কীভাবে রাজাকার চিনবেন :
রাজাকার চিনতে হবে একাত্তর থেকে। এ সময়ই এ শব্দটির উদ্ভাবন। আবার বৃহতভাবে চিনতে হলে একে ইতিহাসের নিরিখে চিনতে হবে। হোক অতীত হোক বর্তমান। রাজাকার শব্দটিকে যখন এটি চরিত্র হিসেবে নেয়া হবে তাহলে বুঝতে হবে শব্দটি যেকোনো সময়কালে ব্যবহৃত হতে পারে। অর্থাৎ রাজাকারী চরিত্র যার মধ্যে বিদ্যমান সেই রাজাকার। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সে হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিংবা বিপক্ষের শক্তি। যে প্রতিনিয়ত দ্বৈত-চরিত্র কিংবা হঠকারী জীবন-যাপন করে কিংবা কেবল ব্যক্তিস্বার্থে কারোর প্রতি রাজাকার গালি ঝাড়ে, সেই হলো এই যুগের আসল রাজাকার। মোটামুটি এই হলো রাজাকার-চরিত্র। আরও বিশ্লেষণে গেলে দেখা যাবে, কোনো মুক্তচিন্তা বা মৌলিক অধিকার নিয়ে কারোর সামনে হাজির হলে, সে তখন এ বিষয়ে একমত না হয়ে উগ্র হয়ে উঠে। তখনই বুঝতে হবে তার মধ্যে এই চরিত্রটি বিদ্যমান। রাজাকারের হলো শয়তানী বুদ্ধি। সে একাত্তরের বিরোধীতা করেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। সে প্রতিনিয়ত শয়তানী বুদ্ধি চাষ করে সঙ্গে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢালে। এ জন্য শয়তান বা রাজাকারের পুত্ররা ছড়িয়ে আছে বঙ্গদেশ থেকে ব্রিটেনের আনাছে-কানাছে। শয়তানের প্রতিভুরা ঘোষণা দিয়েই মাঠে নেমেছে যে, যেখানেই যাও শয়তানী কূটচাল চতুরতার সাথে ব্যবহার করো।
গায়ে ফোসকা পড়লেই গালি দিয়ে উঠে, এরা কারা? এরা হলো অন্ধকারের কীট-নকশাল। এদের চিনে রাখা দরকার। যতোই নিক-নামে ওরা আত্মপরিচয় গোপন করার চেষ্টা করুক না কেন - এদের কদর্য-ভাষাই চিনিয়ে দেয় ওদের ডাবল-স্ট্যান্টার্ড চরিত্র। লোকালয় ছেড়ে ওরা অন্ধকার খোঁজে, জনপদ ওরা ভয় পায়, পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকতে আরাম পায়, সুযোগ বুঝে ওরা প্রভু বদলায়, কেবল নিজের স্বার্থ-আরাম-আয়েশই তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।
আমরা কীভাবে এদের চিনবো? নায়ক বেসে খবরদারী করতে ওরা মুখিয়ে থাকে। আকণ্ঠ-মৌলবাদ-চরমপন্থা-জঙ্গিবাদে ডুবে থেকে, মুক্ত চিন্তার সবক শোনায়। ওরা কিছুই দিতে জানে না, নিতেও পারে না। যে কোনো সুস্থ্য-চিন্তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক পর্যালোচনা করে উগ্রতা ছড়াতেই তাদের আনন্দ। এই বিভ্রান্তির কারণে রাষ্ট্র-সমাজ-ব্যক্তির কতটা ক্ষতি সাধিত হলো সেটা তাদের বিবেচ্যবিষয় নয়। বিবেচ্য বিষয় হবে কেন? তাদের তো বিবেচনাবোধের কোনো ক্ষমতাই থাকে না। রগচটা ঔদ্ধ্যত্ততা প্রকাশ করাই হলো মূল কাজ।
একাত্তরের রাজাকাররা এক ধরনের লেবাস পড়ে থাকতো। কিন্তু বর্তমান যুগের রাজাকাররা বহুলেবাস পড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার আলাপ-আলোচনায় এরা খুবই আধুনিক কথাবার্তা বলে থাকে কিন্তু ভেতরে পোষে রাখে সেই ঘৃণ্য-চিন্তাটি যা পৃথিবীর মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এমনকি কখনও ওরা প্রগতির নামে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আদতে সে চরমপন্থী-মৌলবাদী। গোপন সংগঠনের সাথে তাদেও আতাত। এরা ইসলামীস্ট-মার্কসিস্ট-খ্রিস্টানিস্ট-হিন্দুনিস্ট-জায়নিস্ট - যেকোনো কিছু হতে পারে। যে কোনো রূপদর্শনে তারা মানিয়েও যায়।
সম্প্রতিকালে শয়তানের প্রতিভুরা কীভাবে বেঁচে আছে। প্রচুর মিথ্যাচারের আশ্রয়ে নিজেকে আড়াল করে মানুষরূপটি (?) (প্রকৃত অর্থে মানুষেরই প্রতিপক্ষ) ধারণ করে পূজা-অর্চনা করে যাচ্ছে। মিথ্যার আশ্রয় কীভাবে নেয় - একটি সত্যঘটনার সাথে কয়েকটি মিথ্যা কথা জুড়ে দিয়ে অর্ধসত্য দাঁড় করায়, মানুষদের বিভ্রান্তি করে এই কথাটাই বলে যেতে চায় যে, কিছুটা নাহলেও তো সত্য হবে। কিন্তু অর্ধসত্য বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই। সত্যকে পরিপূর্ণতা নিয়ে দাঁড়াতে হয়, হতে বাধ্য। অতএব অর্ধসত্য বলেও কিছু নাই।
দজ্জালের মুখাবয়ব দেখে কী আমরা ভয় পাবো কিংবা ক্লান্তিতে ডুবে রবো, ভয়ে আড়ষ্ট হবো? - এসব কোনো বাণীবদ্ধ কথা নয়। বাস্তবতাই তার মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়ে দেবে। আমরা রাজাকার চিনবো দজ্জালের প্রতিভূ হিসেবে।