ?
খুনীর-খুনীর পরিবারের। যে খুন হল তার পরিবারের।
এছাড়া ?
এই জায়গাটাতে এসেই পাওয়া গেল একটা অদ্ভুদ গল্প।

খুনীকে ধরা হল, মিডিয়া হল, প্রেস হল, এমনকি ফাসিও হল। ( বাংলাদেশে খুনীর ফাসি হওয়ার ট্রেন্ড আছে- ফাসি দেখালে সেটাই দেশের ট্রেন্ডকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে ) যেহেতু খুনির ফাসি হল, সেহেতু যাকে খুন করা হল, তার পরিবার শান্তিও পেল কিছুটা।

এরকম অনেক হয় যে খুনীকে ধরা হয় না, শাস্তি হয়না। খুনী স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। অশান্তি হয় কার ? কেউ কি আছে, যে খুনীর পরিবার নয়, খুনের সাথে তার কোণ সম্পর্ক নেই কিন্তু অশান্তিতে আছে।

ধরি লোকটার নাম রহিম। তার চারজন ছেলে মেয়ে। দুটি স্ত্রি। একটি স্ত্রি অল্প বয়স্কা অন্যজন বৃদ্ধা। এরা লেখা পড়া করছে। সন্তান পরের জনেরই, বড় বঊয়ের সন্তান নেই। দু বউ শান্তিতে বসবাস করছে।

রহিম কারাগারে কাজ করে, তাই সবাই জানে। কিন্তু কারাগারে তো নানান রকমের কাজ ? ঠিক করে বলতে গেলে, কি কাজ ?
সে মানুষের ফাসি দেয়।
তাহলে সে তার পরিচয় লুকাচ্ছে কেন ?
কারন সে ফাসি দেয় !

রহিমের সত্যিকারের পেশার পরিচয় যদি সাধারণ জনতা জেনে যায় তাহলে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মানুষের মনে জল্লাদ আজও ঘৃণ্য এক ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। মানুষ যদি জানতে পারে তার পেশা তাহলে তারা তাকে ঘৃণা করবে। কেউই একজন জল্লাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় না। এই সমাজে বন্ধুহীন হয়ে বাস করা মুশকিল।

পাঠক, আমরা এমন এক ব্যবস্থায় বাস করছি যেখানে অবস্থান প্রেক্ষাপটে নির্ধারণ করা হয় অপরাধের তারতম্য। যেমন ধরুন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করলে প্রচলিত আইন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু মার্কিন বাহিনী অথবা বিশ্বের নানান প্রান্তের ক্ষমতার চর্চাকারী গোষ্ঠি নির্বিচারে হাজারো মানুষকে হত্যা করছে, তাদের কিন্তু বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান।

অথচ রহিম সেই ব্যবস্থার অংশ হয়ে নিজে অপরাধীদের গলায় ফাঁসির দড়ি পরায় এবং সামাজিক মূল্যবোধের কারণে নিজের পেশা গোপন করে অদৃশ্য এক তথ্য গোপনের মতো অপরাধের জন্ম দেয়। এই অপরাধের কোনো হদিস রাখে না কেউ।
যাই হোক, হেড চরিত্র রহিম। এবার গল্পটাকে সাপোর্ট দেবার জন্য, দরকার আরও কিছু কারেক্টর। এখানে নাটকের কথা হচ্ছেনা- হচ্ছে সিনেমার কথা। সিনেমা নাটকিয়তা বর্জিত, বড় ক্যানভাসে নির্মিত।

ধরলাম, বিবিসি অনলাইন অথবা আলজাজিরা নেটওয়ার্ক থেকে একজন বাংলাদেশী বংশদ্যুত নারি সাংবাদিক এসেছেন একটা ডকুমেন্টারি বানাতে, সাহায্য নিলেন একজন ব্লগারের। শুরু হল তাদের ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকিং এবং ধীরে ধীরে প্রেম।
বাচ্চারা বড় হচ্ছে, তাদের বন্ধু হচ্ছে। তারা বাবার পরিচয় জানতে চায়। বড় ছেলেটার পড়াশুনার প্রতি মারান্তক আগ্রহ। সে খেলতে খেলতে জয় বাংলা শ্লোগান দেয়। নজরুলের গান গেয়ে ওঠে থেকে থেকে। অতী শ্রিঘই ঢাকায় গেলে এদের পড়ালেখার একটা ব্যবস্থা হবে বলে আশা করা যায়। তাই, রহিম আর তার এই কাজ করবে না বলে সীধান্ত নিল। ফাসির কাজ ছেড়ে বাংলাদেশের পতাকা বিক্রির কাজ শুরু করবে ভাবল।

এদিকে বাংলাদেশের উত্তাল তরুন সমাজ এক যুদ্ধ অপরাধিকে ঝুলিয়ে দেবার আন্দোলনে দিন-রাত শ্লোগান দিচ্ছে। ডকুমেন্টারি মেকার সে সব ফুটেজে ধারন করছে। চলছে তাদের প্রেম। ফাসির রায় হয়ে গেল। এবার ঝুলিয়ে দেবার পালা।
তরুন সমাজ যে শুধু সরকারকে প্রভাবিত করেছে তাই না, তাদের তারস্বরে চিৎকার আর জলন্ত চেতনা ছুয়ে গেছে আমাদের রহিমকে। সে চিন্তা করল, এটাই হবে তার শেষ ফাসি।

গলার ঠিক কোথায় দড়ি পড়ালে সবচেয়ে কম কষ্টে মানুষটি মারা যাবে তা জানে রহিম। প্রতিবারই সে চিনা নিয়মেই ফাসি দিয়েছে। কিন্তু এবার কোন নিয়ম সে মানবেনা ঠিক করল।
এদিকে- সাংবাদিক আর ব্লগারের প্রেম হয় হয়। কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ব্লগার তার বন্ধুদের সাথে মেয়েটাকে পরিচয় করিয়ে দেবে, এবং বিয়ের প্রপৌজ করবে। মেয়েটাও ওয়েষ্টার্ন ড্রেস ত্যাগ করে, একটা রাবিন্দ্রিক শাড়ি পড়ে আসছে। হ্যা-বা না তা আমরা কেউ জানিনা।

সিনেমা এগিয়ে যাবে- ক্লাইম্যাক্সের দিকে।

দুরকম ভাবে শেষ হতে পারে, এক, ফাসি হয়ে গেল- রহিমের ছেলে মেয়েরা, বউড়া একসাথে মিলে বিভিন্ন আকারের বাংলাদেশের পতাকা বানাচ্ছে, বিক্রির জন্য। এবং রাজপথ উজাড় করে দিয়ে শুরু হরতাল, শুরু হল বাস পোড়ান। সেই হরতালের কাভারেজ নিচ্ছিল, সাংবাদিক ব্লগার। নিষ্ঠূর প্রেটল বোমায় পুড়ে গেল সাংবাদিক।

দুই, ফাসি হয়ে গেল- রহিমের ছেলে মেয়েরা, বউড়া একসাথে মিলে বিভিন্ন আকারের বাংলাদেশের পতাকা বানাচ্ছে, বিক্রির জন্য। ব্লগার, সাংবাদিক মেয়েটাকে নিয়ে চলে এল বই মেলায়। তারপর সেখান থেকে বের হতেই, ব্লগার-কে খুন করা হল। মেয়েটা অজশ্রবার সাহয্যের জন্য প্রার্থনা করলেও কোন সাড়া পেলনা।

ক্যামেরা গিয়ে আটকে গেল, রাজু চত্ত্বরে। যে্ন ভাস্কর্যকে কিছু প্রশ্ন করা হচ্ছে-

( অতী সম্প্রতি রাজু চত্তর ভেঙ্গে ফেলা হবে। ভাঙ্গা হোক বা নাহোক, ভাঙ্গার যে একটা প্রশ্ন উঠেছে, তারই জন্য এন্ডিং হয়ে গেল এপিক ।)

এটা একটা সাধারন গল্প। একটা গল্পের সাথে মিশে যায় লেখকের নানান অভিজ্ঞতা। লেখক এবং পরিচালকের চিন্তা ভাবনাও প্রভাবিত করে গল্পকে। শুটিং টাইম, লোকেশান, সিনেমাটোগ্রাফারের এবং অভিনয়শীল্পিদের প্রভাবও সিনেমাতে প্রকটভাবে দেখা যায় । গল্পের ইস্যু নিয়ে নানারকমের ঝামেলা হয়, সরকার পক্ষ থেকে ঝামেলা, সেন্সরে ঝামেলা, কেউ ব্যক্তিগত ভাবে আক্রান্ত হল কিনা, সেদিক থেকে ঝামেলা। বাজেটের ঝামেলা- প্রডিউসারের রুচির ঝামেলা। তারপরেও সিনেমা হয়। লিমিটেশান থেকেই মুল শীল্পের সৃষ্টি হয়। লিমিটেশান হল শীল্পের জননী।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×