somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত্রিকালীন....

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি থাকি আট তলার ওপরে। শিয়রের কাছে বিশাল জানালা। বাইরে তাকালে বেশ কিছুদূর পর্যন্ত দেখা যায়, একটুখানি আকাশ, মেইন রোডের ট্র্যাফিক জ্যাম, জ্যৈষ্ঠ মাসে কাঁঠাল ভরা গাছ... মন্দ কি! নাগরিক জীবনে এতটুকু পেয়েই আমি খুশি। আর আমি মানুষ হিসেবে যতটা না প্রকৃতিপ্রেমী তার চেয়ে অনেক বেশি শহরপ্রেমী।

আমার জানালা থেকে আর যে জিনিসটা দেখা যায়, তা হল, সংলগ্ন একটা পাঁচ তলা বিল্ডিঙের ছাদ। সেই ছাদের এক কোণায় একটা ঘরে কিছু কিশোর/তরুণ/লোক বাস করে। তাদের একমাত্র কাজ হল সারাদিন সিগারেট ফোঁকা আর চিৎকার চ্যাঁচামেচি করা। দুটো বিষয়ই আমার ভীষণ রকমের অপছন্দ। বিশেষ করে সিগারেটের গন্ধের ব্যাপারে আমার নাক অত্যন্ত সেনসিটিভ। তিন তলার নিচ থেকে যখন ওদের বেনসনের গন্ধ বাতাসে ভেসে আসে, আমি তখন ওদের মনে মনে প্রচণ্ড ঘৃণা করি।

আষাঢ় শ্রাবণ মাসে যখন ঝুম বৃষ্টি নামে, আমি তখন ভিজতে পারি না। আমার ছাদে যেয়ে ভেজার সুযোগ নেই। ঠাণ্ডা প্রভৃতি তুচ্ছ জাগতিক বিষয় মাথায় রাখার কারণেও ভেজা হয় না। শেষ ভরসা জানালা দিয়ে আসা পানির ছিটে। ছেলেগুলো ঠিক তখনই বিকট হৈ-হল্লা করে ভিজতে নামে। আমার তখন গা টা জ্বলে যায়!! বৃষ্টির ছাঁট সেই জ্বলুনি কমাতে পারে না।

এখন ফাল্গুন মাস। হিম ভাবটা না কমলেও বাতাসে এখনই কি জানি এক মাদকতা টের পাওয়া যায়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলে কিসের যেন অজানা একটা ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে। এরকম রাতে আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে শহর দেখি। চাঁদ থাকলে বেশ জ্যোৎস্না হয়, নাহলে তারা গুনি, অথবা নিকষ কালো রাতের দিকে তাকিয়ে দূরের সোডিয়াম বাতির উজ্জ্বলতা নির্ণয়ের চেষ্টা করি।

ঢাকার রাত আমার বড় প্রিয়। কিন্তু বাসা থেকে সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকার অনুমতি নেই। তাই আমি জানালা ধরে দাঁড়িয়ে দিনের শেষটা দেখি। সন্ধ্যা হলেই ছেলেগুলো ছাদে নেমে বসে, আড্ডা দেয়, সিগারেট খায়, সেলফোনের বাতিগুলো জ্বলতে নিভতে দেখি, কেউ কেউ প্রেমিকার সাথে আলাপটাও সেরে নেয়... প্রেমিকাই তো, নাকি?
রাত গভীর হলে ছেলেগুলো গান ধরে। অ্যামেচার শিল্পী ওরা, কণ্ঠ শুনলেই বোঝা যায়। বেশিরভাগ সময় যে গান দুটো গায়, তা হল, সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, আর... মন তরে পারলাম না বুঝাইতে। আমার অসম্ভব প্রিয়, অদ্ভুত সুন্দর দুটো গান। সাথে গিটার বাজিয়ে প্র্যাকটিস করে। দু/এক জায়গায় তাল লয় মেলে না, কখনো একই প্যারা বারবার গায়। নিখুঁত করবার চেষ্টা করে। কিন্তু আমার তখন বিরক্ত লাগে না, বড় ভাল লাগে।
খুব মনযোগ দিয়ে শুনি আমি ওদের গান।
নিঃসঙ্গ রাতগুলোতে যখন কথা বলার কেউ থেকেও থাকে না, প্রেমিক ব্যাস্ত তার ফেসবুকিং নিয়ে, কিংবা ঘুমে কাতর... আমি মানসিকভাবে অসুস্থ এক নারী স্লিপিং পিলের ওপর ভরসা করে ইনসমনিয়া নিয়ে জেগে থাকি। ছেলেগুলোর গান তখন খুব আপন মনে হয়। ওদের ডেকে বলতে ইচ্ছা করে, তোমরা থেমো না, আরেকটু থাকো, আরেকটা গান গাও।

ওরা কি জানে, এক অন্ধকার জানালার ওপাশে বিদ্যমান তরুণী ওদের তাল-লয়হীন গানগুলোর জন্য অপেক্ষা করে? জানবার কথাও না। ছেলেগুলোর চেহারা কখনো দেখিনি, এত ওপর থেকে বোঝা যায় না। যদি কখনো কথা হত, বলতাম, তোমারা রাত দুপুরে গান কোরো। আমার ভাল লাগে... আর সিগারেটগুলো পারলে ছেড়ে দিও... আমার কষ্ট হয়। ওরা রাখবে না আমার কথাগুলো?
না রাখলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই। রাত্রিকালীন গান নিয়ে আমি সুখেই আছি। ভাল আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×