somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মানবিক স্বপ্ন ও ৭২ বিঘার বশিপুক সাম্রাজ্য

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাফি কামাল, গাজীপুর থেকে ফিরে: স্কুল ফেরত একটি ছোট্ট শিশু দেখেছিলেন এক অসহায় প্রবীণ কিষাণ দম্পতির আর্তনাদ। যারা নিজেরা অমানুষিক পরিশ্রম করে ছেলের জীবনে দিয়েছেন স্বচ্ছলতা। সময়ের বিবর্তনে এক সময় তাদেরই স্থান হয়নি ছেলের আনন্দপুরীতে। সে করুণ ঘটনা চাকরিজীবী পিতার স্কুল ফেরত শিশুটির মনে এঁকে দিয়েছিল এক মানবিক স্বপ্ন। সে স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় তিনি তৈরি করলেন বয়স্ক ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বশিপুক)। যেখানে নিরাশ্রয় নিঃস্ব ষাটোর্ধ প্রবীনদের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছেদ ও চিকিৎসা সেবা পায়। যেখানে আশ্রয় পেয়েছেন মোগল সাম্রাজ্যের নিঃস্ব উত্তরাধিকার থেকে ভাসমান বয়োবৃদ্ধ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার অসহায় প্রবীণ। ৬০০ প্রবীণের বসবাসের উপযোগী ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত এ ৭২ বিঘার পুনর্বাসন কেন্দ্রকে স্বনির্ভর ও সম্প্রসারিত করতে নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। স্বপ্ন দেখেন একদিন সারাদেশে প্রবীণদের জীবনের শেষদিনগুলো কাটবে সুখে-সম্মানে। তিনি হলেন খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল। যিনি গিভেন্সী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান। পড়াশোনা শেষে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঠিকাদারী করে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। দেশে ফিরে শুরু করেন তৈরি পোষাক শিল্পের ব্যবসা। সাংস্কৃতিক পরিবারের ছেলে মুকুল বড় ভাইয়ের হাত ধরে তৈরি করেছেন চলচ্চিত্রও। তবে কখনো ভুলতে পারেননি সে কিষাণ দম্পতির আর্তনাদ আর নিজের স্বপ্নকে। ব্যবসায় সফলতা পেয়েই উদ্যোগ নেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত হয়ে অবহেলিত, অসহায়, আশ্রয়হীন প্রবীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন বশিপুক। হয়ে ওঠেন এখানে বসবাসকারী প্রবীনদের আপনজন। তিনি ভাগ করে নিয়েছেন প্রত্যেকের সুখ-দুঃখ। ব্যস্ততার মধ্যেও সপ্তাহে তিনদিন দুইঘন্টা করে অবস্থান করেন বশিপুক-এ। খোঁজ-খবর নেন আশ্রিত প্রবীনদের। সবার সঙ্গে তার পারস্পরিক সম্মোধন, বাবা-মা। নিজের হাতেই প্রবীনদের এটা ওটা করে দেন। খোঁজ-খবর নেন অসুস্থদের। রাঙ্গামাটি, রাজশাহীসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলোও নিয়মিত পরির্দশন করেন প্রতিমাসে। তার স্ত্রী মাছুমা খাতুন লিপা আর ছেলে খতিব জাহিনও নিয়মিত সময় দেন বশিপুকে।
ভাড়া বাড়ি থেকে ৭২ বিঘার স্বনির্ভর বশিপুক সাম্রাজ্য
১৯৮৭ সালে উত্তরার আজমপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে এর যাত্রা শুরু। ১৯৯৪ সালে এসে গাজীপুর জেলার মনিপুর বিশিয়া কুড়িবাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালের ২১শে এপ্রিল নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মানবতাবাদী মাদার তেরেসা কেন্দ্রটির সম্প্রসারিত অংশের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমানে কয়েকটি টিলা ও পুকুর নিয়ে ৭২ বিঘার বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। সেখানে তিনটি পাঁচতলা, একটি এল প্যাটার্ণের টিনশেড ভবনে ৬০০শত লোকের আবাসন সুবিধা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে এখন বসবাস করছেন ২০৮জন প্রবীন নারী-পুরুষ। বশিপুকের বাসিন্দাদের বড় অংশটির বাড়িই বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুরের বিভিন্ন জেলায়। এদের মধ্যে নদীভাঙা, স্বামী পরিত্যক্ত ও পরিবার পরিত্যক্তই বেশি। তবে বাসিন্দা প্রবীনদের মধ্যে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। তবে এ পর্যন্ত উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১২০০। কেন্দ্রের পুরুষ নিবাসগুলোতে প্রতিকক্ষে ৮জন ও মহিলা নিবাসগুলোতে প্রতিকক্ষে ১২জন করে থাকেন। প্রতি কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাকা ও প্রত্যেকের জন্য রয়েছে আলাদা খাট-কম্বলসহ বিছানা। বসবাসকারীদের রুটিন মাফিক দৈনিক দুইবেলা ভাত এক বেলা রুটি ও বিকালে চা-নাস্তা দেয়া হয়। খাবারের মধ্যে থাকে সপ্তাহে তিনদিন আমিষ ও চারদিন নিরামিষ। বশিপুক-এ রয়েছে দুইজন অভিজ্ঞ ফুলটাইম চিকিৎসক-কয়েকজন সেবিকাসহ, সার্বক্ষনিক এ্যাম্বুলেন্স, ল্যাব সম্বলিত একটি মেডিকেল সেন্টার। সেখানে অসুস্থ প্রবীণরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পান। প্রতিটি ভবনেই টেলিভিশনসহ বিনোদন কক্ষে বসে প্রবীণরা উপভোগ করতে পারেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান। কেন্দ্রের সমৃদ্ধ পাঠাগারগুলো প্রতিদি রাখা হয় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা। বয়স্কদের খেলাধুলার সরঞ্জাম, বিনোদন পার্ক, আড্ডা দেয়ার জন্য সারি সারি বেঞ্চ। বিশাল ফুলের বাগানসহ একটি মসজিদ ছাড়া নানা ধর্মপালনের সহনশীল পরিবেশ। রয়েছে একটি নিজস্ব কবরস্থানও। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে একটি বাগান। দেশের বিভিন্ন মহলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এসব গাছের চারা রোপন করেছেন। প্রতিটি গাছের গোড়ায় রয়েছে একটি করে ভিত্তিপ্রস্তর। দেশি-বিদেশী সহযোগীতা ছাড়া পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করতে সেখানে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দুইটি মাছের খামার, একটি ব্রয়লার ফার্ম, একটি বেকারী। ২০০ বিঘা আবাদী জমি, সব্জিবাগান, পুরো এলাকা জুড়ে হাজারো মৌসুমী ফলের গাছও আয়ের উৎস। আয়ের আরেকটি প্রধান উৎস নিয়মিত গিভেন্সী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিত্যক্ত মালামাল বিক্রির পুরো অর্থ। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক দেখাশোনার জন্য রয়েছে সহ ২৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারও মার্জিত। এছাড়া রাজবাড়ির গোয়ালন্দ, রাঙ্গামাটির তবলছড়ি, রাজশাহীতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের শাখা। প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টারা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, বাউবি’র সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. শমসের আলী, সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক, সাংবাদিক কামাল লোহানী, প্রফেসর ডা. এম এ কে আজাদ চৌধুরী এবং সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ।
কারা থাকেন বশিপুকে
বশিপুকে জীবনের শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নিঃস্ব উত্তরাধীকার উচ্চশিক্ষিতা সৈয়দা রানা আলীরাজ, কালিহাতির জমিদারের নায়েবের স্ত্রী আমেনা খানমের মত অভিজাত মহিলা। এখানে আশ্রয় পেয়েছেন সার্টিফিকেটবিহীন আহত নারী মুক্তিযোদ্ধা, সড়ক দূর্ঘটনায় স্মৃতিভ্রষ্ট বিদেশিনী, নিঃস্ব ব্যবসায়ী, প্রতারণার শিকার সাবেক স্বচ্ছল প্রবীণ, যাত্রাশিল্পী, বেসরকারি স্কুল-কলেজের সাবেক শিক্ষক, উচ্চপর্যায়ের সাবেক সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী। যাদের অনেকের সন্তান থাকেন ইউরোপ-আমেরিকায়। গুলশান-বনানীর মত অভিজাত এলাকায়। অনেকের সন্তান চাকুরি করেন বড় বড় পদে। তবে তারা কেউ পিতা-মাতার খবর নেন না। সেখানে বসবাসকারী প্রত্যেক প্রবীনের জীবনই এক একটি বড় গল্প-ইতিহাস। কেউ স্ত্রীর চাপে, কেউ ঝামেলা এড়াতে আবার কেউ সম্পত্তির ঝামেলা এড়াতে পরিত্যাগ করেছেন পিতামাতাকে। আবার কেউ ছেলে-মেয়ের সংসারের অশান্তি এড়াতে নিজেই বেছে নিয়েছেন এ নিরূপোদ্রব আশ্রয়। এছাড়া বশিপুক এর রাজবাড়ি কেন্দ্রে নিরাশ্রয় বেশ কয়েকজন বৃদ্ধা পতিতাকেও আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বসবাসকারীদের কেউ কেউ বছরের দুই ঈদের বাড়িতে স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও অনেকেই বাড়ির মুখ দেখেননি কেন্দ্রে ভর্তির পর। প্রতিষ্ঠানে বসবাসকারী প্রবীনদের অনেকের মান-অভিমানের গল্প খুবই করুন। পরিত্যক্ত এক পিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও পিতা-পূত্র কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। দ্বিতীয়বার দেখা করতে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন পিতা। জীবিত পিতামাতাকে যে সন্তান দূরে সরিয়ে দেয় তারা অনেকেই মৃত্যুর পর শেষকৃত্তের দায়ও নিতে চায় না। তারপরও বশিপুকে জীবনের শেষদিনগুলো কাটানো বয়োবৃদ্ধদের রয়েছে মৃত্যুর পর মাটি। রয়েছে বশিপুকের রয়েছে নিজস্ব কবরস্থান। এ পর্যন্ত বশিপুকে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে মাত্র সাতজনের লাশ সন্তানরা নিয়ে গেলেও ২০০জনই কবর পেয়েছেন সেখানে।
বাসিন্দাদের কয়েকটি অনুগল্প
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার কুলসুম বিবি পাকিস্তান আমলে আইএসসি পাশ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীাও দিয়েছিলেন। মুুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হাতে ধরে পড়ে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে আত্মরা করেছিলেন। তবে আত্মীয়দের সহায়তায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসা কর্তৃপ কৌশলে লিখে নেন চিরকুমারী কুলসুম বিবি’র সম্পত্তি। ফলে শেষ বয়সে নিঃস্ব কুলসুম বিবির আশ্রয় হয় বশিপুক এ। মাওলানা ইদ্রিস আলী দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ মাদ্রাসায় শিকতার পাশাপাশি কোরআন কেন্দ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা করতেন। গবেষণা অন্তপ্রাণ এ শিকের সংসারও করা হয়নি। লাঠিতে চত্তরে হাঁটার সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই দাবি করলেন- তিনি জেনেটিক ইনজেকশন তৈরি করেছেন। তিনি তার এ জনগুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারটিকে মানুষের কল্যানে লাগানোর জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। তবে আবিস্কারে স্বীকৃতিতো পাননি উল্টো শেষ বয়সে নিরাশ্রয় হয়ে এসেছেন এখানে। একদা শ্যামপুর বাজারের আলুর আড়তদার ছিলেন িিতশ চন্দ্র সাহা। ব্রিটিশ আমলের এন্ট্রাস পাশ এ বৃদ্ধ একজন কণ্ঠশিল্পীও। যৌবনে স্ত্রীকে হারিয়ে সন্তানের মুখ চেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। বর্তমানে ছেলে কলকাতায় ডাক্তারী ও মেয়ের জামাই বেইলী রোডে পোশাকের দোকান করে। তবে তার খবর কেউ নেয় না। এক পর্যায়ে নিজেই এসে আশ্রয় নিয়েছেন বশিপুকে। বেঞ্চে বসে ‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো’ গানটি গাইতে গাইতেই তার চোখ ভিজে ওঠে। এক বয়োবৃদ্ধকে মসজিদের চত্তরে বসে রোদ পোহাতে দেখা গেল। জিজ্ঞাসা করতেই জামালপুরের এ বৃদ্ধ জানালেন, তিনি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছেন। আর আত্মীয়-স্বজন পরিত্যক্ত হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। পেয়েছেন বেঁচে থাকার প্রেরণা। গোপালগঞ্জের এক বনেদী পরিবারের মেয়ে কামরুন্নেছা (ছদ্মনাম)। যার এক কাজিন বর্তমানে সরকারের পূর্ণমন্ত্রী। যৌবনে কাটিয়েছেন আনন্দময় জীবন। সন্তানদের সংসারে হয়ে পড়েছেন অপাংক্তেয়। কিছুদিন মেয়ের সংসারে থাকলেও শেষে আশ্রয় নিয়েছেন বশিপুকে। ১০ বছরের এ বৃদ্ধা বাসিন্দা বছরে দুইবার বাড়ি যান। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, বনেদি বাড়ির মেয়ে আজ স্বজনহীন জীবন কাটাচ্ছি। তারপরও সান্তনা এখানে অন্তত কোন অবহেলা নেই। ভারতের মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের মেয়ে হোসনে আরা দেশভাগের সময় চলে আসেন বাংলাদেশে। স্বামী চাকরি করতেন কর্ণফুলী পেপার মিলে। স্বামীর মৃত্যুর পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। পুরান ঢাকায় তার তিনকাটা জমি থাকলেও স্বজনরা তা আতœসাৎ করেছেন। এখন মাঝে মধ্যে মেয়ের বান্ধবি তার খোঁজ-খবর নেন।
প্রবীণদের অবস্থান দেশে;বিদেশে
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে সপ্তম এবং দারিদ্রতা ও দূর্নীতি জর্জরিত বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের ১০ভাগই নিরাশ্রয় প্রবীণ নারী-পুরুষ। যে পিতা-মাতা সন্তানের লালনপালন ও আনন্দময় ভবিষ্যতের জন্য ক্ষয় করেন নিজের জীবন। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব পিতামাতা সে সন্তানের সংসারে হয়ে পড়েন অপাংক্তেয়। সে সন্তান শেষ বয়সে করেন অবহেলা। নিজের সংসারের ঝামেলা ভেবে পরিত্যাগ করেন বৃদ্ধ পিতামাতাকে। এক সময় বাংলাদেশে যৌথ পরিবারের শক্ত পারিবারিক বন্ধন থাকলেও এখন তা অনেকটাই ভঙ্গুর, নড়বড়ে। শিল্পায়ন, নগরায়ন ও প্রতিযোগীতামুলক সমাজ ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাবে এদেশের সমাজ জীবনেও দেখা দিচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ভাঙন, পারিবারিক বন্ধনে শৈথিল্য, সংকীর্ণ জীবনধারা পারিবারিক জীবনকে করে তুলেছে জটিল। ক্রমবর্ধমান এ স্পর্শকাতর জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত বিশ্বে নানাবিধ কর্মসূচী নেয়া হলেও আমাদের দেশে প্রবীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বড় ধরনের কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশের নিরাশ্রয় ও প্রতারিত বয়োবৃদ্ধরা এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। কেউ কেউ আত্মসম্মান রক্ষায় নিরবে হজম করেন পারিবারিক অনাদর-অবহেলা। মেনে নেন মানবেতর জীবন। এমনি এক নাজুক পরিস্থিতিতে বশিপুক কোন দেশি-বিদেশী সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের অবহেলিত, অসহায় প্রবীণদের জন্য নিজ খরচায় অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-বিনোদনের সকল মৌলিক চাহিদা পুরণের মহান দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া বশিপুক পরিত্যক্ত ও অনাকাঙ্খিত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন অবাঞ্চিত, পরিত্যক্ত শিশু এবং রাস্তাঘাট, রাজধানীর বেশিরভাগ কিনিক ও নার্সিং হোম থেকে আত্মপরিচয়হীন শিশুদের এনে পরবর্তীতে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে দত্তক দেয়া হয়। নিঃসন্তান দম্পতিরা কয়েকটি মানবিক শর্তে বশিপুক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারেন। এর মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত শিশুরা যেমন পাচ্ছেন সম্মানের সঙ্গে বেড়ে ওঠতে পারছে তেমনি নিঃসন্তান দম্পতিরা পাচ্ছেন সন্তান আনন্দ। তবে দত্তক নেয়া শিশুদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বাৎসরিক রিপোর্ট দিতে হয় প্রতিষ্ঠানে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা: স্বপ্নের শেষ নেই
বশিপুক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও গিভেন্সী গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল বলেন, আগামী কয়েক বছর পর ব্যবসা-বানিজ্যের দায়িত্ব ছেলের হাতে দিয়ে তিনি পুরোদমে বশিপুক আন্দোলন শুরু করবেন। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের জেলা-উপজেলায় ঘুরে প্রবীনদের নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য এ আন্দোলন গড়ে তুলবেন। যেন সন্তানরা তাদের পিতা-মাতাকে শেষ বয়সে অনাদর-অবহেলা না করেন। ঢাকা সিটিতে ১০টি প্রবীণ সহায়ক কেন্দ্র, ১০টি প্রবীণ নিবাস ও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সম্প্রসারণ করবেন বশিপুক। সেখানে প্রবীণরা বিনামূল্যে আইন ও সালিশী সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, বিনোদন ও পুনর্বাসন সহায়তা পাবেন। গাজীপুর মূল প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে একটি ইনডোর হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল ও একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। কোন ধরনের সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াই নিজস্ব উৎস হতে যাবতীয় ব্যয়ভার মেটানো বশিপুক-এর জন্য তিনি নিজ খরচে জয়দেবপুর চৌরাস্তার পাশেই দেশের সর্বোচ্চ একটি ভবনটি নির্মাণ করবেন। যে ভবনের সম্পূর্ণ মালিকানা থাকবে বশিপুকের। ইতিমধ্যে সে প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়া তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ কেন্দ্রের নামে একটি ট্রাস্টি বোর্ড করে দান করবেন যাতে বশিপুককে থমকে দাঁড়াতে না হয়। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে নিজস্ব অবস্থান থেকে মানবতাবাদী উদ্যোগ গ্রহনে উদ্ধুব্ধ করবেন। বশিপুকে ভর্তির নিয়মকানুন : বশিপুকে ষাটোর্ধ বয়সের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ সবাই থাকতে পারেন। কারও সহায়তা ছাড়া চলাফেরায় সক্ষম, মানসিকভাবে সুস্থ প্রকৃত অসহায়রা বশিপুকের উত্তরার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ভর্তি হতে পারেন। তবে বশিপুক সম্পূর্ণ ধুমপানসহ সকল নেশামুক্ত এবং সেখানে নিজের ছোটখাট কাজ নিজেকেই করতে হয়। সব সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যোগাযোগের ঠিকানা: বাড়ি-০৬, রোড-১৩, সেক্টর-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০।

Click This Link
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×