somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরতের রঙে রঙিন

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ, বর্ষায় অঝোর ধারার শ্রাবণ ঢলের পর শরৎ এসেছে আলোছায়ার খেলা খেলতে - এই মেঘ, এই বৃষ্টি, আবার এই রোদ। আবার দেখা যায় মাঠের এক পাশে বৃষ্টি অন্যপাশ বৃষ্টিহীন। কখনো কখনো কাঠফাটা রোদের মধ্যেও বৃষ্টি ঝরায় শরতের ধবলমেঘ। ওই সময় শিয়েলের বিয়ে হয় বলেও প্রবাদ আছে। সাদা মেঘের ভেলা কিংবা কাশের গুচ্ছ আর শিউলির সুগন্ধ নিয়ে প্রকৃতিতে আবির্ভাব হয় শরতের। শরতের জ্যোৎস্নারাতও বড় অদ্ভুত। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূরই যেন নৈশ-নীলাকাশে রজতশুভ্র জোছনার উদাস করা হাতছানি। রবী ঠাকুরের ভাষায়- শরতের রংটি প্রাণের রং। অর্থাৎ তাহা কাঁচা, বড়ো নরম। রৌদ্রটি কাঁচা সোনা, সবুজটি কচি, নীলটি তাজা। এইজন্য শরতে নাড়া দেয় আমাদের প্রাণকে, যেমন বর্ষায় নাড়া দেয় আমাদের ভিতর-মহলের হৃদয়কে, যেমন বসন্তে নাড়া দেয় আমাদের বাহির মহলের যৌবনকে।
শরতের মেঘ সুন্দর, শরতের মেঘ শুভ্র। শরতের আগমনে একটু হলেও বদলে যায় আমাদের জীবনযাত্রা। একদিকে বিস্তীর্ন নীলাকাশ, অন্যদিকে সবুজ ফসলের উপর বাতাসের দূরন্তপনা - সেখানে স্নিগ্ধ নীলিমার নীল আর সাদা সাদা মেঘের উড়াউড়ির আনন্দ। আহা কি চমৎকার আমাদের এই ঋতুর খেলা- দেখতে বড় ভাল লাগে। শরৎ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ স্মৃতিচারন করেছেন ‘এই শরতের প্রভাতের রৌদ্রে জানলার বাহির দিয়া গাছপালার দিকে চাহিয়া দেখিলেই আমার মনে পড়ে ছেলেবেলাকার চারি দিকের প্রকৃতির শোভা। কী একান্ত ভালো লাগিত!
শরতের আছে নিজস্ব বর্ণ, আছে গন্ধ। মূলত শরতের ৪টি রঙ- সাদা, নীল, সবুজ আর সোনালি। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল, সোনালি সূর্য আর সবুজ ফসল এই চার রঙের অলঙ্করণ দেখা যায় শরতে। তাই শরৎ ঋতুতে পোশাকের রঙ এবং ডিজাইনে থাকে ভিন্নতা। আর এই ভিন্নতা ও বৈচিত্রের প্রয়াস নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা সাজিয়েছে তাদের পোশাকের সমোরহ। শরতের রঙ নিয়ে কয়েকজন ডিজাইনার কথা বলেছেন

জাভেদ কামাল, চরকা

শরতের রঙ নিয়ে চরকা ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার জাভেদ কামাল বলেন,শরৎ মানেই যেন শুভ্রতার ছোঁয়া। নানা রঙের ছড়াছড়ি। শরতের আবহাওয়াতেও যেন চলে লুকোচুরি খেলা। এই গরম, মুহুর্তেই শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। পাশাপাশি পূজা উৎসব তো রয়েছেই। সুতরাং সবকিছুকে মাথায় রেখে এবার পোশাকে নীল এবং সবুজ রঙের কম্বিনেশন করা হয়েছে। পাশাপাশি লাল কমরাতো থাকবেই । শরতের রং হিসেবে এবার কালোকেও প্রাদান্য দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কালো এবং সবুজেরও কম্বিনেশন করা হয়েছে। শরতের রঙ এখন আর শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে আমাদের লাইফস্টাইলেও যুক্ত হয়েছে। ঘরের পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভারসহ সব কিছুতেই যেন নীল- সাদার ছোঁয়া থাকা চাই। আমরাও সেই চাহিদাকে মাথায় রেখে এসব গৃহসামগ্রীতে নীল-সাদার কম্বিনেশন করা হয়েছে।

শাহনাজ খান,কে-ক্র্যাফট

শরতের আকাশ সেজেছে হালকা মেজাজের সাদা মেঘের পোশাকে । শীর্ণ নদীর পাশে কাশবন একরাশ সাদা চুলের সাথে বাতাসের মিতালীতে মেতেছে। প্রকৃতির হালকা মেজাজের সহগামী হয়ে মানুষের মনেও হালকা আমেজের পরশ। এ আমেজকে ধরে রাখতে আমার মনে হয় হালকা নীল রং অনেক বেশি কার্যকর। আমরা তাই এবারের শরতের আয়োজন করেছি হালকা মেজাজের সাদা, নীল, ভায়োলেট,সবুজ ইত্যাদি রং। এ আয়োজনে থাকছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টপস্, স্কার্ট, পাঞ্জাবী, শর্ট পাঞ্জাবী, টি-শার্ট এবং অলংকার। প্রধানত সুতি ও এন্ডি কাপড়ে তৈরী পোশাকগুলোতে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারী করা হয়েছে। আরো একটি বিষয় বর্তমানে নজর কেড়েছে। তা হচ্ছে,পোশাকের পাশাপাশি ফ্যাশন সচেতন মানুষ এখন তার লাইফস্টাইলের প্রতিও বেশ যতœবান। পোশাকের পাশাপাশি এখন দেয়ালের সাথে মিলিয়ে দরজা-জানালার পর্দা, বেড কভার, সোফার কভারের রঙ নির্ধারণ করেন। এমনকি আজকাল সোপিচ নির্ধারনেও রঙটাকে প্রাদান্য দেয়া হয়। এজন্যই আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি এসব গৃহসামগ্রীর প্রতি সচেতন হতে।

কামরুল হাসান,এড্রয়েট

এখন শরৎকাল। শরতের হাওয়ায় প্রকৃতি সেজেছে অপরূপা সাজে। নীল আকাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে শিমুল তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা। দুরন্ত কিশোরীর মতো বয়ে চলে আবেগী হাওয়া। তারই আলতো ছোঁয়ায় হেসে ওঠে নদী-নালা, খাল-বিল, যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত এক ক্যানভাস। সেই ক্যানভাস শুধু প্রকৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই, সেই হাওয়া পড়েছে এড্রয়েট কালেকশনেও। শরৎ উপলক্ষে আমরা বেশকিছু নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছি। রঙের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় শরৎ মানেই হালকা কিছু। আর তাই একেবারেই হালকা বøু এবং ভায়োলেট কালারকে ব্যবহার করে।ি কারণ আমার মতে, মনের সাথে পোশাকের রঙের একটা মিল রয়েছে। এ আবহাওয়ায় মানুষ একটু হালকা রঙ বেশি পছন্দ করে। আমরা তাই এসব রঙের ব্যবহার করে শাড়ি, ফতুয়া, শার্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট প্রভৃতিতে বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কখনও ব্লকে, কখনও অ্যাপলিকে, কখনও এমব্রয়ডারিতে, আবার কখনও দুই-তিন মাধ্যমকে একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। নীল এবং বেগুনির পাশাপাশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সাদা, সবুজ, টিয়া, কমলা, হালকা কালো প্রভৃতি।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×