শয়তান সবসময়ই মানুষের প্রতিপক্ষ। মানুষ জিজ্ঞাসু ও চক্ষুষ্মান। শয়তান চটুল-চতুর-শঠ। সে মানুষের অনুসন্ধিৎসু জিজ্ঞাসা সইতে পারে না বলেই সে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। শয়তানী-চিন্তা যেখানে স্তব্ধ, মানুষের জিজ্ঞাসা সেখানে শুরু। এই পার্থক্য জেনেই কবিকে এগুতে হয়, না হলে সে কোনো অর্থেই কবি নয় - সে এক কৃত্রিম মানুষ।
হত্যা করো এবং প্রতিদিন হত্যার পরিকল্পনা আঁটো। তবেই সিঁটিয়ে থাকা মানুষগুলো ভয়ে আড়স্ট হবে (পক্ষান্তরে যে ভয় দেখায়, সে নিজেই আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করে, গ্লানিতে নিজেই সিঁটিয়ে থাকে)। এই হলো শয়তান ইবনে ইবলিশের আদি ও অনন্ত সবক। এরই ভিত্তিতে তারা হত্যা করেছিল সক্রেটিস-যিশু থেকে ৭১ পর্যন্ত। ৭১ থেকে এই হত্যাযজ্ঞ ক্রমশঃ বর্ধিত হয়েছে ইরাক-আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে। শয়তানের এই পুত্র-সকল এখনও সক্রিয় - ভাষায়-অস্ত্রে এবং বাকপটুতায়। শয়তানের প্রতিভুদের সঙ্গে মানুষের আদর্শীক পার্থক্যটা এখানেই।
কাজল রশীদ আপনি যার উদ্দেশ্যে যাদের বারবার বিজ্ঞাপিত হবার উক্তিগুলো করেছিলেন, আমি তো এর প্রকৃত মর্মমূল ইতিমধ্যে জেনে গেছি। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা ঘামের দরদ দিয়ে ব্রিকলেইনের প্রতিটি ইট ও কংক্রিকগুলোকে ঘষে ঘষে দর্শনীরূপ দিয়েছেন, তাদের শ্রমের মর্যাদা শয়তানপ্রতিভুরা কী করে বুঝবে। আপনি/আপনারা যখন সম্মিলিতভাবে মানুষের আবেগকে ঘনবন্ধ করে তুলতে প্রয়াসী হন, তখনই তারা কৃত্রিম-সংকট তৈরি করে আপনাদের প্রতিরোধ-গতিরোধ করতে উদ্যোগী হয় - এক কেদারওয়ালা ও তার সঙ্গীরা। তারা ব্যর্থ হয়, তারা মরিয়া হয়ে উঠে। তারা যে শয়তান-উপাষক ছিল সে খবর নিশ্চয় আপনারা জানতেন না বলেই তাদের হাতে একবার তুলে দিয়েছিলেন আপনাদের অতিপ্রিয় একটি প্রকাশনা (এটা ঠিক যে, সাহিত্য ঘরানায় মাঝে-মধ্যে কাউকে বা বাহুজনকে সম্মানীত অতিথি সম্পাদক নিয়োগ করে কাগজকে আরো সমৃদ্ধ করার একটি রেওয়াজ চালু রয়েছে। এটা কখনও দোষের বলে মনে হয় না। বরং বৈচিত্র আনার জন্য করা হয়ে থাকে)। কিন্তু আপনারা এর বদলে কী দেখলেন, যাদের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তারা নিজেই নিজেকে বিজ্ঞাপিত করলেন। তাদের পচারের ব্যকুলতা নিশ্চয়ই আপনাদের লজ্জা দিয়েছিল? আপনি যার উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বোঝানোর জন্য ‘ঢোলপেটানো’র উক্তি করেছিলেন সে কী করে জানবে বলুন। আপনার একটা সমস্যা হলো, যে সত্য বলতে চান সে-সত্যগুলো বলতে গিয়ে ‘রাগের পাটাতনে’ চেপ্টা করে ফেলেন। ফলে তৃতীয়পক্ষ সেটা বুঝতে অক্ষম হয়। মাঝপথে আপনার রাগই সত্য হয়ে উঠে।
আপনি নিশ্চয় আরো লক্ষ্য করেছেন যে, কীভাবে তারা গালি রপ্ত করেছে। অক্ষম মানুষের ক্রোধ প্রকাশের ভাষাই হলো গালি। মানুষের এই বেফানা মুহূর্তে সুস্থ্য মানুষের কী করণীয় হতে পারে। তাদের করুণা করা যেতে পারে, দয়াদাক্ষিণ্য দিয়ে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। কখনই আপনি তাদের ভাষা রপ্ত করতে পারেন না যা মনুষ্য পরিচয়কে বার বার লজ্জিতই করে। তবে একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে, এদের শেষ কোথায় আমি জানি। এর জন্যই আমাকে এই প্রকৃতির লেখকনামধারীদের নিয়ে তেমন অস্থির হতে হয় না। তবে ইতোমধ্যে তাদের অস্থিরতা চারদিকে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। আপনি চক্ষুষ্মাণ হলে তা দেখতে পাবেন। এই অস্থিরতার মূলে কিন্তু খানিকটা আপনারা। গায়মানে না আপনি কবিদের এখন আর পুচে না - এই জ্বালা নেভানোর জন্যই যতসব আয়োজন-উপায়োজন।
অর্বাচনীদের কূটকৌশল পরিবর্তন হচ্ছে সেটা কি আপনি লক্ষ্য করেছেন? প্রথমে তারা আপনার কবিতার অযাচিত প্রশংসা করবে, আপনাকে বার বার উসকে দেবে, বলবে, আপনিই হলেন এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি। জীবনানন্দের পর যদি কারো কবিতা পড়ার গুরুত্ববহন করে থাকে সে হলেন আপনি। সেটা আপনার ক্ষেত্রে হয়েছেও। এটি ব্যর্থ হওয়াতে একটু কঠোর এবং অপেক্ষাকৃত নিষ্ঠুর চালটাও আপনার উপর দিয়ে চালানো হয়েছে। কিন্তু তারা জানে না, আপনি যে তাবিজ গলে ঝুলিয়েছেন সেই তাবিজ সকল শয়তানভাবাপন্নদের বার বার ছিটকে পড়তে বাধ্য করে। এখন সেই তাবিজটা কী? সেটা হলো আপনার ধারণার স্বচ্চতা। ফলে কোনো উধবাহুনৃত্যই আপনাকে মুগ্ধ করেনি।
এই অপচেষ্টা চলছে এখন কবি এস সুলতানার সঙ্গে। তাদের চুতরজাল ক্রমশঃ তার উপর বিস্তার করার কৌশলগুলো দেখতে পাবেন অচিরেই। সেখানে ব্যর্থ হলে তার প্রতিও তদের খড়গ হস্ত নেমে আসবে। অবশ্য ইশরায় ইঙ্গিতে ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করেছে যা মানুষকে অপমাণই করে না, এমন উক্তিকারীকে আরো তলিয়ে যেতে যথেষ্ট সহায়ক। আপনি চাইলেও তাদের টেনে তুলতে পারবেন না।