আজকে বাদা থেকে এক আত্মীয় এসেছেন, কথায় কথায় জানালেন, জানালেন ব্যাবসা খারাপ, মাছ নেই তেমন। তবে এটা মূল বিষয় না, মূল বিষয়, সুন্দর বনে জলদস্যুর উৎপাত এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
"সাতক্ষীরা রেঞ্জের গভীরে পুষ্পকাটি, নটাবেকী ও হলদেবুনিয়া নামক স্থানে পৃথক তিনটি বন টহল ফাঁড়ি থাকলেও তাদের কাছে কোনো অস্ত্র নেই।" বাহ! কি চমৎকার! ডাকাত ঠেকাতে ফরেষ্ট্রীর টহল ফাঁড়ি আছে, অস্ত্র নেই! গুজব, এসব টহল ফাঁড়ি নাকি বনদস্যু আর জলদস্যুদের নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে উল্টো! রাজু বাহিনবীর হাতে অত্যাধুনিক রেমিংটন,এসএলআর, এ্যসল্ট রাইফেলের ছড়াছড়ি (সম্ভাব্য পরিমান ৫০, বিভিন্ন মানের এবং রেঞ্জের) আর ফরেষ্ট্রীর টহল ফাঁড়িতে বাঁশের লাঠি??!!
"সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ও এর আশপাশ এলাকায় বাংলাদেশের জলদস্যু মোতালেব বাহিনী, মান্নান বাহিনী, রাজু বাহিনী এবং ভারতীয় বিমল বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্যদের হাতে জেলেরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। " - আরো ভালো! এক জেলে নৌকোর জন্য ডাকাত পার্টি চারটে! তোফা!
"অন্যান্য বছর জলদস্যুদের সামান্য কিছু টাকা দিলেই হতো, কিন্তু এ বছর তাদের চাহিদা অনেক বেশি। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তারা নির্যাতন করছে। মারধরের ভয়ে অনেকে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বছর প্রতিটি জলদস্যু বাহিনীকে নৌকাপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। বর্তমানে সুন্দরবনে তিনটি জলদস্যু বাহিনী রয়েছে যাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে।" - ওফ! বাঁচলুম মাননীয় নেত্রী! চারটে দল থাকলেও মোটে তিনটেকে চাঁদা দিলেই চলছে। জটিল ডিস্কাউন্ট!
৫ X ৩ = ১৫,০০০ টাকা প্রতি নৌকো। আসলে আমাদের জেলেরা সব কোটিপতি, কি বলেন? কুমির-বাঘের সাথে লড়াই করে রক্তপানি আর জীবন ঝুঁকির বদলে কামাই করা পয়সাগুলো নিয়ে যাবে দস্যু, আর আপনার ফরেষ্ট্রী, পুলিশ, কোষ্টগার্ড, নেভী এরা বসে মৌজ মারবে? বাহ! বাহ!
তবে সেরা কৌতুক হয়েছে এটা, "সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের এসিএফ তৌফিকুল আসলাম জানান, বাগেরহাট রেঞ্জে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। সেখানে জলদস্যুদের উৎপাত তুলনামূলক বেশি। সাতক্ষীরা রেঞ্জে জলদস্যু বাহিনীর অত্যাচারে জেলেরা ফিরে আসছেন_ এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান। "
একটু নজর দিবেন কি? ঐ ছোটলোকের বাচ্চা জেলেগুলোর ওপরেও দেশের অর্থনীতি কিছু নির্ভর করে, জানেন বোধহয়। সিডরে আধমরা করে গিয়েছে, এবারে পুরো মারবেন আপনি ওদের। সিডরে কোমরভাঙা হয়ে এবারে ধার দেনা করে কেনা নৌকো আর জাল ফেলে পালিয়ে এসে ওরা প্রকারান্তরে মরতেই বসছে। পেটের দায়ে যারা বাঘের আর কুমিরের মুখে হাত দিতে ভয় পায় না, সেই সব অদম্য মানুষ গুলো এবারে ভাতের অভাবে আর ঋনের কর্জে মরবে বৌ-বাচ্চা সুদ্দো!
একটু ভেবে দেখুনতো? দায় এড়াতে পারেন আপনি? ফরেষ্ট্রী, পুলিশ, কোষ্টগার্ড, নেভী কি করছে এরা?
সূত্র: এস।। রহমান, দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ এবং সমকাল নিউজ ।