জার্মানির গবেষকেরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৪৬ বছর বয়সী মিক্কার চোখে তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন একটি চিপ বসিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরই পাল্টে গেছে মিক্কার জীবন। এখন নামের বানান কেউ ভুল লিখলেও তা ধরতে পারছেন তিনি। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাঁর নামের বানানে একটি অক্ষর কম লিখেছিলেন। সেটিও ধরতে পেরেছেন তিনি। গবেষকেরা তাঁদের সফলতার ঘোষণা দিয়েছেন আর মিক্কার দীর্ঘদিনের অন্ধকার জীবনে আলো এসেছে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হলো? গবেষকেরা একে অলৌকিকতার বদলে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফল হিসেবেই দেখছেন।
মিক্কা ‘রেটিনিটিস পিগমেনটোসা’ নামের বংশানুক্রমিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতায় ভুগছিলেন। এটি এমন এক ধরনের রোগ, যা চোখের রেটিনায় আলো শনাক্তকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। কোষগুলো মরে গেলে রোগীর দৃষ্টিশক্তি চোখের কোণের দিক থেকে কমতে শুরু করে। মিক্কার ক্ষেত্রে এ রোগ এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে তিনি কেবল শক্তিশালী উজ্জ্বল কোনো আলোর দিক অনুভব করতে পারতেন। তাঁর সঙ্গী হয়েছিল ছড়ি। ছড়ি ছাড়া মিক্কা কোথাও যেতে পারতেন না। গবেষকেরা দৃষ্টি প্রতিস্থাপন পদ্ধতি হিসেবে মিক্কার রেটিনায় তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন চিপ বসিয়ে দেন। এতেই মিক্কার জীবন পাল্টে গেছে।
এবারহার্ট জেননারের নেতৃত্বে জার্মান একদল বিজ্ঞানী ‘জেননার চিপ’ নামে নতুন এ চিপ বা খুদে যন্ত্রাংশটি উদ্ভাবন করেছেন। চিপটিতে এক হাজার ৫০০ আলো শনাক্তকারী ইলেকট্রোড রয়েছে। রেটিনার মধ্যে বসানো হলে এর ওপর আলো পড়ে এবং বৈদ্যুতিক তরঙ্গ তৈরি করে। চিপ নিয়ে পরীক্ষার প্রাথমিক অবস্থায় কম রেজুলেশনে বস্তু শনাক্ত করাতে সফল হয়েছেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে মিক্কার নতুন জীবনই তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
দৃষ্টি প্রতিস্থাপন করার আগে গবেষকেরা প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। কতটুকু আলো, কী পরিমাণ বিদ্যুত্প্রবাহ তৈরি করে চোখে কী দৃশ্য দেখাবে, সব পরীক্ষাতেই গবেষকেরা সফল হয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মার্ক হুমায়ুন এ গবেষণার চ্যালেঞ্জ বিষয়ে জানিয়েছেন, চোখের মধ্যে চিপ বসাতে হলে কাটা-ছেঁড়া বা অপারেশনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এ ছাড়া চোখের ভেতর বসানো চিপটিকে রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চোখের মধ্যে থাকে লবণাক্ত ভাপসা পরিবেশ, যা ইলেকট্রনিক কোনো চিপের কর্মক্ষম থাকার ক্ষেত্রে মোটেও অনুকূল পরিবেশ নয়।