আজ ফেসবুক এ একটা পোস্ট দেখে এবং কিছু মানুষের কিছু কমেন্ট পড়ে মনটা খুব খারাপ হল তাই লিখতে বসলাম। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় পত্রিকা গুলোতে নানা জায়গায় হাসপাতালে ডাক্তার কে মেরেছে রোগির লোকজন। খুব কষ্ট হয় এসব খবর দেখে। আর পত্রিকা ওয়ালারা ও খুব মজা পায় এমন খবর ছেপে... পত্রিকা ভালো চলে। ডাক্তার দের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই হল মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে।
প্রতিনিয়ত ডাক্তার সমাজের বিরুদ্ধে যে সব কথা বা অভিযোগ শোনা যায় সেগুলো মোটামুটি এইরকম-
১। এরা কষাই। দুকলম লিখেই ৫০০ টাকা ভিসিট নেয়।
২। এদের কাছে গেলেই একগাদা টেস্ট করতে পাঠায়।
৩। সরকারি হাসপাতালে এদের পাওয়াই যায়না।
৪। গর্ভবতি মহিলা এদের কাছে গেলেই বলে সিজার করতে হবে
৫। সরকারের টাকায় পড়াশোনা করেছেন,পাবলিক কে সার্ভিস দিবেন না?
৬। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু
আপাতত এগুলোর মাঝেই থাকছি.. ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন আশা করি।
যেহেতু এই অভিযোগ গুলো খুব বেশি দিনের পুরনো সেহেতু একটু ভাল করে ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
প্রথমেই বলে রাখি একটা দেশের সবচেয়ে মেধাবি ছাত্রদের মাঝ থেকেই কেউ কেউ মেডিকেল এ পড়ার সুযোগ পায়... সব পড়াশোনাতেই অনেক চাপ, সেগুলোর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি মেডিকেল এর মত এত বেশি পড়ার চাপ আর কোথাও নেই। পাঁচ পাঁচ টা বছরের প্রতিটা মুহুর্ত এই ছাত্ররা অসম্ভব কষ্টের ভেতর দিয়ে পার করে যা শুধু তারাই জানে যারা এর ভেতর দিয়ে গেছে.. অথবা যার পরিবারের কেউ ডাক্তারি পড়েছে বা পড়ছে। এভাবে এত এত পড়ার চাপ মাথায় নিয়ে রাতের পর রাত জেগে তারা মুখোমুখি হয় শত শত ভাইভা এবং লিখিত পরিক্ষার। সেগুলোর মধ্যে আছে হাজার খানেক আইটেম, শখানেক কার্ড ফাইনাল,গোটাবিশেক টার্ম এবং তিনটি ভয়াবহ প্রফ। মজার ব্যাপার হল এসব পরীক্ষায় (বিশেষত ভাইভা) পাশ-ফেল নির্ভর করে অনেকটাই শিক্ষকের মন-মর্জির ওপরে। তাই প্রায়শই দেখা যায় খুব ভাল স্টুডেন্টও খুব ভাল প্রস্তুতি থাকার পর ও একই পরীক্ষা বারবার দেয় পাশ করার জন্য। আমি বলছিনা যে ভাইভা অন্য কোথাও হয়না কিন্তু মেডিকেলের এই অত্যাচারের তুলনায় তা কিছুই নয়। বিশ্বাস না হলে আপনার পরিচিত কোন ডাক্তার বা মেডিকেল ছাত্রের কাছে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। এভাবে যেতে যেতে একসময় একটি ছাত্র/ছাত্রী পাঁচ বছর কিংবা তারো বেশি সময় পার করে পাশ করে এম.বি.বি.এস। এরপর শুরু হয় ইন্টার্নী কাল। এক বছর ধরে দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় নবীন এই ডাক্তার কাটিয়ে দেয় হাসপাতালে রোগিদের সেবায়। কখনো খাবার সময় মেলেনা, বেশির ভাগ রাতে মেলেনা ঘুমাবার সুযোগ। আর হাসপাতালের নানা কিসিমের লোকজনের মাঝে একজন মহিলা ডাক্তার কে সারা রাত ডিউটি করতে হয় নিরাপত্তার পরিপূর্ণ অভাবের মাঝে । হৃদরোগ বিভাগে থাকাকালিন এক রমযানে বেশির ভাগ দিনই রোযা রেখে আমি সময় মত ইফতার করতে পারিনাই। সার্জারী তে থাকাকালিন এক মাস প্রতিদিন সকালে আমি হাসিমুখে এক রোগীর ড্রেসিং করতাম যার পুরো পেট জুড়ে ছিলো অতি দুর্গন্ধযুক্ত ঘাঁ। যেগুলো পরিষ্কার করার পর প্রায় আধ কেজি পুঁজ বের হত। সপ্তাহে অন্তত তিন রাত না ঘুমিয়ে ডিউটি করার পর সকালে খালি পেটে আমাকে সেগুলো পরিষ্কার করতে হয়েছে। বিনিময়ে জুটেছে দিনের পর দিন রোগীদের অ্যাটেন্ডেন্টের দুর্ব্যাবহার, দফায় দফায় বড় স্যারের ঝাড়ি। অল্প কিছু টাকা যা আমাদের দেয়া হত মাস শেষে তাতে নিজেরই চলতনা, বাড়িতে কি দিব। একদম কিছুই যে পাইনি তা অবশ্যই নয়। আমার তখন সার্জারীতে ডিউটি শেষ। ওখানে কর্তব্যরত বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম সেই রোগীটা নাকি তার ছুটি হয়ে যাবার দিন ইন্টার্নি ডাক্তার দের রুমের সামনে দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিল আমার সাথে দেখা না করে যাবেনা বলে। সে কথা শুনে আমার চোখে যে জল এসেছিল সেদিন, যে ভাল লাগা অনুভুতি আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল সেই অনুভূতি টার দেখা সব ডাক্তার ই পেয়েছে কোননাকোন দিন, আর সেজন্যেই এই পেশায় তারা টিকে থাকতে পারছে আজ ও। যাহোক আগের প্রসঙ্গে আসি। এভাবে একটি বছর পর শেষ হয় সেই ছাত্রের অনার্স লেভেল। সে এখন পরিপূর্ণ এম.বি.বি.এস(মা বাবার বেকার সন্তান)। একজন নবীন ডাক্তার। যার কাছে এ দেশের মানুষ সামান্য সর্দি-কাশি সারাতেও যাবে না, খোঁজ করবে বড় প্রফেসরের। এর ঠিক দুবছর আগেই সাথের বন্ধুরা তাদের অনার্স এবং কেউ কেউ এক বছর আগে মাস্টার্স শেষ করে চাকরি বাকরি করছে, বিয়ে করে সংসার শুরু করেছে, মাস শেষে মায়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দিতে পারছে। নবীন এই ডাক্তার তখন তার নতুন যুদ্ধ শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরের মোটা মোটা বই গুলো নতুন করে নিয়ে বসেছে পোস্ট গ্রেজুয়েশন এ চান্স পাবার জন্যে। আপনাদের ভাষায় নামের শেষে A B C D লাগানোর জন্যে। সেই A B C D যাকে আপনারা ব্যঙ্গ করতে ও ছাড়বেন না আবার সেগুলো না থাকলে তাদের কাছে যাবেন ও না।
মাসের পর মাস দিন রাত খেটে চান্স হলো, এরপর? এরপর তিন বছর বিনা বেতনে কোন একটা মেডিকেল এ দিন রাত খাটুনি, ঘরে ফিরে সোমালিয়ার রাজধানীর নাম, তুর্কেমেনিস্তানের মুদ্রার নাম মুখস্ত করা। কেন? বি.সি.এস পাশ করতে হবেনা? এই সময় গুলোতে প্রতিটি ডাক্তারকেই কোন না কোন ক্লিনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় নিজের পেট চালানোর জন্যে। এভাবে পাঁচ সাত বছর আরো কাটল... এফ.সি.পি.এস ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসল। এটা এমন ই এক পরীক্ষা যা পাস করতে আট দশ বার ও লেগে যায় কখনো কখনো। প্রতিটি পরীক্ষা হয় ছমাস পর পর। আপনারা কেউ হয়ত বলবেন এতই যদি মেধাবী ছাত্র হয় তবে এতবার কেন লাগবে? তাদেরকে বলছি.. খোঁজ নিয়ে দেখুন - প্রতিবার গড়ে একশ পরীক্ষার্থীর মাঝে পাশ করানো হয় দুই থেকে তিন জন কে। এই দেশের সিস্টেম এমনি অদ্ভুত। অবশেষে একদিন শেষ হয় এই অপেক্ষার প্রহর। লাভ করা হয় পো্স্ট গ্রেজুয়েশন(প্রচলিত অর্থে মাস্টার্স)। ততোদিনে বয়স হয়েছে বত্রিশ। বিয়েশাদির কথা মাথায় আনার সুযোগ হয়নি কখনো। হিসেব করে দেখুন একজন মেডিকেল ছাত্রের পুরো পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগল অন্তত পক্ষে চৌদ্দ বছর। যেখানে অন্যান্য সেক্টরে সেটা মাত্র পাঁচ বছর। এমন একজন চিকিৎসকের কলমের কিছু খোঁচার বিনিময়ে আপনারা তাদের চার কিংবা পাঁচশ টাকা ভিজিট দিয়ে আসেন। আপনারা শুধু কলমের কালিটা ই দেখেন, এর পিছনের এত গুলো বছরের সাধনা টা দেখেন না ! ষ্টার সিনেপ্লেক্সে তিনশ টাকা দিয়ে দেড় ঘন্টার একটা সিনেমা দেখে আসতে পারেন অথবা পাঁচ টাকার আলু ভাঁজা KFC তে যেয়ে আশি টাকায় খেয়ে আসতে পারবেন কিন্তু এই ডাক্তার টা যে কিনা আল্লাহ্র ইচ্ছায় আপনার মরণাপন্ন সন্তান কিংবা আপনার জন্মদাত্রি মায়ের জীবন বাঁচিয়ে দিল তাকে পাঁচশ টাকা দিতে গিয়ে এত সহজে তাকে কষাই উপাধি দিয়ে দিতে হবে? তবু ও কেন যান আপনারা এই হারামি কষাই গুলোর কাছে? প্লীজ আর যাবেন না। সারাদিন হাসপাতালে কাজ করে এসে একজন ডাক্তার যখন সামনে খাবার নিয়ে বসে তখনো যদি তার কাছে কোন রোগির খবর আসে সে ছুটে যায় মুখের খাবার ফেলে। আর কোন পেশায় এমন টা করতে হয় একজন মানুষকে? তাছাড়া এমন ডাক্তার কিন্তু অনেক আছে যারা অনেক কম ভিজিট নেন কিন্তু মানুষ তাদের কাছে যা্য়না... কারন আমাদের রুচি আবার অনেক উন্নত, সামান্য পাতলা পায়খানা সারাতেও আমাদের প্রফেসর লাগে।
এবারে পরবর্তী প্রসংগ (একগাদা টেস্ট)-
এই কথাটা সবসময়ই শোনা যায় যে ডাক্তারের কাছে গেলেই একগাদা টেস্ট ধরিয়ে দেয়। মানলাম কিছু পথভ্রস্ট লোক এমন হয়ত করেন। কিন্তু আমার কথা হলো টেস্ট গুলো প্রয়োজনীয় নাকি অপ্রয়োজনীয় তা আপনি কিভাবে জানলেন? কেউ হয়ত বলবে পেটে ব্যাথা নিয়া গেলাম দিল রক্ত পরীক্ষা! এখন কথা হল আপনার পেটে ব্যাথাটা "টাইফয়েড আলসার পারফোরেশন" এর কারনে যে না তা আপনি কিভাবে জানবেন বলুন? যারা বিদেশি চিকিৎসার খুব সুনাম করেন তাদের জন্যে বলছি ঐসব দেশে রোগির পাশের ফাইলটাতে প্রতি ঘন্টায় রক্ত,মূত্র এসবের গোটা বিশেক পরীক্ষার রেজাল্ট আপডেট করা হয়।এদেশে একটা আ্যপেন্ডিক্সের অপারেশনের জন্যে যেখানে হাজার দশ খরচ হয় বিদেশে সেটা প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা।
প্রসংগ তিন (ডাক্তার পাওয়া যায় না)-
একটা সরকারি হাসপাতাল যদি একশ আসনের হয় তবে সেখানে সরকার থেকে ঐ একশ জনের ই সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। ডাক্তার, নার্স সহ অন্যান্য লোকজন, বিভিন্ন সরনজামাদি এসবের আওতায় পরে... কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এমন একটি হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে কম করে হলেও দুই থেকে তিনশ জন.. আপনিই বলুন এমন ভয়াবহ যেখানে অবস্থা সেখানে আপনি কিভাবে আশা করেন যে রোগী ভর্তি হওয়া মাত্র ডাক্তার ছুটে আসবে? এই দোষ তো ডাক্তারের না, দোষ দেশের সিস্টেমের। এমন হলে আপনারা ডাক্তার কে ধরে মারতে আসবেন? যদি এই অবস্থা থেকে বাঁচতে চান তবে যান যারা ঐ মণ্ত্রনালয়, সচিবালয়ে বসে আছেন তাদের কে গিয়ে প্রশ্ন করুন।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি.... মারামারি করে আহত হয়েছে এমন লোক থানায় যেয়ে তিন চার ঘন্টা বসে থেকে হাজার কয়েক টাকা ঘুষ দিয়ে মামলা করিয়ে তারপর হাসপাতালে এসে পাঁচ মিনিটের মাথায় পুরো হাসপাতাল মাথায় তুলে ফেলেছে, ডাক্তারের দিকে তেড়ে এসেছে মারবে বলে! অথচ যে ওসি কে একটু আগে স্যার বলে বলে মুখের ফেনা বের করে ফেলেছে সেই ওসি যে একজন ডাক্তারের নিচের পোস্টের অফিসার সেটা বেমালুম ভুলে বসে আছে! কেন ভাই? ঐ লোকের হাতে একটা লাঠি আছে আর ডাক্তারের তা নেই বলে?
লেখা বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে তাই এখন থেকে ছোট করার চেষ্টা করছি।
প্রসংগ ৪ (সিজার অপারেশন)-
উপরে যে কারন গুলোর কথা বলা হল সেই সব কারনেই এখন কোন ডাক্তার আর সামান্য ঝুঁকি নিতে চায়না। যে রোগিটাকে হয়ত চেষ্টা করলে নরমাল ডেলিভারি করানো যেতো তার ক্ষেত্রেও এখন ডাক্তার রা সিজার বেছে নেয় কারন মানুষের সহনশীলতার মাত্রা আর সকল ক্ষেত্রে (রাজনীতি, দ্রব্যমূল্য. ইত্যাদি) অসাধারণ হলেও ডাক্তার বা হাসপাতালের বেলায় তা প্রায় শূন্য। পান থেকে চুন খসলেই লোকে তাদের গা্য়ে হাত তোলার মত অসাধারণ কর্ম করতে একটুও দ্বিধা করে না।
প্রসংগ ৫ (সরকারের টাকায়)-
আচ্ছা শুধু মেডিকেল কলেজ গুলোই কি সরকারি টাকায় চলে? দেশে সরকারি টাকায় কয়টা মেডিকেল কলেজ চলে আর অন্যান্য ভার্সিটি এবং সরকারি কলেজগুলোর সংখ্যা কত হিসেব করে দেখুন একটু? সেখানে যারা পড়াশোনা শেষ করে নানান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কিংবা বিদেশে যেয়ে চাকরি করে তাদের কেন এমন কথা শুনতে হয়না? অহরহ কেবল ডাক্তার দেরই এ কথা কেন শুনতে হয়? কেবল ডাক্তার রাই কি এদেশের সন্তান বলুন? শুধু তাদের ই দায় সকলের সেবা করার? আর কারো না? দেশের কোন কাজটা আজাকাল ঘুষ ছাড়া হয় ? কিন্তু কখনো কি কেউ শুনেছে যে একজন ডাক্তার ঘুষ সহ ধরা পরেছেন?
একটা অভিযোগ প্রায়ই শুনতে হয়, ডাক্তারগুলা গ্রামে থাকতেই চায় না। খুব ভাল কথা। এ বিষয়ে আমার একটা প্রস্তাব আছে , তা হল- বাংলাদেশের প্রতিটা মন্ত্রীর পোস্টিং গ্রামে হওয়া উচিত, যেহেতু বাংলাদেশের ৮৫% গ্রাম তাই তাদের গ্রামে থেকে দেশের সেবা করতে হবে। প্রতিটা সাংবাদিকের গ্রামে থেকে গ্রামের মানুষের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে রিপোর্ট করা উচিত । সব ইঞ্জিনিয়ারদের গ্রামে পোস্টিং দিতে হবে যাতে দেশ তাড়াতাড়ি ডিজিটাল হয়ে যায় , প্রতিটা অ্যাকাউনটেন্ট এর গ্রামে গিয়ে গ্রামের মানুষের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে, সরকারী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এসব থেকে পাশ করা প্রতিটি ছাত্রকে পাশ করার সাথে সাথেই গ্রামের কোন স্কুলে যেয়ে অন্তত দুই বছর মাস্টারি করতে হবে ।.........মানবসেবার ঠেকা কি শুধু ডাক্তাররাই নিয়ে রেখেছে??? যেদিন এগুলা হবে সেদিন ডাক্তাররাও নির্দ্বিধায় গ্রামে পড়ে থাকবে । কোন ডাক্তার তখন গ্রামে থাকতে এক বিন্দু আপত্তি করবে না এটা আমি লিখে দিতে পারি। নিয়ম সকলের বেলায় সমান হওয়াই কাম্য বলে আমি মনে করি।
প্রসংগ ৬ (ভুল চিকিৎসা ও রোগীর মৃত্যু)-
এই বিষয় টা আজকাল পত্রিকা ওয়ালাদের কাছে হটকেকের মত। এ বিষয়ে মাননীয় সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আমার প্রশ্ন হল- ভাই চিকিৎসা টা ভুল ছিল নাকি সঠিক সেটা আপনি কি করে বিচার করলেন? সাংবাদিকতা- বিষয় টাতে কি আজকাল অপশনাল সাবজেক্ট হিসেবে মেডিকেল সায়ান্স ও পড়ানো হয়? শুধু আপনাদের এই অতি হঠকারিতার কারনে ডাক্তার রা তাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে ভয় পায়.. রোগীরা হয় বঞ্চিত। একটা উদাহরণ না দিলে বিষয় টা পরিষ্কার হবে না । মনে করুন মফস্বলের একটা হাসপাতালে একজন হার্ট অ্যাটাকের রোগী ভর্তি হল..সেখানে হয়ত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই। এমতাবস্থায় ডাক্তার তাকে বড় কোন হাসপাতালে রেফার করে দিবে.. কিন্তু তার আগে সে যে কাজটা করলে রোগীটার বেঁচে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যেত তা হল- ১। তাকে অক্সিজেন দেয়া শুরু করা ২। তার রক্তনালীতে একটা স্থায়ী সুঁই(ক্যানুলা) লাগিয়ে দেয়া ৩। রোগীকে মরফিন বা অন্য কোন ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা।
কিন্তু আজকাল প্রিয় সাংবাদিক ভাইরা ডাক্তার দের জন্য পরিস্থিতি এমনি ঘোলাটে করে ফেলেছেন যে ঐ অবস্থায় কোন ডাক্তার ই ঐ কাজ গুলো করতে যাবে না। যেহেতু রোগীটা হার্ট অ্যাটাকের,বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীন সেহেতু বড় হাসপাতালে নেয়ার পথে যদি সে মারা যায় রোগীর লোকজন বলবে ডাক্তার বেটা ইন্জেকশন দিয়ে রোগী মেরে ফেলেছে আর পত্রিকার পাতায় রগরগে খবর বেরোবে "ভুল চিকিৎসায় রোগীর ম্ত্যু" এতে ক্ষতি টা কার হলো বলুন? ঐ অসহায় রোগীটার।
অনেক মনোবেদনা আর অভিমান নিয়ে কথাগুলো লিখলাম।
কাউকে আঘাত দেয়াটা আমার লক্ষ্য ছিলনা। তবু যদি কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন আমি দূ্ঃখিত। আমি শুধু চেয়েছি প্রচলিত ধারণা গুলোর একটু ভেতরে সবার দৃষ্টি ফেরাতে। ধৈর্য্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সবাই সুস্থ থাকুন আল্লাহ'র কাছে এই প্রার্থণা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ১:৪৪