নাসাউ এর কন্ঠলগ্ন ছোট্ট দ্বীপটাই স্বর্গদ্বীপ। নাম আর সৌন্দর্যে কোন পার্থ্ক্য নেই। নীল সাগরের ক্যানভাসে আঁকা কোন নিসর্গের ছবি যেন।
তবে প্রাচীন আরাওয়াকদের সময় পেরিয়ে এই দ্বীপ এখন অনেক আধুনিক।
সাগর প্রনালী'র উপড় গড়ে উঠেছে সেতু। বোট এর পাশাপাশি এই সেতু ধরে সরাসরি চলে যাওয়া যায় প্যারাডাইজ আইল্যান্ড এ।
পায়ে চলা পথ রুপ নিয়েছে প্রশস্ত রাজপথে। এমন পথ দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। মনেই হবেনা এরকম শহুরে একটা পথ আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে কোন স্বপ্নালোকে।
প্যারাডাইজ আইল্যান্ড এর মূল বীচ তিনটি। ক্যাবেজ বীচ, রক পয়েন্ট বীচ (গুডম্যান বে তে) আর পাইরেট বীচ। সবগুলো বীচ ই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট মন্ডিত। তবে সবখান থেকেই দেখা যায় বাহামার অপার নীলের হাতিছানি।
ক্যাবেজ বীচ এর একাংশ।
ক্যাবেজ বীচ ধরে হাটতে থাকলে চলে যাওয়া যায় পাইরেট বীচ এ। তবে আটলান্টিসের ভেতর দিয়েও অন্যান্য বীচ এ যাবার রাস্তা আছে।
এমন স্থানে দাড়িয়ে ইচ্ছে হয় ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাই.......
পাইরেট বীচ এ আর পাইরেট খুজে পাওয়া যায় না। যারা আছে তারা বিমোহিত জনতা...
পাইরেট বীচ এর অপর অংশের অসাধারন ভিউ।
প্যারাডাইজ আইল্যান্ডের আরেক আকর্ষন 'আটলান্টিস ' রিসোর্ট। এটি একাধারে হোটেল, থিমপার্ক, ওয়াটার পার্ক (ক্যারিবিয়ানের সবচাইতে বড় ওয়াটার পার্ক)। বোর্ডার না হয়েও এখানে একটা দিন কাটানো যায়। এখানে না গেলে কিছু একটা অসম্পূর্ন হয়ে থাকবে।
গুডম্যান বে থেকে আটলান্টিস।
প্যারাডাইস আইল্যান্ডে অনেক সেলিব্রেটির বসবাস। কেউ কেউ স্থায়ী বাড়ীও কিনে রেখেছেন। সময় পেলেই ঢু দিয়ে যান এই নিসর্গে।
এই বাড়ীটা অভিনেতা নিকোলাস কেজ এর। এছাড়া চার্লি চ্যাপলিন এর বাহামার বাড়িটাও কেজ কিনে নিয়েছেন।
দ্বীপ পরিভ্রমনে অনেক কিছুই নজরে পড়ছিল। কিন্তু সবচেয়ে অবাক লাগলো একটা আশ্রম দেখে। রিজ এর একবোরে কোল ঘেষে কাঠের এই আশ্রমটি শত বছরের পুরোনো। শিবানন্দ আশ্রমের এই শাখাটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আশ্রম হিসেবে। তবে এখন এর মূল কাজ পর্যটকদের যোগ ব্যায়াম শেখানো।
রোজ আইল্যান্ড
নাসাউ'র মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটা বাইরে একটা চিলতে দ্বীপের নাম রোজ আইল্যান্ড। ছোট্ট এই প্রবালদ্বীপে একদিনের পিকনিকটা ছিল বাহামা ভ্রমনের শ্রেষ্ঠ অংশ।
রোজ আইল্যান্ড যাবার পথে চোখে পড়ে আটলান্টিকের স্বল্প গভীরতায় প্রবাল প্রাচীর। এখানে পানি এত পরিস্কার যে খালি চোখেই প্রায় ২০০ ফুট গভীরে দেখা যায়। চ্যানেল ধরে এগিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ে অনেক কুমারী দ্বীপ। কোন বসতি নেই এগুলোতে। চাইলে আপনিও কিনে নিতে পারেন এমন একটি দ্বীপ।
এই ক্যাটারম্যানটায় করেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
সাগরের মাঝে এমন ছোট ছোট দ্বীপের কিনার ধরে এগিয়ে চলা... আর সৌন্দর্যের অবলোকন....
এই দ্বীপটাতেই (নাম ভুলে গেছি ) বিখ্যাত মুভি 'ব্লু লেগুন' এর শ্যুটিং হয়েছিল।
অবশেষে গোলাপ দ্বীপের কিনারে.....
এই বুনো পথ ধরে যেতে যেতে কল্পনাও করা যায়না পথের শেষে কি লুকিয়ে আছে!!!
তাই এমন সৌন্দর্যের সামনে পড়ে হতবাক হয়ে গেলাম....
ডানে......
বায়ে...
যেদিকে তাকাই... আমি বিমোহিত !!!
তারপর ঝাপিয়ে পড়লাম জলের বুকে.... যেন অনাদিকালের তৃষ্ণা মিটিয়ে অতলান্তিকে অবগাহন.....
সবাই তখন একই আয়োজনে ব্যস্ত.......
যখন জড়িয়ে ধরে ক্লান্তময়তা... তখন এমন দোলায়মান আরাম যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
খানিকটা ঘুরতে বের হয়ে খুজে পেলাম জলের সমান্তরাল পাথুরে গুহা...
...আর জল ছুঁয়ে পাথরের স্তুপ।
ফিরে আসার সময় বাতাসে লোনা গন্ধ... পড়ন্ত সুর্য্যের আবীরে সাগরে তখন অন্য রং। সেই সাথে রিমঝিম বৃষ্টি.....
ক্যাটারম্যানের ডেকে তখন দুই ক্যারিবিয়ান মগ্ন সূর আর ছন্দের মাঝে। ঢেউ এর সাথে তাদের ঢিমেতালের সুরেলা গান... সারা মুখে বৃষ্টি'র কণা মাখতে মাখতে শুনছিলাম...
And them caribbean winds still blow from
nassau to mexico
Fanning the flames in the furnace of desire
And them distant ships of liberty on them iron waves so bold and free,
Bringing everything that's near to me nearer to the fire...
(চলবে)
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:০৫