মানবতাবাদী মাদার তেরেসা- কাফি কামাল
মানবদরদী মিশনারী ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী মাদার তেরেসা। তিনি কলিকাতার স্বর্গীয় তেরেসা নামে খ্যাত। আসল নামÑ আগ্নেস্ গঞ্জা বয়াজু। (আলবেনীয় ভাষায় গঞ্জা শব্দের অর্থ গোলাপকুঁড়ি)। জন্ম ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট অটোম্যান সাম্রাজ্যের (বর্তমানে স্কোপিয়ে, ম্যাসিডোনিয়ো প্রজাতন্ত্রে)র ইউস্কুপ-এ। নৃ-তাত্ত্বিকভাবে আলবেনিয়ান। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহনের পর আমৃত্যু তিনি ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তিনি রাজনীতিবিদ পিতা নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। ১৯১৯ সালে ৮ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মিশনারীদের গল্প শুনতে ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়েসেই তিনি ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনোদিন দেখা হয়নি। অ্যাগনেস আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিখেন। ১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪মে তেরেসা নামে সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম ও ১৯৩৭ সালের ১৪শে মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরে শহরে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ধর্মীয় নির্জনবাসের জন্য দার্জিলিং যাওয়ার সময় তার মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে। ১৯৪৮ সালে দরিদ্রের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দেন। তবে প্রথম দিকের দিনগুলো ছিল কষ্টকর। হাতে অর্থ ছিল না। গরীব ও অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাকে ধনী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতায় মাত্র ১৩ সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি নান কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১৯৫২ সালে কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। পরে এ কেন্দ্রের নাম হয় নির্মল হৃদয়। সেখানে মুসলিমদেরকে কুরআন পড়তে ও হিন্দুদের গঙ্গার জলের সুবিধা দেয়া হয়। এরপর কুষ্ঠরোগ আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন। মিশনারি শিশুদের লালন-পালনের জন্য ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরণের স্বর্গ। অচিরেই মিশনারিস অফ চ্যারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এর ফলে অনেক অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়, ক্রমান্বয়ে রোম, তানজানিয়া এবং অষ্ট্রিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার তেরেসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইসরায়লী সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে এনেছিলেন। রেডক্রসের সহায়তায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে যান। আশির দশকে মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। তেরেসা ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের মধ্যে, চেরনোবিলের বিকিরণ আক্রান্ত অঞ্চলে, আমেরিকার ভূমিকম্প আক্রান্ত সবখানেই ছুটে গেছেন সেবারব্রত নিয়ে। ১৯৯১ সালে মাতৃভূমি আলবেনিয়ার তিরানা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম’। ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে ৫১৭টি মিশন পরিচালনা করছিলেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তবে গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃড় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন। এছাড়া বৃটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, দ্য ল্যান্সেট, স্টার্ন সাময়িকীসহ নানা গণমাধ্যমে চ্যারিটির অর্থসংগ্রহ, কর্মকাণ্ড, চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে বিস্তর সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। তবে ম্যালকম মাগারিজের বই ‘সামথিং বিউটিফুল ফর গড’ তেরেসার কর্মকাণ্ডকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেন। তিনি তাঁর সেবাকার্যের জন্য ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরতœ, ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম ও ১৯৭৮ সালে বালজান পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে পোপ জন পলের সঙ্গে দেখা করতে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে নিউমোনিয়া হলে হৃদরোগের অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করলে তিনি কাজ চালিয়ে যান। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয় রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর ৮৭ বছর বয়সে কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর পোপ দ্বিতীয় জন পল তাঁকে স্বর্গীয় আখ্যা দেন।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।