আমি একজন রিকশা চালক। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফুটফুটে বউটার মুখের দিকে চোখ পড়লো। প্রতিদিন এই ফুটফুটে চেহারা টা দেখা হয়না। সকালে উঠে ওর হাতের পরোটা খেয়েই বের হই। সারাদিন রিকশা চাইলিয়ে যা পাই তা দিয়ে দিব্যি সংসার চলছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ওর শরীরটা ভালো নেই। ডাক্তার বলেছে ক্যান্সার হয়েছে। ওকে এখনো জানাইনি। ভাবছি আজ ব্যাংকে গিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট খুলবো। প্রতিদিন যা কামাবো তার কিছুটা টাকা ব্যাংকে জমাবো ওর চিকিৎসার জন্য। রিকশা নিয়ে বের হলাম। পাড়ার মোড়টা পার হতেই শ্যামলা একটা মেয়ে বলল এই খালি যাবেন?
হ্যা আপা কই যাবেন? উনি রিকশায় উঠে বললেন কার্জন হল চলেন। আমিও তার কথা মত চললাম। কার্জন হলে পৌছে আপায় আমারে ২৫ টাকা দিলো। আপা ৪০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা দিলেন কেন? এই ব্যাটা কি বলিস এসব? ভাড়া ২৫ টাকাই। তুই আমারে চিনস? না আপা চিনিনা। এবার আপা কইলো , চিনবি কোতথেকে? তুই জানিস আমি ডাকদিলে সবাই এসে তোকে আচ্ছা মত ধোলাই দিবে। এখন যা,ভাংতি নাই। আপা তাইলে এই টাকাডা নিয়া যান আপনার কাজে লাগবে। ঠাস করে গালে কি যেন একটা লাগলো। তারপর বলল ফকিন্নির বাচ্চা যা এখান থেকে। আমিও রিক্সা নিয়ে চলে এলাম। একটু পর এক কোট,টাই পরা ভদ্র লোক বলল এই খালি যাবে? হুম। চল । আমিও রিক্সা নিয়ে চললাম, এই তাড়াতাড়ি চল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে । অই ব্যাটা কথা কে যায়না? তাড়াতাড়ি যা। ভদ্র লোককে যায়গা মত পৌছে দিলাম। ইনিও ৫ টাকা কম দিয়ে সোজা পথে হাটা ধরলেন। আমি কিছু বললামনা। এভাবে কয়েক ক্ষ্যাপ মেরে অগ্রনি ব্যাংকে গেলাম অ্যাকাউন্ট খুলতে। হায় হায়,ব্যাংক বন্ধ। আমি এক লোককে জিগেস করাতে ভদ্র লোক বলল, আজকে মে দিবস তাই ব্যাঙ্ক বন্ধ। যাক মনে দু:খ নিয়ে চললাম নিলক্ষেতের দিকে। ঠিক এমন সময় অই আপাকে দেখলাম । যিনি আমাকে সকালে চড় মেরেছিলেন আরকি। আমি দেখে না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম। এক ভাইয়া ডাক দিলো। এই চল শাহবাগ চল। রিকশায় উঠে উনি ফোনে কথা বলতে লাগলেন। জান,আজকে দিনটা অনেক ভালো কাটিয়েছি। সারাদিন অনেক মজা হইছে। কার্জন হলে আড্ডা দিছিলাম সকালে। তারপর শাপলা চত্তর থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে নিলক্ষেতে বাদাম ক্ষেয়ে এখন বাসায় ফিরছি। সব মিলিয়ে মে দিবস ভালোই কাটলো। রাতে কথা বলবো। রাখি জান বাই। আমি এবার সাহস করে বললাম,ভাইজান মে দিবস কি? অই মিয়া মেজাজ খারাপ আছে,সোজা রিকশা চালাও। আমি আর কিছু বললামনা। শাহবাগ এসে উনি আমাকে টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমি বললাম ভাইজান আরো ৫ টা টাকা দেন। উনি বললেন অই ব্যাটা ফুট। রাতে বাশায় গেলাম বউয়ের মুখটা শুকনা শুকনা লাগছে। রেজিয়া কি হইছে তোমার? সন্ধা ধইরা মাথা ব্যাথা। আমি আমার ৩৩১০ মোবাইলটা দিয়া ডাক্তারকে ফোন দিলাম। ডাক্তার কিছু না শুনেই,অই মিয়া জানোনা আজকে হলিডে? কাল ফোন দিও।
আমি ফোন রেখে অসহায় মুখনিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, আজকে মে দিবস। কালকে ঔষধ এনে দেব।
এখন অনেক রাত মনে মনে সবগুলারে গালি দিচ্ছা আর প্রশ্ন করছি, মে দিবস কি?? মে দিবস কি আমার ঘরে ভাত এনে দিবে? নাকি আমার অসুস্থ বউয়ের ঔষধ এনে দেবে? মে দিবস কি?