ষড়রিপুর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন রিপু হচ্ছে কাম রিপু । কাম রিপুর তাড়নায় পরেই আমরা যত অশ্লীল-খারাপ কাজে লিপ্ত হই । কাম রিপুর প্রভাবে পড়েই একজন পুরুষ অন্য নারীর প্রতি এবং নারী অন্য পুরুষের প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে থাকে । কাম রিপু খুবই শক্তিশালী । আল্লাহ্র অলীর এত্তেহাদী তাওয়াজ্জোহ ছাড়া একে পরিশুদ্ধ করা কঠিন । শুধু কাম রিপুকে পরিশুদ্ধ করার জন্যই পূর্ব যুগের অলী আল্লাহ্গণ বনে-জঙ্গলে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে রিয়াজত সাধনা করেছেন । আজ যদি সমাজের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যত অশ্লীলতা, ব্যভিচার তার সব কিছুর মূলেই রয়েছে এই কাম রিপু নামক ভাইরাস ।
তাসাউফের ভাষায় কেউ কামাসক্ত হয়ে পাপের কাজ করলে তার আত্মার সুরত সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যায় । কাম বলতে আমরা কোন কিছুকে পাওয়ার তীব্র আকাংখাকে বুঝি । আর সেই আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার জন্য সাহায্য করে এই কামরূপ শক্তি । যাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাধকগণ প্রতিদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে এশার পর গাইরিয়াতের ফায়েজ আর ফজরের নামাজের পর কুয়াতে এলাহির ফায়েজ মোরাকাবায় খেয়াল করে আল্লাহ্র পক্ষ হাসিল করে থাকে । 'গাইরিয়াতের ফায়েজ' আর 'কুয়াতে এলাহির ফায়েজ' হচ্ছে আত্মা পরিশুদ্ধ করার ঔষধ যা মোরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হাসিল করতে হয় । এই মোরাকাবার শিক্ষাই নবি-রাসুল, অলী-আল্লাহ্গণ দিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন ।
সূফীবাদের ভাষায় কাম রিপুর সুরত হচ্ছে শুকরের আকৃতি । কেউ কাম রিপুর বশবর্তী হয়ে মারা গেলে তার সুরত শুকরে সুরতে পরিবর্তন হয়ে যাবে । কাম ও প্রেমের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হলে তাদের জন্য তাসাউফের এই লেখাটি-> http://goo.gl/WJXIeT
এখন আসি বাস্তব জীবনের উদাহরণে, আমরা নিজেরা প্রতিনিয়তই সমাজে দেখি যারা নামাজ পড়ে, ধর্ম-কর্ম করে, কিন্তু আবার অবৈধ বাজে সম্পর্ক ওপোর্ণগ্রাফীতে আসক্ত । যা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে । আগের কালের মানুষ বলতো গ্রামে ''ওলা-বিলাই' ডুকছে, যারে যারে ধরছে তারেই খাইছে । বর্তমানেও কলেরা ভাইরাসের মত কাম রিপুর ভাইরাস আক্রমণ করছে । যার প্রকোপে আজ তরুন সমাজ ধুমরে- মুচড়ে পিষে যাচ্ছে । এই করাল গ্রাসের থাবায় সারা বিশ্বই অতিষ্ঠ । অথচ কেউ বের করতে পারছে এর কোন নিয়ন্ত্রণের উপায় । ইন্ডিয়াতে এতো চেষ্টা করেও এর কোন সুরাহা বের করতে পারছে না ।
হয়তো রাসুল (সঃ)-এর ভবিষ্যৎ বানীই তার নিদর্শন । হয়তবা 'ইয়াজুজ- মাজুজ' যা ঘরে ঘরে ।
আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে এর প্রভাব থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই ।
আসলে রোগীকে যতই ভাল খাবার দেয়া হোক তার দেহের জন্য তেমন একটা কাজে দিবে না এটাই স্বাভাবিক । যে কাম ভাইরাসের তাড়নায় আক্রান্ত হয়, সে যতই নামাজ-রোজা করুক তার ভিতরে ভাইরাসের প্রভাব থাকবেই । ভাইরাস জ্বর যেমন সারে নাহ, পর পর জ্বর আসে । তদ্রূপ কাম ভাইরাস দূর না হলে পর পর তার কাম ভাব জাগবেই । ভাইরাস দূর না করে ভাল খাবার খাইলে যেমন কাজে দেয় না, তেমনি আমরা কাম রিপুর তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে যত ইবাদতই করি না কেন তা আল্লাহ্র কাছে গ্রহন যোগ্য হবে না ।
পৃথিবীর সব ভাইরাস যেমন এক, তেমনি সারা বিশ্বের মানুষের ভিতরের ষড়রিপুরও প্রভাবও এক । বাংলাদেশে একজন নারী যেমন আরেকজন পুরুষের দ্বারা নির্যাতিত বা ব্যভিচারের স্বীকার হয় তদ্রূপ আমেরিকা বলেন আর ইউরোপ বলেন সব জায়গায়ই একই অবস্থায় নারী-পুরুষরারা অশ্লীলতা, ব্যভিচারে দ্বারা আক্রান্ত । শুধু কেবল এই অসংযমী কাম রিপুর জন্য ।
মোরাকাবার মাধ্যমে একে বসে আনতে পারলেই আমাদের সার্থকতা । এই শিক্ষা ও ফায়েজ অলী-আল্লাহ্দের সিনা থেকে লাভ করতে হয় । ফায়েজ এর দ্বারাই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হয়। ষড়রিপুকে নিজের বসে আনা যায় । সারা জীবন চেষ্টা করেও একা একা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা যায় না । এর জন্য মোর্শেদের সোহবত ও এত্তেহাদী ফায়েজ প্রয়োজন । তাহলে আমাদের পক্ষে বাস্তবে ধর্মের স্বাদ উপলব্ধি করা সম্ভব হবে । তখন শিখতে পারবো কিভাবে নিজের ষড়রিপুকে নিজের চেষ্টায় বসে নিয়ে আসা যায়, কিভাবে কাম রিপুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয় । আর ষড়রিপুর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেই আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন আমাদের জন্য সহজ হবে ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
"সেই সফলকাম হয়েছে, যে পবিত্রতা অর্জন করেছে ও প্রভুর নামে জিকির করে এবং নামাজ কায়েম করে ।"
(সূরা-আলাঃ ৮৭, আয়াত-১৪-১৫)
"যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন কাজে আসবে না, সেদিন সেই উপকৃত হবে যে আল্লাহ্র কাছে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আসবে ।"
(সূরাঃ শুআরাঃ ২৬, আয়াত- ৮৮-৮৯)
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আরও এরশাদ করেন-
" যে ব্যক্তি আত্মাকে পুতঃপবিত্র রাখল, সে সাফল্য লাভ করল । আর যে ব্যক্তি আত্মাকে কলুষিত করল, সে ধ্বংস হয়ে গেল ।"
(সূরা- শামসঃ ৯১, আয়াত-৯-১০)
একটা পাপের কাজ করলে দিলে ১টা কালো দাগ পড়ে যায় । এভাবে আমরা পাপ করতে করতে আমাদের অন্তর কালো দাগে ছেয়ে যায় । তখন আমরা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কোন সংবাদ লাভ করতে পারি না । আমরা অনেক সময় স্বপ্নে যা দেখি তা বাস্তবে হুবুহু মিলে যায় । কেন মিলে? কারন আত্মা আল্লাহ্র প্রেম বা তার জিকিরে নরম থাকলে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সংবাদ আসে । তখন আমরা আগাম বিপদ-আপদ ও শুভ সংবাদ সম্পর্কে জানতে পারি ।
তাই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারলে আমরা সকল কাজে আল্লাহ্র সাহায্য পাবো । আর তাঁর নির্দেশে নিজেকে পরিচালিত করতে পারবো ।
এই পোস্টটি কেবল সূফী-সাধক, জ্ঞানীদের জন্য ।