শুক্রবার সকালে ছেলে দুটোর সাথে খেলছিলাম।খেলারই অংশ হিসাবে ছোট ছেলে ‘সপ্তক’ যাকে এখনও আমরা ‘ছোট’ বলেই ডাকি সে বিছানার নীচে রেখে দেয়া প্রেসার কুকার বের করে আমাকে জিজ্ঞাসা করল ‘মা, কী নান্না কব্বো?মাংস না হেপি বাডডে(কেক এর আরেক নাম) নান্না কব্বো’ তখন সে কোনটা খেতে চায় জিজ্ঞেস করাতে বলল হেপি বাডডে খাবে। লেগে গেলাম যুদ্ধে। যেহেতু ওভেন নেই তাই আমি প্রেসার কুকারেই কেক বানাই। তবে প্রায় দুমাস হল এই লাইন থেকে দূরে আছি। যাহোক, চিন্তায় পড়ে গেলাম উপকরণ নিয়ে। ফ্রিজে খুব নরম কয়েকটা আম ছিল সেগুলোকে পেস্ট বানিয়ে ফেললাম, তাতে চিনি মিশিয়ে দিলাম। এরপর বোলে ময়দা বেকিং সোডা মিশিয়ে বেকিং পাউডারের সন্ধানে গিয়ে হতাশ হলাম। এক কৌটা পাউডার গায়েব।এটা সবসময় ডাইনিং টেবিলের উপর থাকে। তন্ন তন্ন করে সম্ভাব্য জায়গা খুঁজে কি মনে করে খালি বোতল, টিন এর কৌটা রাখার জায়গায় যেয়ে কাঙ্খিত জিনিষের সন্ধান মিলল।বুঝলাম এটা সাহায্যকারী বোনটি আর না হলে আমার সপ্তকের কাজ। এরপর এলো ডিম মেশানোর পালা। ফ্রিজ খুলে দেখি ডিমও নেই। নীচের দোকান থেকে এক হালি ডিম আনানো হল। সব কিছু মিশিয়ে চুলায় চাপিয়ে দিলাম। নামানোর ৩/৪ ঘণ্টা পর খুলে বের করার পর কেকটা দেখে মনটা ভাল হয়ে গেলো। তারপর মনে হল বাইরে তো ঠিকঠাক ভিতরে যদি সদরঘাট হয় তাহলে! কেটে দেখা গেল ঠিকই আছে। পরিবেশনের পরও সবাই প্রশংসা করলো। আমার কষ্ট তখনই সার্থক হল যখন আমার ‘সুর’ আর ‘সপ্তক’ মজা করে খেল। উপকরণ আর প্রস্তুত প্রণালী দিয়ে দিলাম সামুর পাঠক পাঠিকাদের জন্য।
উপকরণঃ ময়দা ২ কাপ, চিনি দেড় কাপ, লবন ১ চিমটি, বেকিং সোডা আধা চা চামচ, বেকিং পাউডার ১চা চামচ, পাকা আমের কাথ ১ কাপ, সয়াবিন তেল পৌনে কাপ, ডিম ১টা, বানানা ফ্লেভার ১ টেবিল চামচ, তরল দুধ ১কাপ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটা বাটিতে আমের কাথ রাখতে হবে, তাতে চিনি মিশিয়ে দিতে হবে। একটা বড় বাটিতে ময়দা নিয়ে একে একে লবন, বেকিং পাউডার ও সোডা ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে একে একে তরল দুধ(বানানা ফ্লেভার মিশিয়ে দিতে হবে), তেল ডিম, আমের কাথ মেশাতে হবে।সমস্ত কিছু ভাল করে হাত দিয়ে মেশাতে হবে। মিশ্রণটি যেন খুব বেশি পাতলা বা ঘন না হয়। সমস্ত পরিমান ঠিক থাকলে পাতলা হবার কথা না। এরপর মনে করে আগেই প্রেসার কুকারের ছিপি খুলে রাখতে হবে, ভুলে গেলেই সর্বনাশ।কুকারে ভিতরে হাত দিয়ে সয়াবিন তেল হালকা করে মাখিয়ে নিয়ে ময়দা ছিটিয়ে দিতে হবে। সবজায়গায় ভাল করে ময়দা মেখে গেলে বাড়তি ময়দা ঝেড়ে ফেলতে হবে।চুলায় হালকা আঁচে কুকার ২ মিনিট রেখে নামিয়ে নিয়ে কেকের মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে। কুকারে ঢাকনা দিয়ে হালকা আঁচে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে ১৫/২০মিনিটের জন্য। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে একবার চেক করে নিতে হবে। নরম মনে হলে আমার ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খুলে কাঠি বা খুন্তি দিয়ে খুঁচিয়ে দেখতে হবে। কিছু লেগে না থাকলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে কেক বের করে নিয়ে পরিবেশ করতে হবে।
বিঃ দ্রঃ দুইমাস আগের ঘটনা এটি। কেক বানিয়ে ঘটনাসহ রেসিপিটি লিখে রেখেছিলাম। পোস্ট করা হয়নি। আজ সুযোগ হল। এই রেসিপিতে কেক বানালে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। শুভ কামনা রইলো সবার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২০