বাড়িতে বাবা নতুন টিভি কিনে এনেছেন , পুরানোটার সাউন্ড নষ্ট । নাটকের ডায়লগ নাকি কিছু বোঝা যায়না । বাবা কি যে এক নাটক দেখেন বুঝিনা , নাটক কেউ দেখে , বাবা কার্টুন কেন দেখেননা এ নিয়ে আমরা ভাই বোনরা বাবার উপর ক্ষ্যাপা । আমাদের প্রিয় বাবা নাটকের ঐ সময়টাতে পর হয়ে যান । নাটকের নাম অয়োময় । আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি , বিরক্তি নিয়েই টিভির সামনে বসে বসে নাটক দেখি , ধারাবাহিক এই নাটকটি দেখতে দেখতে এক সময়ে গিয়ে বুঝলাম নাটকটি আমার ভালো লেগে গেছে । কার্টুন আর দেখার ইচ্ছে জাগেনা । নাটক শেষ হলে অপেক্ষায় থাকি পরের সপ্তাহের । আয়োময় একসময় শেষ হয় । এরপর আসে কোথাও কেউ নেই , এ নাটকের জনপ্রিয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই , শুধু মনে আছে এ নাটক যখন চলতো তখন টিভিরুম হয়ে উঠতো সিনেমাহলের মতো হাউসফুল । আর শেষ পর্বের পর কী হয়েছিল দেশে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা । পাড়ার অন্যান্যদের সাথে আমিও বাকের ভাইয়ের পক্ষে মিছিল করেছি ।
এরপর অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলাম শেষপর্বের ভুল শুধরে নাটকটি আবার দেখানো হবে । আর দেখানো হলো না । এই নাটকটির পরেই জেনেছি এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে একজন তাঁর নাম হুমায়ুন আহমেদ । শ্লোগান দিয়েছি হুমায়ুন আহমেদের চামড়া তুলে নেব আমরা ! তিনিই নাট্যকার । পরবর্তীতে সেই দুচোখের দুষমন হুমায়ুন আহমেদ হয়ে ওঠেন একজন প্রিয় মানুষে ।
নক্ষত্র রাতে , আজ রবিবারের মতো নাটকের হাত ধরে তাঁর উপন্যাস আসতে শুরু হয় ঘরে । তাঁর প্রথম উপন্যাস পড়েছিলাম রুমালি এরপর মেঘ বলেছে যাব যাব । কী অদ্ভুত ! কী বিচিত্র তাঁর লেখনী । তাঁর ভাষাতেই বলি বড়ই সৌন্দর্য । মেঘ বলেছে যাব যাব এর শেষটা পড়ে সেই বয়সে চোখে পানি চলে এসেছিল । তাঁর এইসব দিনরাত্রি , বহুব্রীহি , গৌড়িপুর জংশন , নন্দিত নরকে , শঙ্খনীল কারাগার , তিথীর নীল তোয়ালে , মৃন্ময়ী যখন পড়া হয়ে গেল , শেষে শুধু একটা কথাই বলেছি আহ্ ! এ তো আমার পাশের বাড়ির গল্প । এ রকম অনেক উপন্যাসে তিনি ছড়িয়েছেন ভাললাগা । মধ্যহ্ন , জোৎস্না ও জননীর গল্প তাঁর অন্যতম উদাহরন । তাঁর নিশিকাব্য ছোটগল্পের বইটি পড়েছিলাম বহুবছর আগে এখনো সুযোগ পেলেই বইটি পড়ি এবং পড়ি । প্রতিটি গল্প পড়ে পেয়েছি ভিন্ন রকমের স্বাদ ।
নিন্দুকরা বলেন হুমায়ুন জনপ্রিয় লেখক তাঁর সাহিত্যের আয়ু বড়জোর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত । ইতিহাস বলে , একথা আগেও বলা হয়ছিল অনেকের ক্ষেত্রে । শরত্ বাবু , মার্ক টোয়েন এমনকি জীবনানন্দ দাসও বাদ যাননি । জীবনানন্দ তো সমালোচকদের বিরুদ্ধে একটা কবিতাই লিখেছিলেন সমরুঢ় নামে ।
হুমায়ুন আহমেদের আর একটি সার্থকতা হলো কয়েকটি চরিত্রের জন্ম দেয়া হিমু , মিসির আলী , শুভ্র তাঁর উদাহরন । বাইরের দেশ থেকে কখনো কেউ বইমেলার সময় ঘুরতে আসলে তো সে ধরেই নেবে হিমু কোন জনপ্রিয় ব্যক্তি যার কৃতকর্মের জনপ্রয়তার জন্য তাঁর এতো ভক্ত অথবা হিমু কোন ধর্মীয় গোষ্ঠির প্রধানের নাম ।
আর একটা কথা তো বলাই হলোনা সেটা তাঁর সিনেমা । আগুনের পরশমনি , শ্রাবণ মেঘের দিন , দুই দুয়ারী নামের এই সিনেমা গুলো বারবার দেখা প্রিয় কিছু সিনেমা । তাঁর শ্রাবণ মেঘের দিন বিবিসির জরিপে সর্ব কালের সেরা দশটি বাংলাদেশি সিনেমার একটি ।
আজ হুমায়ুন আহমেদের তেষট্টিতম জন্মদিন । তাঁর প্রতি থাকলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা । তিনি অসুস্হ । তাঁর রোগমুক্তি কামনা করছি । স্যার আপনি সুস্হ্য হয়ে উঠুন , আপনার অপেক্ষায় থাকলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫৪