আলহামদুলিল্লাহ,
আমরা এখন উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে অবস্থান করছি।
--
অনেক আগে থেকে প্ল্যান করেছিলাম ইসলামিক রাষ্ট্র সমূহ ঘুরে দেখা সেই প্ল্যানে যোগ হল উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান , কিরগিজস্তান এবং কাজাখস্তানের নাম। TOB তে এই নিয়ে ১ মাস আগে পোস্ট করা হয়েছিল কিন্তু তেমন কোন রেসপন্স নেই কারন এই দেশ গুলোতে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি মানুষ যাতায়াত করে না। আর যারা ঘুরতে যায় সবাই বিস্তারিত শেয়ার করে না।
ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে উজবেকিস্তান যেতে হবে তারপর বাকী দেশের ভিসা নিতে হবে নয়ত ইন্ডিয়া থেকে স্টিকার ভিসা নিয়ে এই দেশ গুলোতে ভ্রমণ করতে হবে।
একমাত্র উজবেকিস্তানের ইভিসা বাংলাদেশ থেকে নেওয়া যায়। আর বাকি গুলো ইন্ডিয়া থেকে নিতে হবে তবে সেটা একটু জটিল ও সময়ের ব্যপার।
উজবেকিস্তানের ভিসা আপনি নিজে নিজে করতে পারবেন। শুধু আপনার পাসপোর্টের তথ্য পেজ, পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করতে হবে এবং হোটেল বুকিং দিয়ে তার ঠিকানা ফর্ম পুরনের সময় দিতে হবে।
আর দুই ধরনের ভিসা দেয় ১# টুরিস্ট ২# ব্যবসা আবার টুরিস্ট এর মধ্যে ৩ ধরনের এন্ট্রি থাকে ১# সিংগেল ২০ ডলার ২# ডাবল ৩০ ডলার ৩# মাল্টিপল ৫০ ডলার।
আমি যেহেতু এর আশেপাশে দেশ গুলোতে ভ্রমণ করব তাই মাল্টিপল ভিসা নিয়েছি এর জন্য ভ্যাট সহ ৫৩.৭৫ ডলার খরচ হয়েছে। সর্বোচ্চ ৪৮ ঘন্টা সময় লাগে তাবে শনিবার/রবিবার ভিসা আবেদন করবেন না রবিবার এদের বন্ধ থাকে। ই-ভিসার আবেদন দিন থেকে ৩ মাসের মেয়াদ থাকে এর মধ্যে আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন। আর একবার এন্ট্রি নিয়ে ৩০ দিন থাকতে পারবেন।
ভিসা পাওয়ার পরেই টিকেট করার প্ল্যান তৈরি করি, বাংলাদেশ থেকে ফ্লাই করব না দিল্লি থেকে ফ্লাই করব। একমাত্র উজবেকিস্তানের জাতীয় বিমান দিল্লি থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে টিকেট অনেক চাহিদা থাকায় টিকেট দাম মোটামুটি দিল্লি-উজবেকিস্থান-দিল্লী ৫০ হাজারের মতো খরচ। এর পরেও একটা অনিশ্চিত থাকে দিল্লি ইমিগ্রেশন ফ্লাই করতে না দিলে পুরো টাকা লস। তবে যাদের টুরিস্ট হিস্ট্রি ভালো তারা রিস্ক নিতে পারেন। আবার পরবর্তী ইন্ডিয়া ভিসা দিতে সমস্যা হলে একধরনের ঝুঁকি।
আমি রিস্ক নিতে চাইনি তাই বাংলাদেশ থেকে সরাসরি উজবেকিস্তানের টিকেট করি এয়ার এরাবিয়া বিমানে। এটা সময় অনুযায়ী টিকেট দাম কম বেশি হয়। আমার টিকেট দাম ৯০ হাজার টাকা রিটার্ন সহ পরেছে। তবে দুবাইয়ে শারজা এয়ারপোর্টে ২/৩ ঘন্টা ট্রানজিট থাকে। আর উজবেকিস্তানে দুবাই রেসিডেন্সিদের অন এরাইভাল ভিসা দেয়।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন:
প্রথমে এয়ার এরাবিয়া বুকিং অফিসার ভিসা চেক করলেন এবং আমার সাথে পর্যাপ্ত ডলার আছে কিনা জানতে চাইলেন। সব কিছু ঠিক তারপরে আমাকে বোডিং পাস দিলেন। এয়ার এরাবিয়া রো-সিতে অর্থাৎ ৩ নং গেটের সাথে।
আমরা বাংগালী সব খারাপ কাজে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এই রুটে রাশিয়া হয়ে ইউরোপে মানবপাচার করে। সেটা উজবেকিস্তানে এসে বুঝতে পেরেছি। এই জন্য বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে অনেক গুলো প্রশ্ন করেছে। যাদের টুরিস্ট হিস্ট্রি ভালো না তাদের ইমিগ্রেশন থেকে রিটার্ন করে দিচ্ছে। অবশেষে ইমিগ্রেশন সিল নিয়ে চলে গেলাম MTB লাউঞ্জে। হাতে কম সময় থাকায় বেশি সুবিধা করা গেল না।
একটা তথ্য শেয়ার করা দরকার যাদের MTB অ্যাকাউন্ট আছে তারাও লাউঞ্জ সুবিধা নিতে পারবেন। যারা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তারা অ্যাকাউন্টহোল্ডার লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন এরা নতুন ওপেন হয়েছে । অ্যাকাউন্ট খোলার ৬ মাসের মধ্যে এই সুবিধা পাওয়া যাবে, ১-৫ লাখ টাকা অ্যাকাউন্ট থাকলে এই সুবিধা পাবে ৪ বার একজন সাথে নিয়ে। ৫-১৫ লাখ টাকা অ্যাকাউন্ট থাকলে ৮ বার সুবিধা পাবে এখন আর ক্রেডিট কার্ড না থাকলে হবে।
এরপর আমি এয়ার এরাবিয়া বিমানে চলে গেলাম। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মত সিট। বাজেট এয়ারলাইনস যার জন্য কোন এন্টারটেইনিং সিস্টেম নেই।
আর ৩০ মিনিট লেটে বিমান ছাড়ল।
দুবাই শারজায় এসে ট্রান্সফার হয়ে ২৩ নং গেটে চলে যেতে হয় তাসখন্দের (উজবেকিস্তান) জন্য। সেখান থেকে রাত ১০ টায় ফ্লাই করে রাত ২ টায় তাসখন্দ এয়ারপোর্টে।
বাংলাদেশ থেকে দুই বোডিং দিয়ে দেয়।
অবশেষে ইমিগ্রেশন শেষ করে ইয়ানডেস্ক করে হোস্টেল চলে আসি।
তাসখন্দ এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কোন কিছু জিজ্ঞেস করিনি শুধু বলেছে প্রথম কিনা। পাসপোর্ট আর ইভিসা চেক করে সিল দিয়ে দিল। আমরা এয়ারপোর্টে ডলার পরিবর্তন করি। এরা রেট ব্যাংক অনুযায়ী দেয়। লোকাল কম রেট পাওয়া যায়। আপনারা ব্যাংক অথবা এয়ারপোর্টে ভাংগাবেন এতে ভালো রেট পাবেন।
আর পারলে এয়ারপোর্টে থেকে সিম নিয়ে নিবেন। ৩৫০/- টাকা Ucell ২০ জিবি ইন্টারনেটসহ পাবেন।
আর এখানে ট্যাক্সি পাওয়া যায় তবে বাটপারি আছে ২ ডলার ভাড়া ২৫/৩০ ডলার নিবে। এর থেকে ভালো আপনি এয়ারপোর্টে সিম নিয়ে এদের উবারের মত অ্যাপ "ইয়ানডেস্ক গো" ইনস্টলেশন করে উজবেকিস্তানের নাম্বার দিয়ে একটিভ করবেন। এয়ারপোর্টে থেকে বের হয়ে বাইরের রাস্তায় এসে কল করবেন নয়ত ভিতরে ইয়ানডেস্ক ডুকতে দিবে না সিন্ডিকেটের লোকজন।
মাত্র ১.৫ ডলার দিয়ে আমরা হোস্টেল চলে আসি রাত ৩ টায়। আজ এই পর্যন্ত পরবর্তী পর্বে রাজধানীর টুরিস্ট জায়গা খাবার ও ট্রান্সপোর্ট নিয়ে শেয়ার কর।
নোট: পৃথিবীর যে প্রান্তে ঘোরাঘুরি করি না কেন পরিবেশ পরিস্কার রাখা আমাদের দায়িত্ব। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলি।
মোনারুল ইসলাম
তাসখন্দ, উজবেকিস্তান।
ভিডিও দেখতে চাইলে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সংযুক্ত থাকুন।
---
Youtube
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১