somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিল্লা!

৩০ শে জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চানপুইরা হানকি-ত তিন হানকি ভাত খালি হুলারা-মইচ (শুকনো কাঁচা মরিচ) দিয়াই আরুইব্বা কেরাইয়া (মাঝি) খায়। হের লগে আইজ হিদল-হুটকির বর্তা। পাঁচ হানকি ভাত খাইয়া, হানকি ধোয়া পানি-ত কুলি কইরা আরুইব্বায় হুক্কা ধরায়, টিক্কা দিয়া।

গুড়গুড়াইয়া হুক্কা টানতে টানতে আরুইব্বার নিজেকে বড় একা লাগে। মনে হয় যদি এসময়ে কেউ পাশে থাকতো! আরুইব্বার ঘর-বাড়ি এই ছইয়া ওয়ালা ডিঙ্গি। গাঙ্গের পারে বসত ছিল, আরুইব্বার কৈশোরে। মাঝি-মাল্লার কাম আরুইব্বাদের রক্তে, সেই ছোটবেলা থেকেই। রঘুনাতপুর বাজার থেকে গস্তি নাওয়ে মাল বোঝাই করে, রামচন্দপুর বাজারে পৌঁছে দিতে এক হপ্তা লেগে যেত। এমনই এক হপ্তার ক্ষেপ দিয়ে এসে পরিবারের অন্য সব সদস্যদের সাথে বাপ-দাদার ভিটে-মাটিও আর পায় না আরুইব্বা। রাইতের হোয়ারে সব গাঙ্গের পেটে গেছে। সেই থেকে আরুইব্বার বসতবাটি জলে ভাসা ডিঙ্গি।

নিজের বাড়ির উপর পারা কুইপ্পা আরুইব্বা রাত পার করে। সহায় সম্বল বলতে এই ডিঙ্গি। তো এমন নাদানের কাছে মেয়ে দেবে কোন পাষান বাপে! আরুইব্বা বিয়ের চলন, নাইওরী আনা, বেড়াতে যাওয়া এবং মালটানা এ সবই করে। কিন্তু সিনা দিয়া তুহান ঠেকাইতে পারে এমনি বুকের পাটা। তাই আগে থেকে বায়না না করলে আরুইব্বাকে পাওয়া কঠিন।

এ তল্লাটে আরুইব্বারে চেনে না এমন মানুষ খুব বেশী পাওয়া যাবে না। অনেক রুগী বা লাশও আরুইব্বার ডিঙ্গি চড়ে হাসপাতাল বা গোরস্থানে গেছে। মালের চালান চলনদারের হাতে দিয়ে, চাল আর রাব নিয়ে রান্না, তামাক কাটা-মাখা ঘাটেই করেছে। কিন্তু খাবে ঠিক বাড়ি এসে; মানে যেখানে বাড়ি ছিল।

গুড়গুড়িয়ে হুকু টানতে টানতে ছইয়ের ফাঁক দিয়ে বাইরের জোৎস্না দেখে আরুইব্বার মনটা কেমন করে উঠে। মনে পরে যায় অনেক দিন আগে কোন এক পরিবারের মাঝি হয়ে বেড়াতে যাবার কথা। সে রাতটাও এমনি জোছনায় প্লাবিত ছিল। তখন আরুইব্বার উঙ্কুর কাল।

প্রতিবেশী পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া:
স্বামী: হেগ গরে মেজন (মেহমান) আইছে, তুই ঠাট করি বইরইছত কিল্লাই?
স্ত্রী: আন্নে এক্কান কতা কইলেন, আঙ্গ বাইত মেজন আইছে। হেরা বেকতের মেজন। আন্নের হালান গামছা হিন্দি (পরা) মেজনের কাছে জাইয়াম?
স্বামী: ছিনাইল্যা মাগীর কতা হোন! কাহরের (শাড়ীর) তলে ছায়া (পেটিকোট) হিন্দি, সিনার উরফে তুলা বান্দি বুজি, মেজনের খেদমত করন লাগে?
স্ত্রী: আন্নে এগুন কি কন! ছায়া আর বেক জিনিস আন্নে আরে আইন্না দিছেন। আই হিন্দি দোষ কইচ্চি?
স্বামী: না, আন্নে হেগুন হিন্দি সিনা টান করি বেগানা বেডাগো দেহাইবেন, আই জুইত করি চাই থাহুম। আন্নেরে শাদি করি আই দোষ কচ্চি, আন্নে কতা বেশী কইয়েন্না। আন্নেরে আই রাইকতান্নো।

এতক্ষন ইমাম সাহেব চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এবার মৌনতা ভাঙ্গতেই হল। স্বামীর "আন্নেরে আই রাইকতান্নো" এ বাক্যে স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে। এখন যতদ্রুত সম্ভব স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করতে না পারলে অনাচার ঠেকানো দায়। পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যস্থতায় শরীয়তমত এক রাতের হিল্লার ফতুয়া ,ইমাম সাহেব বয়ান করলেন।

এখন হিল্লার লোক পাবে কোথায়? অনেক খোঁজা-খুঁজির পর সবাই আরুইব্বাকে হিল্লার উত্তম সমাধান ভাবলেন।

আরুইব্বা কোন অবস্থাতেই হিল্লা হতে রাজি নয়। একটা নতুন লুঙ্গি আর জামাইর আদরে আরুইব্বার মন নরম হল। শর্ত একটাই, সকালে শরীয়ত মত তালাক দিতে হবে। যাতে স্ত্রী সুখে -শান্তিতে আগের স্বামীর ঘর করতে পারে। এ আর এমন কি! আরুইব্বা রাজি হয়ে গেল।

বিপত্তি ঘটল বাসর নিয়ে। আরুইব্বা শরীয়তমত মহিলার স্বামী। স্বামী-স্ত্রীর মত একবিছানায় রাত্রি যাপন করতে হবে। আলাদা ঘর না পেয়ে আরুইব্বার ডিঙ্গিতেই বাসর করার সিদ্ধান্ত হল; বাড়ি থেকে ক্ষানিকটা দূরে, ডিঙ্গি, আমনের ক্ষেতের আইলে পারা দিল আরুইব্বা। লাজ নম্র নব বধূর মত, ছৈ-এর ভেতর গুটিশুটি বসে আছে বউ। আরুইব্বা কি করবে বুঝতে না পেরে ফাঁপর কাটাতে নতুন লুঙ্গির সাথে উপহার পাওয়া বিড়ির প্যাকেট থেকে দিয়াশলাইয়ের সাহায়্যে একটা বিড়ি ধরায়।
কৌতূহল বসে বধুটি ছালার চট সরিয়ে আরুইব্বারে এক নজর দেখতে চায়। গলুইয়ে বসে বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে আরুইব্বা ছৈয়ের ভেতর উঁকি দিতে উদ্যত। আর এমন সময় জোছনার আলোয় বধূর মিষ্টি মুখটি আরুইব্বার হৃদয়ে হয়তো আজীবনের জন্য গাঁথা হয়ে যায়।

সাহস করে বউ জিগায়: আন্নেগো বাড়ি কোনায়?
আরুইব্বা কয়: উত্তুরে।
বউ: আন্নে হুইতেন্নো?
আরুইব্বা: আইরাম।
আরুইব্বার ডিঙ্গিতে তেলচিটচিটে একটা কাঁথা আর একটাই বালিশ। সে কথা ভাববার সময় আরুইব্বা পায়নি। অন্য করোও মনে হয়নি। কাঁথা বালিশ জুড়ে বউটি শুয়ে আছে। একান্তই দয়া পরবশ হয়ে বউ আরুইব্বাকে এক পাশে একটু জায়গা করে দেয়। কাঁথার খানিকটা নিজের দিকে টানতেই বউয়ের উরুর সাথে আরুইব্বার শিশ্নর ঘষা লেগে যায়। লেজে পা পড়া সাপের ফনার মত খাড়া হয়ে গেল আরুইব্বার অংগ। সেটা লুকোতে আরুইব্বা বধূর থেকে একটু দূরে সরতে চেষ্টা করে। বধূ ভাবে আহা, আমার জন্য মানুষটির কত কষ্ট হচ্ছে! যাইনা আমিই বরং একটু কাছে এগিয়ে।
আর বধূর সেই এগিয়ে আসাটাই হল আরুইব্বার কাল। জীবনে প্রথম মিলনের তৃপ্তি হজম করতে আরুইব্বা আবার বিড়ি ধরায়। বধূ ভাবে হবে বোধ হয় আরেক "হলট"!
হলটের পর হলটে রাত্রি শেষ। এক রাত্তির সংসার ভাঙ্গতেই বোধ হয় মুয়াজ্জ্বিনের আযান ধ্বনিত হয়। আরুইব্বা আর একটা বিড়ি ধরায়। সেটা দেখে বউ ভাবে অরেক হলট দেবে নাকী! জড়তা অনেকটা কমে গেছে বলেই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করল: আরেক্কান হলট দিবেন্নি? আন্নেগো উত্তুইরা হলট গুন আর কাছে খুব মজা লাগে। আন্নে আরে ছাইড়েন্নো।
(আমাকে যারা সা.ইনে মিস করেন: তাদের প্রতি কৃকজ্ঞতা জানাতে গল্পটি এখানে দিলাম।)

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×