সপ্তকের বয়স অক্টোবরে তিন হবে কিন্তু এর মধ্যেই ওর পাকামিতে আমাদের অবস্থা রীতিমত আশঙ্কাজনক।প্রতিদিন সে আমাদের আদব-কায়দা, নিয়ম- নীতি শেখাতে ব্যস্ত। একটু বকা দিলেই শুনতে হচ্ছে-'ছি! এসব কী কথা বল তোমলা, এসব ভাল কথা না'। তার কথার মাঝখানে কেও কথা বলতে গেলেই শুনতে হচ্ছে- 'তুমি চুপ কল, তুমি কথা বলনা, শোন আমার কথা শোন'। মাঝে মাঝে রান্নাও শেখায় আমাকে। বলে- 'শোন মা তেল দিছো? এখন আদা বোটা (বাটা) দাও, চিনি বোটা দাও, নবন দাও, আল তারাতারি নান্না কলো আমি খাব'। গত এক সপ্তাহ ধরে সে নিজের বিয়ে নিয়ে খেপেছে। বিয়ের পোশাক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ছোট প্যান্টের আশপাশ মুড়ে দেওয়া ছেঁড়া ম্যাক্সি। যতবার আমি ভাল একটা ওড়না বা জামা পরাতে যাই সে চিৎকারকার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এরপর নিজের ছোট্ট প্যান্টের (যেটাকে আসলে নেংটির সাথে তুলনা করা চলে) চারধারে আমার ছেঁড়া ম্যাক্সিটা খুব যত্নের সাথে গুঁজে দেয়। কাপড় চারপাশ দিয়ে ঝুলতে থাকে আর সে মুগ্ধ নয়নে নিজেকে আয়নায় দেখে। পাত্রীটি কে জানেন?আমার পয়তাল্লিশ বছর বয়সী খালা, নাম ফিলিসিতা। সপ্তক অবশ্য হবু বৌয়ের নাম ধরেই ডাকে। খালা যেদিন বাসায় বেড়াতে আসে সেদিন আমাদের সবার খবর হয়ে যায়। তখন খালার প্রধান দায়িত্ব থাকে সপ্তকের পা টিপে দেয়া, যখন তখন ধপাস করে সপ্তকের কোলে বসা হজম করা, বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়ানো, নিরপরাধ সুরকে কোলে বসা থেকে বিরত রাখা, আরও কত কি! সেদিন খালা যখন আমাকে নাম ধরে ডাকছে তখন সপ্তক তাকে ধমক দিয়ে বলছিল-'তুমি মা মুন্নি ডাকো কেন? দুদু মা বলতে পালনা'(সপ্তক আমার মাকে দিদা মা আর আমাকে দুদু মা বলে ডাকে। শুনতে একটু কেমন কেমন শোনালেও কিছু করার নেই)। লিখতে গিয়ে মনে পড়ে গেল এই ঈদের পরের দিনের কথা। সবাই মিলে হাতির ঝিলে বেড়াতে গিয়েছি। অনেক ভিড় ছিল। হাঁটতে হাঁটতে আমি একটু এগিয়ে গিয়েছিলাম। তখন সপ্তকের ডাকের কারনেই সবাই বুঝতে পেরেছিল যে আমি তার কোন মা! যাই হোক বলছিলাম হবু বউমার কথা। ছেলে আমার, প্রতিদিন বিয়ের সেই পোশাক পরে আমাকে মনে করিয়ে দেয়- 'মা, শোন, আমি ফিলিচিতাকে বিয়ে কলবো। তুমি নান্না কলো, আমলা খাবো' অথবা 'তুমি আমাকে নিয়ে যাও, আমি এক্ষনি বিয়ে কলবো'। কী যে করি! প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। ব্যাপক বিনোদন, কি বলেন!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮