উৎসর্গ : মাহমুদুর রহমান সুজন, মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, লেখোয়ার, অপর্ণা মম্ময়, তন্ময় ফেরদৌস, টিঙ্কু জিয়া, আগন্তুক কাক, মাহবু১৫৪, মাথা ঠাণ্ডা, জুন, বোকামন, শায়মা, হিমু_ 017, সানফ্লাওয়ার আর বাকি সবাই যারা লেখাটি পড়েছেন।
আজ লিখতে বসেছি এই ঈদে আমার বাচ্চাদের ভ্রমণ কাহিনী। আগের পোস্টে বলেছিলাম বাচ্চাদের নিয়ে জার্নির টেনশনের কথা। ১৩ তারিখ রাত ৮.৩০ মিনিটে গাড়ি ছাড়ার কথা। কাউনটারে বসে অপেক্ষা করছি। নিজে না বসে সপ্তককে চেয়ারে বসিয়েছি আর সুর মাঝে মাঝে আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে নতুবা বাবার সাথে বাইরে যাচ্ছে।এরই মধ্যে পাশে বসা মহিলার সাথে আর তার ৮/৯ বছর বয়সি বাচ্চার সাথে সপ্তকের গল্প জমে উঠেছে। কী গল্প সেটা তারাই ভাল জানে। আরেক পাশের ভদ্রলোককেও মামা ডাকা শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ সুর এসে আবদার শুরু করল পপকর্ণ খাওয়ার।মানে খেতেই হবে। অগ্যতা কি আর করা খৈ খোঁজা শুরু হল, পাওয়াও গেল। দুই ভাই মনের সুখে পপকর্ণ খাওয়া শুরু করল। অবশ্যই পাশে বসা নতুন আত্মীয়দের নিয়ে। গাড়ি আধা ঘণ্টা লেটে ছেড়েছিল। সবাই গাড়িতে উঠার পর আমার বরের বেশ কয়েকজন বন্ধু এবং তাদের স্ত্রীদের সাথে পরিচয় হল।সমস্যা শুরু হল কিছুক্ষণ পর। দুই ছেলেই আমার কোলে বসতে চাইছে কিন্তু সপ্তক কিছুতেই সুরকে আমার কাছে আসতে দিচ্ছেনা।তাই নিরুপায় হয়ে বর সাহেব সপ্তককে পেছন দিকে বসা বন্ধু দম্পত্তির কাছে সপ্তককে ট্রান্সফার করেছিল।আর সুর আমার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল। মাঝে একবার খবর নিলাম সপ্তকের। জানলাম, সবার সাথে ছোটর গল্প জমে উঠেছে। টাঙ্গাইল পৌঁছতেই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। ছেলেরা আমার পাগল হয়ে উঠল বাস থেকে নেমে যাবার জন্য।বন্ধু দম্পতির সামনের সিটে বসা লোকজনের মাথায় সপ্তক কয়েকটা চাটিও মেরে বসল।সেই সাথে শুরু হল চিৎকারের কনসার্ট। যাই হোক অবশেষে গাড়িও ছুটল ছেলেরাও ঘুমাল। সপ্তক ঘুমাল অবশ্যই সেই দম্পত্তির কোলে লম্বা হয়ে । অবশেষে ওদের দাদার বাড়ি পৌঁছালাম। আমার নিরীহ ছেলে সুর সেখানে গিয়ে মারপিট প্র্যাকটিস শুরু করল তার চেয়ে পাঁচ/ ছয় বছরের বড় চাচাত ভাইয়ের উপর আর সপ্তক শিখল ‘লুঙ্গি ড্যান্স'’।
এবার আসি ফেরার কথায়। লালমনিরহাট থেকে ১৯ তারিখ দিনের ট্রেনে রওয়ানা দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে শোভনের চেয়ার ম্যানেজ করা গিয়েছিল। উলটা পাশে বসেছিল একজন মা আর তার ২৮/২৯ বছরের চাকুরীজীবী মেয়ে। মেয়েটা সপ্তককে খুব পছন্দ করেছিল। ওর স্বভাবের বিষয়ে আমি মেয়েটাকে আভাস দিয়ে রেখেছিলাম। সে আমাকে পাত্তাই দিলনা। বরং জানাল তার নাকি দুষ্ট বাচ্চা খুব পছন্দ। কিছুক্ষনের মধ্যে দেখলাম ট্রেনে লোকজন ভরে গেছে, আর তিল ধারনের জায়গা নেই। কিন্তু তাতে কি? আমাদের কাছাকাছি সপ্তকের যেই মামারা (যদিও চাচা হওয়ার কথা কারন উনারা ওর বাবার এলাকার) দাঁড়িয়ে ছিল সবাইকে সে তাকে কোলে নিতে বাধ্য করল। সেই সাথে শুরু হল তার ছড়া- ‘আমার গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মা’ বুঝুন আসল ছড়ার কী ভয়ঙ্কর অবস্থা। আরও যেটা ভয়ঙ্কর কাজ সে করল তা হল পানি খেয়ে সেই মেয়ের ওড়না ধরে টান দিল মুখ মুছার জন্য। সে মুহূর্তে মনে মনে ভাবছিলাম বাপধন ০২ বছর হওয়াতে বেঁচে গেছিস যদি ০২ না হয়ে ২০ বছরের হোতি তাহলে তোর খবরই ছিল। শুধু এটুকুই নয় কত যে খাতির সেই মেয়ের সাথে আর সেই মেয়ের মায়ের সাথে। এভাবে তিন চার ঘণ্টা বেশ ভালই কাটল। আমার সুর বেশ কয়েকবার নামতে চাইল। কিন্তু ট্রেনের এই অবস্থায় ওদের বাবাও রিস্ক নিলনা। সুর, নামতে না পারার দুঃখে একসময় পাথর হয়ে গেল। অবশেষে বাসায় পৌঁছেছিলাম রাত প্রায় একটায়। মজার মুহূর্ত গুলো শেয়ার করলাম, কষ্টগুলো নয়। তবে বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়েছিল খাওয়ায়, আর ঘুমানোতে। আর সেই মেয়ে...... শেষমেস স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে আমার সপ্তক ভীষণ দুষ্টু তবে খুব মিশুক। .........আমার এই আবোল তাবোল লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।